প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে বহু প্রত্যাশিত পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হচ্ছে আজ শনিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১১টার পর সেতুটি উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে। তবে সবার ব্যবহারের জন্য রোববার সকাল থেকে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মাসেতু খুলে দেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সর্বোচ্চ মাত্র সাত মিনিটে পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়া যাবে। দ্বিতল এ সেতুতে রেল চলাচলের ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে রেল সংযোগের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
প্রায় দুই যুগ আগে যে সেতুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, সেই আজ আলোর মুখ দেখছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২২শে জুন একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পদ্মাসেতুর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থে সেতুটি তৈরি করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, পদ্মাসেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। এসব জেলায় এর মধ্যেই সেতু ঘিরে নানারকম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ঢাকা আমাদের এখান থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে। কিন্তু কেউ অসুস্থ হলেও সন্ধ্যা হলে আর আমরা যাতায়াত করতে পারতাম না। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই ফেরি বন্ধ হয়ে যেতো। কতবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে নদী পার হয়েছি। সেইসব কষ্টের আজ যেন অবসান ঘটতে যাচ্ছে।’
সেতুর দুই পাড়ে আনন্দ
পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের দিনে দুই পাড়ে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়েছেন। মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে যদিও শুধুমাত্র আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশ নেয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুল সমাবেশ স্থলে যেতে না পারলেও আশেপাশের এলাকায় অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন।
মাদারীপুরের শিবচরে একটি জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোর থেকেই সেখানে কয়েক লাখ মানুষ এসে জড়ো হয়েছেন।
পদ্মাসেতু উদ্বোধন ঘিরে ঢাকা-মাওয়া এবং জাজিরার টোল প্লাজা থেকে শরীয়তপুর ও ভাঙ্গা মহাসড়কের দুই পাশে নানা ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। অনেক স্থানে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে পদ্মাসেতুতে অসংখ্য ট্রলার, নৌযান ঘুরতে দেখা গেছে, যেগুলা রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেতুর ফলক উন্মোচনের পর মাদারীপুরের শিবচরে জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করছেন দলটির নেতারা।
পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ
১৯৯৯ সালে প্রথম তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মাসেতুর প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শুরু করে। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাইসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একনেকে পদ্মাসেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হয়।
২০১১ এই সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করার জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করে সরকার। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক চুক্তি থেকে সরে যায়। পরে অন্য সংস্থাগুলোও সরে যায়। যদিও পরে সেই দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। দুই হাজার বারো সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। পদ্মাসেতুর মূল কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে।
পদ্মাসেতু নিয়ে কিছু তথ্য
পদ্মাসেতুতে গাড়ির লেন থাকবে একেক পাশে দুটো করে এবং একটি ব্রেকডাউন লেন। অর্থাৎ মোট ছয় লেনের ব্রিজ হচ্ছে, যদিও একে বলা হচ্ছে ফোর লেনের ব্রিজ।পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় নয় কিলোমিটার। দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক অংশ থাকবে মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায়, আরেক অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়। সেতুর ওপরে গাড়ি চলাচল করবে, রেল চলবে নিচের অংশে।
পদ্মাসেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হচ্ছে ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এ বছরের ২১শে জুন পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।
-বিবিসি বাংলা