নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে আজ

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে আজ

জাতীয়

আগস্ট ৩১, ২০২৩ ৭:০৭ অপরাহ্ণ

মনিরুজ্জামান মনি, সুন্দরবন

টানা তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের দুয়ার খুলছে আজ। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রজনন বৃদ্ধিতে ডেল্টা প্ল্যান-২০২১ এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১লা জুন থেকে ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস সুন্দরবনে সকল ধরনের কার্যক্রমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বন বিভাগ। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখে বন বিভাগ। সুন্দরবন ডেল্টা প্ল্যান-২০২১ এর আওতাধীন হওয়ার পর ২০২২ সাল থেকে সর্বপ্রথম সুন্দরবনে তিন মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়তে হয় সুন্দরবনে জীবিকানির্ভর পরিবারগুলোকে। এরমধ্যে জেলে, বাউয়াল, মৌয়াল, পর্যটক বাহী যানবাহনের মালিক-শ্রমিক, পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত হোটেল-মোটেলসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। পাশাপাশি সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারায়। সাতক্ষীরা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত তিন মাস পাশ বন্ধ থাকায় সরকারি রাজস্ব নেই বললেই চলে। তবে বনবিভাগের তৎপরতায় অবৈধ ভাবে সুন্দরবনে প্রবেশ করার অপরাধে আটক হওয়া কিছু জেলেদের সিওআর মামলার মাধ্যমে নামমাত্র রাজস্ব আদায় হয়েছে। জানা গেছে, বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত পর্যাটকদের থেকে সরকারি রাজস্ব এসেছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। মাছ ও কাঁকড়ার পাশ থেকে রাজস্ব এসেছে ৫ লক্ষ টাকা। তবে ২০২২ সাল থেকে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবন বন্ধ থাকায় চোখে পড়ার মত কোন রাজস্ব আদায় হয়নি। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের জলভাগে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও এক প্রজাতির লবস্টার রয়েছে। জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস মাছের প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছের ডিম থেকে জন্ম নেয় পোনা। এই পোনা সংরক্ষণের জন্য সরকারি এমন সিদ্ধান্ত। সরকারি প্রনোদণা হিসেবে এ বছর ১ জুনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর ২বারে জেলেদের কাছে জেলে কার্ডের প্রণোদনার চাউল এসেছে ৮৬কেজি। যার প্রথম ধাপে ৫৬ ও পরে ৩০কেজি। তবে জেলেরদের অভিযোগ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক, বিত্তশালীসহ অসংখ্য স্বচ্ছল পরিবার এসেছে কার্ডধারী জেলেদের তালিকায়। ফলে প্রকৃত অনেক জেলে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি মজুমদার বলেন, ‘উপজেলায় নিবন্ধিত ২৩ হাজার মৎস্যজীবী রয়েছেন। যার বেশিরভাগ খাল-বিলে, নদীতে ও সাগরে মৎস্য আহরণ করেন। এরমধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী পরিবারের সংখ্যা ৮ হাজার ৩২৪টি। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর উপজেলা মৎস্য অফিসের অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উত্তরন জেলে কার্ডের সংশোধনীর কাজ শুরু করেছে। এক্ষেত্রে মারা যাওয়া, জেলে কার্ডের সাথে ব্যাক্তির আর্থিক অসংগতি ও স্থান পরিবর্তন করা জেলেদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত জেলেদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, ‘পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে প্রায় ৭ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের আয়ের উপর নির্ভরশীল’। টানা তিন মাস সুন্দরবন বন্ধের সময় বনবিভাগের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর বনবিভাগ কোন প্রকার সহযোগিতা করতে পারিনি। তবে একটা প্রক্রিয়া চলছে। আশাকরা যায় আগামী বছর থেকে বিএলসি ধারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে বনবিভাগ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *