আর্জেন্টিনায় প্রশিক্ষণে যাবেন যশোরের স্বাধীন

আর্জেন্টিনায় প্রশিক্ষণে যাবেন যশোরের স্বাধীন

দেশজুড়ে স্লাইড

জুন ৩, ২০২৩ ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ক্লাবটির বয়স ৯৮ বছর! ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সেই আর্জেন্টাইন ক্লাবটির নাম আতলেতিকো ভিলা সান কার্লোস ক্লাব। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় এই ক্লাবে খেলেছেন। সেই ক্লাবে এবার এক মাসের অনুশীলন করার সুযোগ পেলেন যশোরের শামস-উল-হুদা একাডেমির তরুণ ফুটবলার মিনহাজুল করিম স্বাধীন।

ছোটবেলা থেকে ফুটবলে আর্জেন্টিনার সমর্থক স্বাধীন এবার সেই স্বপ্নের দেশে যাচ্ছেন ফুটবলের উচ্চতর অনুশীলনে। বিষয়টি নিয়ে উল্লসিত তিনি। জানালেন, আর্জেন্টিনার কোনো ক্লাবে ডাক পাওয়ার ঘটনাটি স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে তাঁর!

স্বাধীন দেশে বয়সভিত্তিক ফুটবলের পরিচিত মুখ। তুখোড় মিডফিল্ডার এবং উইঙ্গার হিসেবে পারদর্শী তিনি। ২০২২ সালে খেলেছেন বাফুফে অনূর্ধ্ব-১৮ লিগে চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে। ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের হয়ে খেলেছেন ২০২১ সালে। খেলেছেন ২০১৮ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আসরে। ছিলেন ২০১৭ সালে নেপালের মাটিতে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ দলের অংশ। ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ সুপার মখ কাপে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। সামনের মৌসুমে শেখ জামালের মূল দলে শামস-উল-হুদা একাডেমির যে পাঁচ ফুটবলারের নিবন্ধন হওয়ার কথা, স্বাধীন তাঁদের একজন।

বাংলাদেশের পেশাদার ফুটবল দল শেখ জামাল ধানমন্ডির ট্রেনার অ্যারিয়েল কোলম্যানের মাধ্যমে স্যান কার্লোস পেয়েছে স্বাধীনের খোঁজ। কোলম্যান মার্চে যশোরের শামস-উল-হুদা একাডেমি পরিদর্শন করেন। সে সময় উপভোগ করেন একটি অনুশীলন ম্যাচ। সেই ম্যাচে কোলম্যানের নজর কাড়েন স্বাধীন। সে খেলার ভিডিও পাঠানো হয় আর্জেন্টিনায়। সেই ভিডিও দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারপর আতলেতিকো ভিলা সান কার্লোস ক্লাব থেকে ডাক পড়ে স্বাধীনের।

যশোর শহরের পালবাড়ী নওদাগ্রামে বসবাসকারী ফজলুল করিম ও তাসলিমা করিম দম্পতির বড় সন্তান স্বাধীন। বাবা-মা দুজনেই ছোটবেলা থেকে খেলার প্রতি উৎসাহ জুগিয়েছেন। ফলে ফুটবল খেলার ক্ষেত্রে তাঁকে খুব বেশি প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমিতে যোগ দেন স্বাধীন। ধীরে ধীরে কোচ কাজী মারুফ, সহকারী সিনিয়র কোচ ইমাদুল খানের তত্ত্বাবধানে হয়ে ওঠেন একজন প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার। যশোরের গণ্ডি পেরিয়ে এখন তিনি জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলছেন।

আর্জেন্টিনার ক্লাব থেকে ডাক পাওয়া স্বাধীন স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তাঁর একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা নাসের শাহেরিয়ার জাহেদি, কর্মকর্তা আর কোচ কাজী মারুফের প্রতি। স্বাধীনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ফজলুল করিম নিজেও ফুটবল খেলেছেন সেনাবাহিনী দলের হয়ে। তাঁর উৎসাহেই স্বাধীন বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

স্বাধীনের মতো শামস-উল-হুদা একাডেমির সবাই স্বাধীনের এ খবরে উচ্ছ্বসিত। শিষ্যের এই অর্জনে কোচ কাজী মারুফ স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেলিত। জানালেন, স্বাধীন কয়েক বছর ধরে বয়সভিত্তিক ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করে আসছেন। তিনি তুখোড় উইঙ্গার। একদিন বাংলাদেশের সেরা উইঙ্গার হওয়ার সম্ভাবনা তাঁর মধ্যে রয়েছে। নিজে গোল করতে ও করাতেও পারেন স্বাধীন। মারুফ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে প্রথম ফুটবলার হিসেবে আর্জেন্টিনায় প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছে স্বাধীন। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে এসে যদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখে, তাহলে সে বড় খেলোয়াড় হবে।’

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যশোরের শামস-উল-হুদা ফুটবল একাডেমি আর সাফল্য একে অন্যের হাত-ধরাধরি করে চলছে। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের মুকুটে নতুন করে আরেকটি পালক যুক্ত হলো স্বাধীনের হাত ধরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *