সংখ্যালঘু পরিষদের ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন থেকে কঠোর বার্তা

দেশজুড়ে স্লাইড

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ণ

 সুদীপ দেবনাথ রিমন

৪৮ ঘন্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান থেকে সরকারকে কঠোর বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। আগামী আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার কথা জানিয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যৌথ এ সংগঠন।

এ ছাড়াও সরকারের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও কঠোর বার্তা দিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

গণঅনশনের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকেলে বিগত নির্বাচনের আগে সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতিসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত।

রাণা দাশগুপ্ত বলেন, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বলেই আমরা বাধ্য হয়ে আমরা ৪৮ ঘণ্টার অনশনে বসেছি। আমরা আশা করতে চাই, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনারে এসে আমাদের অনশনের সাথে সংহতি জানাবেন।

শারদীয় দুর্গাপূজার আগে প্রতি বছরের মতো এবারও মূর্তি ভাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করে রাণা দাশ বলেন, ২০২১ সালের শারদ সন্ত্রাসের সময় গ্রেফতার হওয়া সহিংসতার সূচনাকারী কুমিল্লার ইকবালকে যদি পাগল না সাজিয়ে যথাযথ বিচার ও সাজার মুখোমুখি করা হতো, তাহলে এতো মূর্তি ভাঙ্গা, মন্দির ভাঙ্গার ঘটনা আমাদের দেখতে হতো না। আমরা ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে শারদীয় দুর্গাপূজার সময় ও পূজার আগে-পরে নিরাপত্তার প্রশ্নে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছি।

আসন্ন দুর্গাপূজার সময় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দল আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন না, আমরা তাদেরকে বন্ধু মনে করবো না।

সাড়ে চার বছরের বেশি সময়েও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাণা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, আরেকটি সংসদ নির্বাচন দোরগোড়ায় এসে গেলেও বিগত নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ না করা দুর্ভাগ্যজনক। সদিচ্ছা থাকলে আগামী মাসে সংসদের শেষ অধিবেশনে এবং কিছু নির্বাহী আদেশে দ্রুততম সময়ে এসব অঙ্গীকার পূরণ করা সম্ভব।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি। ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ১১:৩০ মিনিটে ও বিকাল ৩টায় কর্মসূচিস্থল শহীদ মিনারে প্রেস ব্রিফিং করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

প্রেস ব্রিফিং থেকে আগামী ৬ অক্টোবরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার কথা জানানো হয়। সরকারের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করে সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন।

শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়ায় অনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি চলে রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত।

উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন সহ সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে এই অনশন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও প্রাক্তন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।

এছাড়া প্রথম দিনের কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, জয়ন্ত সেন দীপু, অধ্যাপক ড. জিনোবোধি ভিক্ষু, রঞ্জন কর্মকার, মিলন কান্তি দত্ত, যোসেফ সুধীন মণ্ডল, বাসুদেব ধর, মঞ্জু ধর, জয়ন্তী রায়, এ্যাড. বিকাশ রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, এ্যাড. তাপস কুমার পাল, এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, এ্যাড. কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, রবীন্দ্রনাথ বসু, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোরাইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের (প্রভাষ-পলাশ) সভাপতি প্রভাষ বিশ্বাস, নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, হিন্দু মহাজোটের (এমকে) সভাপতি এম কে রায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের আদিবাসী সংগঠনসমূহের ঐক্য পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক অরণ্য চিরান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *