লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে খালেদা জিয়ার, পরিবারের আবেদন

যেকোনো সময় খালেদার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি, হাসপাতালের খোঁজে পরিবার

জাতীয়

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩ ৬:৫০ অপরাহ্ণ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি দেয়া হতে পারে এমন সম্ভাবনা তৈরির পর বিভিন্ন দেশের হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাঁকে বিদেশে নিতে চেয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলবে—এমনটাই আশা পরিবারের সদস্যদের।

খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি সূত্র আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে জানিয়েছে, সরকার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে দ্রুত যাতে খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সে জন্যই এ প্রস্তুতি। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা চার দেশের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্‌যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তাঁর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ কারণে তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।

এরই মধ্যে গত সোমবার খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে সোমবার আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি মতামত জানতে চেয়ে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘বাইরে পাঠানোর জন্য দুই-তিন দিন আগে শামীম ইস্কান্দার সাহেব এসেছিলেন। ওইদিনই বলে দিয়েছি। আমার কাছে চিঠি দিয়েছেন। আইনি জটিলতার কারণে চিঠিটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। উনি (আইনমন্ত্রী) এখন ব্যাখ্যা দেবেন।’

পরিবারের এক সদস্য আজ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তাঁরা খোঁজ নিয়েছেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে এর উন্নত চিকিৎসা আছে। তাই তাঁরা ওই দেশগুলোয় খালেদা জিয়ার জন্য উপযুক্ত হাসপাতালের সন্ধান করছেন, যাতে তাঁরা অনুমতি পাওয়ামাত্র অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বাইরে নিতে পারেন।

চিকিৎসা বোর্ডের এক সদস্য বলেছেন, খালেদা জিয়ার এখন যে অবস্থা, তাতে তাঁকে বাইরে নেওয়া জরুরি।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে নেতিবাচক নানা কথা বললেও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের অনেকে মনে করেন, সরকার চাইলে আদালতে না গিয়ে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক সম্প্রতি দেশের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্ন আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন খারিজ করেছিলেন। কিন্তু আদালতকে কিছু না জানিয়ে সরকার মানবিক দিক বিবেচনার কথা বলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল। ফলে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও একই রকম ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও মুক্তি আদালতের নির্দেশে হয়নি। সরকার নির্বাহী আদেশে তা করেছে। ফলে মন্ত্রীরা এখন আদালতের এখতিয়ারের কথা বললে সে বক্তব্য ঠিক নয়। এটি সরকারের বিবেচনার বিষয় বলেই তিনি উল্লেখ করেন।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন।

দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

সর্বশেষ গত মার্চ মাসে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *