নিরাপদ ইন্টারনেট ও সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত

নিরাপদ ইন্টারনেট ও সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত

দেশজুড়ে স্পেশাল স্লাইড

আগস্ট ২৪, ২০২৩ ৪:৪২ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার ও সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও মুক্ত আলোচনা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ২৪ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শ্যামপুর আদর্শ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

এসময় আলোচনায় অংশ নিয়ে উপস্থিত ব্যক্তিরা সচেতনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, ছোটবেলা থেকেই ডিজিটাল স্বাক্ষরতা এবং প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার প্রচার করতে হবে। দায়িত্বশীল অনলাইন আচরণ, গোপনীয়তা সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে ধারণা নিজে রাখতে হবে এবং অন্যকে জানাতে হবে। জনপ্রিয় কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশের নিবন্ধিত নয়। অতএব ব্যবহার এবং অত্যাধিক ব্যবহারের মধ্যে একটি পাতলা রেখা রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের তাদের সীমানা আঁকতে হবে।

সাইবার নিরাপত্তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের করণীয় তুলে ধরে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানী ও ক্ষমতার উন্নতির জন্য একাডেমিক সেশনে গ্রুপ ওয়ার্ক, উপস্থাপনা, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি পঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে পরিবারকে। উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ২০ থেকে ২২ বছরের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাই অভিভাবকদের সন্তানের এই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। অনাকাঙ্খিত অ্যাপের বিপদ সম্পর্কে অভিভাবক ও কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের সচেতন করে তুলতে হবে।

নিরাপদ ইন্টারনেট ও সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত
নিরাপদ ইন্টারনেট ও সাইবার নিরাপত্তায় সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত

এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে আমরা ডিজিটাল যুগে বাস করছি এবং আমরা প্রযুক্তি দ্বারা বেষ্ঠিত। এক্ষেত্রে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রলোভনে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আজকাল খাবার অর্ডার, জামা কাপড় কেনা সবকিছু মাত্র এক ক্লিকে করে থাকি। প্রয়োজনীয় বিষয়ের বাইরে যেমন অপ্রয়োজনীয় ফেসবুকিং, ব্রাউজিং, গেমিং, গ্যাম্বলিং এমনকি পর্নোগ্রাফি দেখাতে ইন্টারনেটের ব্যবহারকে অপব্যবহার বলা হয়। বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায় শিশু-কিশোর, তরুণ, যুবক, পূর্ণবয়স্ক, মধ্যবয়স্ক এমনকি বয়োবৃদ্ধরাও ইন্টারনেটের অপব্যবহারের শিকার। শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা বন্ধু গ্রহণ, সম্পর্কে জড়ানো, চ্যাটিং, গেমিং, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি ক্ষেত্রে অপব্যবহার বেশি করছে।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার প্রসঙ্গে বলা হয়, টিকটক ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই কম বয়সী শিক্ষার্থী। লাইকি ও টিকটক এর জন্য খুব সামান্য সেটআপ ও দক্ষতা দরকার হয় বলে স্বল্পশিক্ষিত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েরাও খুব সহজেই সাইবার বিনোদন জগতে প্রবেশ করছে। শুধু একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ প্রয়োজন হয়। এছাড়া, এখানে অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে তেমন কোনো কিছুরই দরকার হয় না। টিকটকের রিপোর্টিং সিস্টেমে অশ্লীল বিষয়ে বা আলাদা করে দেখানো হয় না। ফলে যে যা খুশি আপলোড করতে পারছে।

ইন্টারনেট আসক্ত শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার কাজ গুছিয়ে উঠতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষার ভীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা এ বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন থাকছে। যে কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাকীত্ব বাড়ছে, যা পড়াশোনাকে বেশি কঠিন করে তুলছে বলেও জানান মহিউদ্দিন আহমেদ।

এ সময় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের করণীয় বিষয়ক ১০টি পরামর্শ প্রদান করা হয়। এগুলো হলো:
১. ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্যারেন্টাল গাইডলাইন অনুসরণ করতে হবে। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে সংযোগ প্রদানের সময় অবশ্যই প্যারেন্টাল গাইডলাইন অনুসরণ করতে বাধ্য করুন বা অনুরোধ করুন।

২. ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইন প্লাটফর্মে শেয়ার না করা। মোবাইলে ব্যক্তিগত কিছু স্টোর করে না রাখা উত্তম। যে অংশগুলো একদম ব্যক্তিগত সেগুলো হার্ডডিস্ক থেকে সরিয়ে নেওয়া ভালো। যেকোনো সময় মোবাইলটি হারিয়ে যেতে পারে তখন স্টোরে থাকা ডাটাগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

৩. স্মার্টফোনে অচেনা অ্যাপস, ই-মেইল বার্তা, ক্লিক না করে এড়িয়ে যাওয়া উত্তম।

৪. ফেসবুকে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে সচেতন হোন।

৫. ফেসবুক, নেট, ই-মেইল ব্যবহার করার পর লগ আউট করুন।

৬. অর্থ সংক্রান্ত লেনদেন বিষয়ে সতর্ক হওয়া বা কোন প্রলোভনে পা না দেওয়া, এক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না। কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন দিয়ে চাইলেও আপনি তা দিবেন না।

৭. সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন হোন। দেশের প্রচলিত আইন অর্থাৎ ডিজিটাল নিরাপত্তা বা সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক আইন সম্পর্কে অবগত হন।

৮. হয়রানির শিকার হলে ৯৯৯ অথবা পুলিশের পেজে নক করলেও সহায়তা পাবেন।

৯. ফেসবুকে ফ্রেন্ড লিস্টে আপনার সন্তানের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।

১০. আপনার সন্তানের সামনে অপ্রয়োজনে চ্যাটিং বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করাটা উত্তম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *