আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করছে সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ

ফিচার

আগস্ট ১৭, ২০২২ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ

দীপ্ত দাস

আত্মহত্যা বর্তমান সমাজব্যবস্থায় একটি নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ই শোনা যায় নানা শ্রেনী-পেশার মানুষ আত্মহত্যা করছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা নেহায়েত কম নয়। এমনকি দেশের শীর্ষ অবস্থানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। এর অধিকাংশই সামান্য কারণে। এছাড়া শিক্ষক, চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সহ নানা বয়সের নানা পেশায় কর্মরত মানুষের মাঝে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বর্তমান সময়ে আত্মহত্যা অনেকটা মহামারীতে রুপ নিয়েছে, তাই আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড, বাংলাদেশ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করছে সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ

এই ব্যাতিক্রম কাজ কে চ্যালেন্জ হিসেবে নিয়েছেন সংস্থাটির একদল স্বেচ্ছাসেবক। যাদের মধ্যে ফয়সাল আহমেদ, সিদ্দিকুন সিমলা, বদরুল মোর্শেদ, রাব্বানী আহমেদ, আবিদা খান, শিমুল, নাইম এবং নজরুল সহ আরো অনেক সেচ্ছাসেবী যারা সারা বাংলাদেশে বিভক্ত হয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করতে নানা রকম উদ্যোগের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ এর কাজের বেপারে জানতে চাইলে সংস্থাটির অন্যতম পরিচালক সিদ্দিকুন সিমলা আমাদের কে জানান, “আমরা বিফ্রেন্ডিং মেথড অবলম্বন করে তথা ক্লায়েন্ট এর সাথে ঠিক বন্ধুত্ব তৈরি করে বন্ধুর মতো আচরণ করে ক্লায়েন্ট কে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকেন এবং ইতিমধ্যে তারা অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আনুমানিক ২৫০ জনের অধিক আত্মহত্যা প্রবণ লোক কে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছেন। এছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে ৫০০০ জনেরও অধিক লোককে বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে আরো বলেন, আমাদের কাজের বিস্তৃতি আরো বাড়বে এবং আমরা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে ছড়িয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।

একটা বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা থেকে জানা গেছে প্রতিবছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ (WHO)-এর মতে প্রতিবছর সারা বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর একটা অন্যতম কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪০জন মানুষ আত্মহত্যা করে। ২০১৭ সালে এক বছরে বাংলাদেশে ১১০০ মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এরপর থেকে শুধু এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, গত ২০২১ সালে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ১০১ জন। এটা শুধু প্রতিবেদন। পুলিশের খাতায় এসেছে। এর বাইরেও কিন্তু অনেক থাকতে পারে। কঠিন আরেকটি কথা, ২৫ গুণ বেশি মানুষ কিন্তু আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। একজন আত্মহত্যা করে। কিন্তু ২৫ জন মানুষ কিন্তু চেষ্টা করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই, একটি মানুষ আত্মহত্যা করল, প্রায় ১৫০ জন মানুষ কিন্তু ভোগে। সেটা পরিবার হোক, বন্ধু হোক, আত্মীয়-স্বজন হোক, অন্য সংস্থা হোক, টিভি হোক, পত্রিকা হোক, তারাও এর মধ্যে জড়িত। আপনি যদি হিসাব করেন, প্রতি বছর ১০০ কোটি মানুষ ভুগছে কোনো না কোনো বিষয়ে।এই আত্মহত্যার কারণের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

সুইসাইড প্রোটেক্টিং বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান সমন্বয়ক ফয়সাল আহমেদ জানান যে, আমরা আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার পাশাপাশি বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছি,ভবিষ্যতেও আমরা এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখব।

সংস্থা টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির মুখপাত্র বদরুল মোর্শেদ আমাদেরকে জানান, বর্তমানে তারা অনলাইনে বেশিরভাগ কাজ করে থাকেন,অফলাইনে অল্প সংখ্যক কাজ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অফলাইন এবং অনলাইনে সমানতালে কাজ করতে চান, দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন এবং গ্রাম পর্যায়ে উঠান বৈঠক করা সহ নানামুখী সচেতনতা মূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করতে চান, এছাড়াও অর্থাভাবে কিংবা বেকারত্ব সমস্যার কারণে যারা আত্মহত্যা করতে চায় তাদেরকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলার বেপারে কাজ করতে চান।

অনলাইনের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ এর ঢাকা বিভাগীয় সমন্বয়ক রাব্বানী আহমেদ এর পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ধারাবাহিক ভাবে সাপ্তাহিক ফেসবুক লাইভ প্রোগ্রাম আয়োজিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। যা জনগণের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে।

এছাড়াও সংস্থাটি পিরিয়ড ও বয়ঃসন্ধি কালীন মানসিক স্বাস্থ্য, প্যারেন্টিং/সন্তান পালন, শিক্ষার্থী দের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যাপক ভাবে কাজ করে চলেছে। সুইসাইড প্রোটেক্টিং স্কোয়াড এর ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম সব সময় হতাশাগ্রস্ত ও আত্মহত্যা প্রবণ মানুষকে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে ভূমিকা পালন করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *