আল-জাজিরার খ্যাতনামা সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যা নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনি। এর মধ্যেই এসেছে ঐতিহাসিক নকবা দিবস। বরাবরের মতো এবারও বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করছে ফিলিস্তিনিরা।
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে ভিটেমাটি ছাড়া করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে গোড়াপত্তন হয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের। দিবসটিকে নিজেদের বিপর্যয়ের দিন হিসেবে দেখে ফিলিস্তিনিরা। আরবি শব্দ নকবা অর্থ বিপর্যয়। ‘নকবা দিবস’ মানে বিপর্যয় দিবস। গত প্রায় সাত দশক ধরে প্রতি বছর দিনটি স্মরণ করে থাকে ফিলিস্তিনিরা।
আল-জাজিরা জানায়, রাষ্ট্র গঠনের পর এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের ৭৮ শতাংশের বেশি ভূমি দখল করে নিয়েছে ইসরাইল। ৫৩০টিরও বেশি গ্রাম ও শহর ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
বুধবার (১১ মে) অধিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিনে সংবাদ সংগ্রহকালে শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানকালে খবর সংগ্রহ করছিলেন ৫১ বছর বয়সী ওই সাংবাদিক।
ফিলিস্তিনিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে আসছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের এ নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিদিনের চিত্র সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরে আরব বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন খ্যাতনামা টেলিভিশন সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ।
শিরিন একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বন্ধু ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন, শিরিন অনেক সাহসী ও দয়ালু। সবসময় তার মুখে হাসি লেগেই থাকতো। হারানো অধিকার ফিরে পেতে ফিলিস্তিনিদের যে সংগ্রাম তাকে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শিরিন এবং প্রায় তিন দশক ধরে এই কাজ করছিলেন তিনি।
সাংবাদিক শিরিন হত্যায় ফিলিস্তিনের প্রতিটি ঘরে আজ কান্না। রামাল্লা থেকে গাজা, জেনিন থেকে হাইফায় আজ শোক ও প্রতিবাদে উত্তাল। এর মধ্যেই হাজির ‘বিপর্যয়ের দিন’। দিবসটি উপলক্ষ্যে পশ্চিম তীরের রামাল্লাসহ ফিলিস্তিনের শহরে শহরে প্রতিবাদ র্যালি-সমাবেশ বের হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
নাকবা দিবস উপলক্ষে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। লন্ডনে ব্রিটিশ সম্প্রচার কর্পোরেশনের (বিবিসি) প্রধান কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে বিপুল মানুষ অংশ নেন। এর আগে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনেও বিক্ষোভ করেন।
নকবা দিবসে দোহার ফিলিস্তিনি দূতাবাসে সাংবাদিক শিরিনকে স্মরণ
এদিকে নকবা দিবস উপলক্ষে কাতারের রাজধানী দোহার ফিলিস্তিনি দূতাবাসে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে নিহত সাংবাদিক শিরিন আবু আহলেহকে স্মরণ করেছেন দেশটিতে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিরা।
দোহা থেকে আলজাজিরার রিপোর্টার জামাল এল শায়াল জানান, ‘এখন অনেকেরই বিশ্বাস, সাংবাদিক শিরিনের হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে ফিলিস্তিনিদের কণ্ঠ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও শক্তিশালী ও উচ্চকিত হয়েছে।’
নকবা দিবস উপলক্ষে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ বলেন, ইসরাইলের চলমান নির্যাতন-নিপীড়ন ও বিতাড়ন সত্ত্বেও ইসরাইল-ফিলিস্তিনি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান এখনও সম্ভব। ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব করা হচ্ছে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে।’