নালিতাবাড়ীর দিনমজুর শাহ কামাল কদি হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৬

নালিতাবাড়ীর দিনমজুর শাহ কামাল কদি হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৬

দেশজুড়ে

জানুয়ারি ২৯, ২০২৪ ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ

মাহফুজুর রহমান সোহাগ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)।।

গত ২৬ জানুয়ারি সকাল ১১টায় শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের ভাইটকামারী কুত্তামারা এলাকার স্টিলের ব্রীজের হরেখালি নামক খালের পাড়ে ঝোপঝাড়ের ভিতরে এক গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখতে পায় এক যুবক।

ফোন করে পুলিশকে জানালে ঘটনাস্থল হতে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ শাহ কামাল কদির (৩৫) মরদেহ উদ্ধারপূর্বক সুরতহাল প্রস্তুত করে। তিনি যোগানিয়া ইউনিয়নের ভাইটকামারী এলাকার মৃত জবেদ আলীর পুত্র। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর।

জানা যায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আপন ভাগ্নেকে গলাকেটে হত্যার পরিকল্পনা করেন ১০ নম্বর যোগানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হবি।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নালিতাবাড়ী সার্কেল দিদারুল ইসলাম। এর আগে ওই চেয়ারম্যান, তার ছেলে, স্ত্রী, ভাই এবং দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন স্থানীয় আ’লীগ নেতা পরিকল্পনাকারী হাবিবুর রহমান হবি (৫৫), তার ছেলে সারোয়ার জাহান শান্ত (২৬), তৃতীয় স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা (৪২), সহোদর ভাই হারেজ আলী (৫৮), ভাতিজা মস্তুফা (৩০) ও রাহুল (২২)।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায়, নেতা হাবিবুর রহমান হবিবের পরিকল্পনাতেই ছেলে ও দুই ভাতিজা মিলে বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে গলা কেটে শাহ কামাল ওরফে কদি মিয়াকে (৩৫) হত্যা করা হয়।

নালিতাবাড়ী থানার ওসির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দিদারুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ চলাকালে তৎকালীন যোগানিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবির অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন প্রতিপক্ষের কৃষক ইদ্রিস আলী (৩০)।

চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে আমলে নিয়ে তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের আগ্নেয়াস্ত্র ও হত্যা এ দুই মামলায় পৃথক চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘদিন হাজতবাসের পর আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসে।

নালিতাবাড়ীর দিনমজুর শাহ কামাল কদি হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন
হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম

এদিকে হবি চেয়ারম্যানের গুলিতে নিহত ইদ্রিস আলীর বাবা ফজল মিয়ার সাথে চেয়ারম্যানের ভাগ্নে দিনমজুর শাহ কামালের ২০১৮ সালে বন্ধকি নেয়া ৫৫ শতক জমি নিয়ে বিরোধ ও বিচার-শালিস চলছিল। এ বিরোধকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে ভাগ্নেকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ ফজলকে ফাঁসাতে পরিকল্পনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবি। তার সাথে এ পরিকল্পনায় অংশ নেন তারই সহোদর ভাই হারেজ আলী ও স্ত্রী আমেলা খাতুন ঝর্ণা।

বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে নিজ ঘর থেকে স্থানীয় গড়াকুড়া বাজারের উদ্দেশে বের হন দিনমজুর শাহ কামাল। গড়াকুড়া বাজার থেকে মস্তুফা শাহ কামালকে ডেকে হাবিবুর রহমান হবির পরিত্যক্ত বাড়ির একটি ঘরে পাঠায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা সারোয়ার জাহান শান্ত ও রাহুল শাহ কামালকে চেপে ধরে। মস্তুফা ছুড়ি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। পরে ফ্লোরের রক্ত ধুয়ে-মুছে বস্তা ও কম্বল দিয়ে পেচিয়ে লাশটি মাঝ রাতে হরে খালের ধারে ফেলে রাখা হয়। এসময় বস্তা ও কম্বল পুড়িয়ে বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।

এদিকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী শেফালী স্বজনদের বাড়ি ফোন করে খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুত্তামারা হরে খাল পাড়ের বাসিন্দা রনি মিয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বেরুয়। এ সময় বিলের ধারে ঝোপের নিচে লাশ দেখে তা শাহ কামালের গলাকাটা বলে সনাক্ত করে। পরে ত্রিপল নাইনে ফোন করলে বেলা ১১টার দিকে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই লাশ উদ্ধার করে।

অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের তদন্তকালে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হবির বসতঘর তল্লাসী করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি, জামা-কাপড় ও জুতা জব্দ করে পুলিশ।

রাতেই হত্যাকাণ্ডের শিকার শাহ কামালের মা অছিরন বেগম অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। শনিবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে হত্যায় সরাসরি জড়িত তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুইয়া, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল লতিফ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *