উল্লাপাড়ায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

দেশজুড়ে

অক্টোবর ২২, ২০২৩ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ

মোঃ ইলিয়াস হোসেন স্বপন

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া কয়ড়া ইউনিয়নের রতনদিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা সাদিয়া সুলতানাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারণ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা আইনানুগ ব্যবস্থা চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা সাদিয়া সুলতানা জানান, কর্মসূত্রে আমার স্বামী মানিকগঞ্জে থাকার সুবাদে প্রতি সপ্তাহে আমার স্বামীর নিকট যাই। আমার স্বামী আমার কাছে না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে লম্পট শামীম আহমেদ আমাকে নানা রকম কুপ্রস্তাব, অশালীন আচারন ও নানাবিধ হয়রানি করে আসছে। যৌন হয়রানির বিষয়টি আমার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। উল্টো আমাকে শিক্ষা অফিসে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আপোষ করার চেষ্টা করে। এতে আমি অস্বীকার হলে উপস্থিত বিচারকরা আমার চাকরি হারানোর ভয়ভীতি দেখায়। আমি শিক্ষক শামীম আহমেদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয়রা বলছেন, বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর হয়রানির অভিযোগ উঠেছিলো। আবার এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যদি এভাবেই প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসতে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার জন্য আসবে। এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটবে। আমরা শিক্ষক শামীম আহমেদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহি সদস্য আব্দুস সায়েম বলেন, অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সাদিয়া সুলতানা ইতোমধ্যেই ম্যানেজিং কমিটি বরাবর শিক্ষক শামীমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিছু দিন আগেও সহকারী শিক্ষক শামীমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রীকে যৌন হয়ারনীর অভিযোগ এসেছিলো। শিক্ষক শামীম নাকি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এবং উপজেলা প্রশাসন তার হাতে এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ভয়ভীতি প্রদান করে আসছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক সাদিয়া সুলতানার যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগের এক মাস আগেও বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর এক ছাত্রী শিক্ষক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলো। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও এলাকার কিছু গন্যমান্য লোক নিয়ে তার সুষ্ঠ বিচার করে দিয়েছি। এরপরও কিছু কিছু ঘটনার কথা শোনা যায়। সাদিয়া সুলতানার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটা তারিখ ধার্য করেছিলাম। কিন্তু সেই তারিখের একদিন পূর্বে শিক্ষক শামিম আহমেদ প্রধানশিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বলেন, আমার বাবা অসুস্থ । আপনার যে ডেট করেছেন সেই ডেটে আমার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব। তাঁর বাবার অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে আমরা পুনরায় আবার একটা তারিখ নির্ধারন করলেও সে উপস্থিত হয়নি। শিক্ষক শামীম আহমেদ ম্যানেজিং কমিটিকে বার বার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষক শামীম আহমেদ এই বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাক।
যৌন হয়রানির বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলরুবা পারভীন নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে স্কুলে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটে। আমি ক্লাস শেষে অফিস রুমে এসে দেখি সহকারী শিক্ষক শামীম ও শিক্ষিকা সাদিয়া সুলতানার মাঝে তর্কাতর্কী চলছে। আমি এসে তাদের বাকবিদন্ডা থামাই। সহকারি শিক্ষিকা সাদিয়া সুলতানা ম্যানেজিং কিমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি ডেট দিলে শিক্ষক শামীম উপস্থিত হয়নি।
বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ছানোয়ার হোসেন স্যারকে অবগত করলে শিক্ষক শামীম ও শিক্ষিকা সাদিয়া সুলতানা সহ অন্য শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষা অফিসে যাই। ছানোয়ার স্যার আলাদা আলাদা ভাবে শিক্ষক শামীম ও শিক্ষিকা সাদিয়ার বক্তব্য শুনে তাদের মধ্যে মিলমিশ করে দেয়।
বিদ্যালয়ে গনমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে শিক্ষক শামীম আহমেদ বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র সরে যায়। প্রধান শিক্ষিকা কয়েকবার শিক্ষক শামীমকে ফোন দিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে বললে আসি, আসছি বলে সময় ক্ষেপন করে। এ বিষয়ে শিক্ষক শামীম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ছানোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। কিছু টেলিফোনের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জেনে ওই দুই শিক্ষককে আমার অফিসে ডেকে তাদের কথাগুলো শুনি। শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের মধ্যে সুরোহা করে দেই এবং তাদেরকে সময় দেওয়া হয় যাতে এই বিষয়টি আর রিপিট না হয়।
যৌন হয়রারির কোনো অভিযোগ দিলে সেই বিষয়টি মিটানো যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগ আমার কাছে লিখিত আকারে আসেনি। আমি আসলে লেখা পড়া যাতে সুন্দর হয় সেজন্য সেটা করেছি। লিখিত অভিযোগ আসলে সাথে সাথেই তদন্ত কমিটি দিব, তদন্ত কমিটির প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *