সাতক্ষীরা কালীগঞ্জে মোবাইলে হুমকি দিয়েই নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী অপহরণ

দেশজুড়ে

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪ ৭:০৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েই দেড় ঘণ্টা পর অপহরণের চার সপ্তাহেও পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী যুথিকা মিস্ত্রীকে (১৫)। গত ১৩ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাঁন্দুলিয়া গ্রামের নিজের কাকার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। তার বাবার নাম রমেশ মিস্ত্রী। কালিগঞ্জ উপজেলার চাঁন্দুলিয়া গ্রামের বীথিকা মিস্ত্রী জানান, তার বোন যুথিকা মিস্ত্রী আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করতো। শ্রীউলা গ্রামের অলিউল্লাহ সরদারের ছেলে আশাশুনি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র সজীব আহম্মেদ শুভ তাকে স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে উত্যক্ত করতো। বিষয়টি শুভ’র বাবা ও মাকে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। একপর্যায়ে গত ১৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে সাতটার দিকে তাকে (বীথিকা) ০১৪০২-২৮১২০৪ নং মুঠোফোন থেকে হুমকি দিয়ে যুথিকাকে এক সপ্তাহের মধ্যে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় শ্রীউলা গ্রামের অলিউল্লাহ সরদারের ছেলে সজীব আহম্মেদ শুভ। বাবা অসুস্থ থাকায় বিষয়টি তিনি তার মাকে জানান। এর দেড় ঘণ্টা পরপরই টিভি দেখে বাড়ি ফেরার পথে কাকা ভদ্রকান্ত মিস্ত্রীর বাড়ির সামনে ইট সোলিং এর রাস্তা থেকে যুথিকাকে বাবা ও মায়ের সম্মতিতে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে তিন- চারটি মোটর সাইকেলে এসে অপহরণ করে সজীব আহম্মেদ শুভ। এরপর থেকে শুভ ও তার পরিবারের সদস্যদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

চাঁন্দুলিয়া গ্রামের সুচিত্রা মিস্ত্রী জানান, মেয়েকে হুমকি দিয়ে অপহরণ করা হয়েছে বুঝতে পেরে ১৪ জানুয়ারি তিনি সজীব আহম্মেদ শুভসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা অসিত সেনসহ কয়েকজনকে নিয়ে থানার উপপরিদর্শক খলিলুর রহমানের কাছে একটি এজাহার দাখিল করেন। পরবর্তীতে চম্পাফুল ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন ও হিন্দু নেতা অসিত সেনের কথামত ১৬ জানুয়ারি পুলিশের কম্পিউটার কম্পোজকৃত একটি কাগজে সাক্ষর করে অনলাইনে সাধারণ ডায়েরী(৭২১ নং) করেন। নিখোঁজ হওয়ার তারিখ ১৩ জানুয়ারি রাত ৯টায় বলা হলেও তাতে লেখা হয় ১৫ জানুয়ারি রাত দেড়টা। একপর্যায়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক খলিলুর রহমান আসামীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তদন্তে গড়িমসি করছে মর্মে জানতে পেরে তদন্তের ভার উপপরিদর্শক নকীব আহম্মেদ পান্নুকে দেওয়া হয়। নকিব আহম্মেদ পান্নু তাদেরকে জানান যে, যে আশাশুনির বড়দলে সজিব আহম্মেদ তার ঢাকার আজিমপুরে এক চাচার বাসায় নিয়ে আটকে রেখেছে যুথিকাকে। কুষ্টিয়ায় এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক খলিলুর রহমানের সখ্যতার কারণে পুলিশ যুথিকাকে উদ্ধারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তিনি মেয়েকে ফেরৎ পেতে প্রশানের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
যুথিকা মিস্ত্রীর এক আত্মীয় ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, পুলিশ মামলা নেবে ও ভিকটিম উদ্ধার করবে ঠিকই, তবে যুথিকা অন্তঃস্বত্বা হওয়ার পর । যাতে তাকে আর পরিবারের লোক ফিরিয়ে না নিতে পারে।
এ ব্যাপারে সজীব আহম্মেদ শুভ, তার বাবা অলিউল্লাহ সরদার, মা তাহমিনার বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক খলিলুর রহমান জানান, ১৪ জানুয়ারি তার কাছে এজাহার দেওয়া হলেও অভিযোগকারি ১৬ জানুয়ারি থানায় সাধারণ ডায়েরী করায় তিনি যুথিকাকে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক নকীব আহম্মেদ পান্নু বলেন, তিনি তদন্তে খলিলুর রহমানকে সহযোগতিা করে যাচ্ছেন। এনালগ পদ্ধতিতে বন্ধ থাকা মোবাইল ফোনের সন্ধান পাওয়া খুব কঠিন বলে দাবি করে তিনি বলেন, যুথিকাকে উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহীন জানান, যুথিকার মায়ের থানায় এজাহার করার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে যে সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করে ভিকটিম উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে মামলা নেওয়া হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *