হজ নিবন্ধন: ৪ বার সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ হয়নি

হজ নিবন্ধন: ৪ বার সময় বাড়িয়েও কোটা পূরণ হয়নি

জাতীয় স্লাইড

মার্চ ২২, ২০২৩ ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ

চুক্তি অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। কিন্তু দফায় দফায় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও এই কোটা পূরণ করা যায়নি। চতুর্থ দফায় ১৭ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ দিন সময় বাড়িয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো অবস্থায় নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না। কিন্তু শেষ সময়ে সাড়া মিলেছে কেবল চার হাজার ৬০১ জনের। কোটা পূরণ হতে এখনো ১১ হাজার ৫৮৭ জন বাকি; যা মোট কোটার ৯ শতাংশ। এদিকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া যৌক্তিক করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিলেও তা কাজে আসছে না। বিমান কর্তৃপক্ষ ভাড়া কমানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে।

জানা যায়, তৃতীয় দফার শেষ সময় ১৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টা পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেন এক লাখ ১১ হাজার ১০ জন। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৬৮৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ এক হাজার ৩২৬ জন। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) শেষ সময় পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিবন্ধন করেছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৬১১ জন। এর মধ্যে সরকারিভাবে নিবন্ধন করেছেন ৯ হাজার ৮২৯ জন এবং বেসরকারিতে নিবন্ধন করেছেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৭৮২ জন।

চলতি বছর হজের জন্য সরকারি প্যাকেজে সর্বনিু ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা ও বেসরকারি প্যাকেজ ছয় লাখ ৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্যাকেজের মূল্য বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। অনেকেই এটাকে অস্বাভাবিক মনে করছেন। ডলার, রিয়াল ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিমান ভাড়া বাড়ার অজুহাতে প্যাকেজের খরচ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও প্যাকেজের বাইরে যাত্রীর রয়েছে আরও বিভিন্ন ধরনের খরচ। সব মিলে প্যাকেজের বাইরে আরও খরচ রয়েছে।

হজ প্যাকেজের খরচ মাত্রাতিরিক্ত বাড়ানো নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। খরচ কমানের দাবিও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে খরচ কমানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে এমনিতেই মানুষ নানাভাবে সংকটে আছে। এর মধ্যে হজের খরচ দেড় লাখের বেশি টাকা বাড়ায় অনেকের পক্ষে হজে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এ কারণেই দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে হজ কোটা পূরণ করা যায়নি। বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ এসেছে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল থেকে। বিমান কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দিয়েছে ভাড়া কমানো সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম বলেন, হজ প্যাকেজের খরচ কমানোর কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশে বিমান ভাড়া ও সৌদি আরবে সার্ভিস চার্জ এবং বাড়ি ভাড়ায় এবার খরচ বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে হজ এজেন্সিজ অব বাংলাদেশ (হাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেন, সৌদি আরবে হজের খরচ গতবারের চেয়ে বেশি বাড়েনি। সৌদি মুদ্রা রিয়ালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং দেশে টাকার মান কমে যাওয়ায় এই অর্থে খরচ বেড়েছে। তবে বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে না রেখে অতিরিক্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিমান ভাড়া বৃদ্ধির কারণে মূলত প্যাকেজের দাম বেড়েছে।

হজের প্রাক-নিবন্ধনকারী ফাতেমা আক্তার জানান, তিনি গত হজের আগে বেসরকারিভাবে প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন। ইচ্ছে ছিল এ বছর হজে যাওয়ার। কিন্তু চার দিক থেকে আর্থিক চাপ এমনভাবে ঘিরে ধরেছে যে এত টাকা খরচ করে তার হজে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। খরচ কমিয়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে রাখলে আমাদের মতো মানুষদের হজে যাওয়া সম্ভব হতো।

ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, এবার অস্বাভাবিক ও অতিরঞ্জিত খরচ নির্ধারণ করে অমানবিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এত বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করে হজে যাওয়া অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য। তাই এবার অনেকেই প্রাক-নিবন্ধন করেও হজে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

জানা যায়, বাংলাদেশের তুলনায় এশিয়ার অন্যান্য দেশে হজের খরচ অনেক কম। চলতি মৌসুমে মালেশিয়ায় সরকারি দুটি হজ প্যাকেজের একটি জনপ্রতি সোয়া দুই লাখ টাকা, অন্যটি আড়াই লাখ টাকা। ইন্দোনেশিয়ায়ও সরকারিভাবে হজে যেতে খরচ হবে সাড়ে তিন লাখ টাকা।

এদিকে হজের খরচ কমাতে হাইকোর্টও নির্দেশনা দিয়েছেন। হজের প্যাকেজ কমানোর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *