রাজধানীতে CLARISSA-র গবেষণা সমাপনী অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আন্তর্জাতিক

মার্চ ১৯, ২০২৪ ১:১৫ অপরাহ্ণ

শওকত আলী হাজারী।।

৬ মার্চ ঢাকার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত হল “চাইল্ড লেবারঅ্যাকশান রিসার্চ ইনোভেশন ইন সাউথ অ্যান্ড সাউথ ইস্টার্ন এশিয়া” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনার বিষয় ছিলো বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে এদেশের বিপজ্জনক, শোষণমূলক কাজে জড়িত শিশুদের স্বার্থে বিকল্প ও নতুন কাজের পরিসর সৃষ্টি করা। অনুষ্ঠানটি সম্মেলিতভাবে আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি), টেরে ডেস হোমস ফাউন্ডেশন, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি এবং যুক্তরাজ্যের ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। অনুষ্ঠানটিতে "চাইল্ড লেবার অ্যাকশান রিসার্চ ইনোভেশন ইন সাউথ অ্যান্ড সাউথ ইস্টার্ন এশিয়া” সংক্ষেপে CLARISSA প্রোগ্রামের অধীনে পরিচালিত গবেষণার মূল ফলাফলগুলো উপস্থাপন করা হয় এবং এক্ষেত্রে সম্ভাব্য নীতিমালার সুপারিশ সামনে আনা হয়।

ক্লারিসা (CLARISSA) প্রোগ্রামটির অন্যতম উদ্দেশ্য হল গবেষণার মাধ্যমে শিশু শ্রমের
কারণগুলোকে খোঁজা যে কারণগুলো শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দিকে চালিত করে। প্রোগ্রামের অধীনে শিশু ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করণের মাধ্যমে শিশু শ্রমের গতিশীলতাকে হ্রাস করা এবং এর সর্বাধিক ক্ষতিকর প্রভাবগুলি প্রশমিত করা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বিআইজিডি’র নির্বাহি পরিচালক ড. ইমরান মতিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন যে, এই গবেষণা
বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে আলোকপাত করেছে। সকলে মিলে আগামিতে কিভাবে সমস্যাগুলোর সমাধান টেকসইভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবার ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করার ব্যাপারে জোর দেন। অনুষ্ঠানে ক্লারিসা কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. জিনিয়া আফরোজ সংক্ষেপে ক্লারিসার কার্যবিবরণী এবং মূল ফলাফলগুলো উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানের ৩টি অধিবেশন ছিল। সেসব অধিবেশনে আলোচনার বিষয় ছিলো যথাক্রমে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি এবং শিশুশ্রম, শিশু কেন্দ্রিক পদ্ধতি গ্রহণ এবং সামাজিক সুরক্ষা।

প্রথম অধিবেশনে গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ. কে. এম. মাকসুদ বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ও শোষণমূলক শ্রমে অনুর্ভূক্তি বন্ধ করতে শিশুদের জন্য বিকল্প কাজের সুযোগ সৃষ্টির গুরুত্ব উল্লেখ করেন এবং এক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি এবং শিশু শ্রমের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন যেগুলোর মাধ্যমে শিশুদের বিপজ্জনক কাজে অন্তর্ভূক্তি কমানো সম্ভব বলে ভাবা হচ্ছে। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম উইংয়ের যুগ্ম সচিব মিসেস হাজেরা খাতুন। তিনি শিশুশ্রম বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রশংসা করেন। তিনি শিশুদের পিতামাতাকে কর্মপরিকল্পনার আওতায় আনার ব্যাপারে সকল অংশীদারদের কাজ করতে আহ্বান জানান।

দ্বিতীয় অধিবেশনে “শিশু শ্রম মোকাবিলায় শিশুকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি” শিরোনামে ক্লারিসার সিনিয়র পার্টিসিপেটরি অ্যাকশন রিসার্চার সুরজিৎ কুন্ডু শিশুদের কণ্ঠস্বর এবং এজেন্সি কিভাবে ক্লারিসা কর্মসূচির প্রভাব ও সাফল্য বাড়াতে এবং দেশের সামগ্রিক শিশু শ্রম পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা খায়রুন্নাহার এবং সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের যুগ্ম সচিব ও মহাব্যবস্থাপক মোঃ হায়দার আলী।

ক্লারিসা প্রোগ্রামের কো-প্রোগ্রাম ইনভেস্টিগেটর ড. কেটি রোলেন তৃতীয় অধিবেশনে “সামাজিক সুরক্ষা” শিরোনামে দারিদ্র্য মোকাবেলা, সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি ও শিশু শ্রমের খারাপ দিকগুলো সমাধানের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সামাজিক নীতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো অফ প্র্যাকটিস মাহিন সুলতান এবং সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডঃ আবু সালেহ মোস্তফা কামাল।

সমাপনী বক্তব্যে সাসেক্স ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের রিসার্চ
ডিরেক্টর পিটার টাইলর বলেন, “এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুদের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েছি। যাদের কন্ঠস্বর আসলে শোনার মত কেউ নেই।“

প্রধান অতিথি, বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির
প্রধান জনাব এইচ. এম. ইব্রাহিম এমপি উল্লেখ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে গবেষণায় প্রাপ্ত
ফলাফলকে অবশ্যই আমলে নেয়া হবে। তিনি জানান, সরকার শিশুশ্রম রোধে বিশেষভাবে তৎপর। অনুষ্ঠানের বক্তারা শিশুদের খারাপ ও ক্ষতিকর কাজে যুক্ত হওয়ার কারণসমূহ ও সেগুলো প্রতিহত করার উপায়সমূহ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় উঠে এসেছে শিশুদের শ্রমের নিম্ন মান এবং পেশাগত নিরাপত্তার অভাব, শিশু শ্রম হ্রাস করণে নানা সুপারিশ, শিশু শ্রম নির্মূলে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন (২০২১-২০২৫) সহ নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *