অভাবনীয় উদ্ভাবন "পঞ্চগৃহী" ধান, একবার রোপনে পাঁচবার ফলন

অভাবনীয় উদ্ভাবন “পঞ্চগৃহী” ধান, একবার রোপনে পাঁচবার ফলন

দেশজুড়ে স্পেশাল

জুন ১০, ২০২৪ ৪:১৫ অপরাহ্ণ

সোহেল রায়হান, স্টাফ রিপোর্টার

সম্প্রতি এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী “ডক্টর আবেদ চৌধুরী” একটি নতুন জাতের ধান গাছ উদ্ভাবন করেছেন। যেটা একবার রোপনে পাঁচবার ধান দেবে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমী। এই পাঁচ প্রকার ধান হলো- বোরো একবার আউশ দুই বার এবং আমন ২ বার অর্থাৎ তিন মৌসুমে বা বছর জুড়েই ধান দেবে এই গাছ।

তিনি নতুন উদ্ভাবিত এই ধান গাছের নাম দিয়েছেন “পঞ্চগৃহী”। পঞ্চ মানে ৫ আর গৃহী মানে ধান। ডক্টর আবেদ চৌধুরী একজন জিন গবেষক। একদল অস্ট্রেলিয় বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তিনি ফিজ অর্থাৎ ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিড জিন আবিষ্কার করেন। তিনি লাল রঙের চাল ও রঙিন ভুট্টাও উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত রঙিন ভুট্টা ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে বিশ্বব্যাপী বেশ আলোচিত।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার এই জিন বিজ্ঞানী দীর্ঘদিন কৃষকদের সাথে মিশে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে কোনরকম রাসায়নিক ছাড়াই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে বহু প্রজাতির ধানের মিশ্রণ ঘটিয়ে এই নতুন জাতের ধান আবিষ্কার করেন। এর ফলে আলাদা করে পাঁচ বার ধান গাছ রোপন করতে হবে না জমিতে, বাঁচবে কৃষকের খরচ, একবার ধানের চারা রোপন করলে এই গাছ থেকে ফলন পাওয়া যাবে পাঁচবার, এতে বাড়বে ধানের ফলন।

এই নতুন জাতের ধান বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের জন্য এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তবে দেশে এই যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই কোন প্রশংসা কিংবা আলোচনা।

বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী বলেছেন – তার এই আবিষ্কারকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে টাকা উপার্জনের হাতিয়ার করবেন না তিনি। এই নতুন জাতের ধান গাছ কিভাবে কৃষকদের জন্য সহজলভ্য করা যায় সেই উদ্দেশ্যেই কাজ করবেন তিনি। এমন মহৎ মানসিকতার গুনে বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ। সত্যিই গর্ব করার বিষয়। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয় উচ্চ ফলনশীল ধান গবেষণা ও ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে গবেষণা করছেন।

কুলাউড়ার কালিহাতী গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নিয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধান বিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করে কাঁটিয়ে দিয়েছেন ২০ বছর। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন।

আবেদ চৌধুরী বলেন- আমি দেখেছি কৃষি নির্ভর পরিবারের মানুষদের দেশে খুব অবহেলা করা হয়। মানুষ শুধু কম দামে ধান পেতে চায় কিন্তু কৃষকরা যে মূল্য পাচ্ছেনা সেটা নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। কৃষিতে কিভাবে কৃষকদের আয় বাড়ানো যায় এবং ব্যয় কমানো যায় এটা নিয়ে আমি সারাক্ষণ চিন্তা করি। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় বহুগ্রীহির মাধ্যমে আমি সেটা করতে পেরেছি। আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবিত “পঞ্চগৃহী” এমন এক জাত যা চাষ করলে এর মাধ্যমে একটি ধান গাছ থেকে মোট পাঁচ বার ফলন পাওয়া সম্ভব হবে। কম সময়ে পাঁকা এই ধানের উৎপাদন বেশি খরচও কম। সাধারণ ধান গাছের তুলনায় এর ফলন ব্যয় অনেক কম কিন্তু ফসল হবে পাঁচ গুণ বেশি। এই গাছ বৃষ্টি নষ্ট করতে পারেনা, ধানের গাছ খুব শক্ত। ডঃ আবেদ চৌধুরীর ভাষায় এই নতুন ধান চাষ পদ্ধতি যদি সারাদেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে আগামী ৫০ বছরের জন্য গোটা জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।এমন একটি উদ্ভাবনের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *