ইসির হিসাবে অংশ নিচ্ছে ২৬টি নিবন্ধিত দল

ইসির হিসাবে অংশ নিচ্ছে ২৬টি নিবন্ধিত দল

জাতীয় স্লাইড

নভেম্বর ২৯, ২০২৩ ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছে নিবন্ধিত ২৬টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশ এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ রয়েছে। গণফোরামের একটি অংশও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করেছে। দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের তালিকায় বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ১৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম নেই। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৪৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে নিবন্ধিত আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলে আশা করছেন নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সবমিলিয়ে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলের সংখ্যা কমবেশি ৩০টিতে দাঁড়াতে পারে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় নির্ধারিত রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত কিছু ছোট দলের কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্রে ইসির কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বলেও অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে কমিশন।

জানা যায়, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রে কে সই করবেন, তা জানিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে। আবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আরেকটি দলের সঙ্গে জোটের বিষয়ে জানিয়েও ইসিকে চিঠি দিয়েছে। এসব চিঠি হিসাব করে ইসি এ তালিকা তৈরি করেছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৬টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বলেও মনে করছে ইসি।

মঙ্গলবার পর্যন্ত যে ২৬টি রাজনৈতিক দল অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, গণতন্ত্রী পার্টি ও বাংলাদেশ কংগ্রেস। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আমার জানামতে, ৩০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ইসিকে জানিয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার পর কতটি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং তাদের কতজন প্রার্থী হয়েছেন, এর প্রকৃত সংখ্যা জানা যাবে।

সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫টি সংসদীয় আসন রয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত এসব আসনে ১৭৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১২৪ জন। তারা ২০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক প্রার্থী হিসাবে এসব মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বাকি ৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

আরও জানা যায়, এবারই প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পেয়েছে তৃণমূল বিএনপি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম। এ দল দুটিও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। রাজনৈতিক মহলে দল দুটি ‘কিংস পার্টি’ হিসাবে পরিচিত। কল্যাণ পার্টি ও মুসলিম লীগ বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকলেও এবার নির্বাচনে পৃথক জোট করে ভোটে অংশ নিচ্ছে। আর ইসলামী ঐক্যাজোট দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এক অংশ এ নির্বাচনে যাচ্ছে। আরেক অংশ বিএনপির সঙ্গে রয়েছে।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তোলে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১২টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো বর্জন করেছিল। এবার যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে এর অনেকগুলোই আওয়ামী লীগের শরিক দল। বেশ কয়েকটি দল নৌকা প্রতীকে ভোট করার কথাও জানিয়েছে।

১৫ নভেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন নির্ধারণ রয়েছে। ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।

ইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, যে ২৬টি দল অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সেগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়া বেশির ভাগ দলেরই অতীতে বেশিসংখ্যক ভোট পাওয়ার রেকর্ড নেই। এবারের নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণে দলের সংখ্যা বাড়ল, কিন্তু ভোটার উপস্থিতি বাড়বে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামলাতে হিমশিম খেতে হবে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।

গণফোরামে দ্বন্দ্ব প্রকট : নির্বাচনে অংশ নেওয়া-না-নেওয়া এবং মনোনয়নপত্রে কে সই দেবেন, এ বিষয়ে ইসিতে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছেন গণফোরামের দুই অংশের নেতারা। নির্বাচনে যাওয়ার কথা জানিয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছেন দলটির নির্বাহী সভাপতি সিলেট-২ আসনের সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, দলটির অধিকাংশ সিনিয়র ও সক্রিয় নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী। নির্বাচনে গণফোরামের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাদের মনোনয়নপত্রে তিনি নিজেই সই করবেন বলেও ইসিকে জানান মোকাব্বির খান। চিঠিতে আরও বলা হয়, দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন দলের সঙ্গে আঁতাত করে গণফোরামকে নির্বাচনে বাইরে রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে ড. কামাল হোসেন এক চিঠিতে ড. মিজানুর রহমানকে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে সই দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। আরেক চিঠিতে গণফোরামের নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি হিসাবে মফিজুল ইসলাম খান কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমানের নাম উল্লেখ করে তাদের নেতৃত্বে কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে। পালটাপালটি চিঠির বিষয়ে মোকাব্বির খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ইসি সূত্র জানিয়েছে, গণফোরামের বিষয়ে কমিশন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *