সংশোধন হচ্ছে নীতিমালা : চাকরি স্থায়ী না হলে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নয়

সংশোধন হচ্ছে নীতিমালা : চাকরি স্থায়ী না হলে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নয়

জাতীয় স্লাইড

ডিসেম্বর ১৮, ২০২২ ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চাকরি স্থায়ী না হলে কেউ বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন কিংবা প্রশিক্ষণের জন্য যেতে পারবেন না। মাস্টার্স কোর্স অধ্যয়নের জন্য একজন কর্মকর্তা একবারের বেশি বিদেশ গমনের আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়া কোনো কর্মকর্তা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে মাস্টার্স অথবা ডিপ্লোমা কোর্স অধ্যয়নের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে পোস্ট ডক্টোরাল কোর্সের আবেদনে কোনো বাধা নেই। বিদেশ প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালায় এসব বিধানসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে চাকরিতে যোগদান করেই কর্তাব্যক্তিদের বিশেষ আশীর্বাদে অনেকে উচ্চতর ডিগ্র কিংবা বৃত্তির জন্য বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। উল্লিখিত বিধান কার্যকর হলে সেই সুযোগ আর থাকবে না। বুনিয়াদি ও বিভাগীয় প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি স্থায়ী হলেই কেবল তিনি বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি কিংবা প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিদ্যমান নীতিমালায় শুধু প্রশিক্ষণ শেষে বিদেশে উচ্চ ডিগ্রির জন্য যাওয়ার কথা বলা আছে।

আরও জানা গেছে, বিদেশ প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন নীতিমালাটিতে বাস্তব কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সংশোধনী আনা না হলে সমস্যা আরও প্রকট হবে। অনেকে একটি কোর্স সম্পন্ন করার অনুমতি নিয়ে দুটি কোর্স সম্পন্ন করছেন। অনেকে দেশেই ফিরছেন না। রাষ্ট্রের খরচে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ না করার প্রবণতা বেড়েই চলছে। অনেকে দেশে ফিরেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন ও প্রশিক্ষণ নীতিমালায় বেশ কিছু সংশোধনী আনার কথা ভাবা হচ্ছে। যা কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।

নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ (সিপিটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. সহিদ উল্যাহ গত মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে বলেন, আমরা বিদেশ প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা অর্জন নীতিমালা সংশোধনের জন্য কাজ করছি। অনেক দিন ধরে কাজ চললেও নীতিমালা সংশোধনের কাজ শেষের দিকে। খসড়া নীতিমালাটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই মূলত নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে সভার তারিখ নির্ধারণ হবে। আমরা সভায় অংশ নিতে প্রস্তুত আছি।

কেন সংশোধন করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের নীতিমালা বেশ পুরোনো। সে কারণে যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধন করা হচ্ছে। এছাড়া কিছু বিষয় আছে যেগুলো নির্দিষ্ট করা নেই। সেগুলো নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, উচ্চ ডিগ্রি অর্জন শেষে চাকরি ছাড়লে টাকা ফেরত দেওয়ার বিধান নীতিমালায় আগেও ছিল। তবে খুব একটা কড়াকড়ি ছিল না। এখন আমরা একটু কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি। এখন কেউ চাকরি ছাড়লে উচ্চ ডিগ্রি অর্জনের সময় ব্যয়িত সব টাকা ফেরত দিতে হবে।

বিদেশে গিয়ে ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশে না ফিরলে তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব জানান, কেউ বিদেশে থেকে গেলে সার্ভিস রুলে কিছু বিধান আছে, আমরা সেগুলো অনুসরণ করব। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে চাকরি ছেড়েছেন এমন অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। বর্তমান নীতিমালায় বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশে ফিরে এসে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিতে চাইলে বা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে সব সরকারি টাকা ফেরত দিতে হয়। তবে এটির তেমন কার্যকারিতা নেই বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

ওই খসড়ায় বলা হয়, আগে বিদেশে প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা বৃত্তি শুধু অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সংগ্রহ করে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিত। এখন থেকে এ ধরনের বৃত্তি সংগ্রহ উন্মুক্ত থাকবে। আগে বিদেশে যে বৃত্তির খরচ ওই দেশ কিংবা সংস্থা বহন করত না, সেক্ষেত্রে খরচের টাকা বিভিন্ন চেম্বার, বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন, ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সংগ্রহ করত। এখন থেকে বেসরকারি সংগঠন ও ব্যক্তির পাশাপাশি সরকারি সংস্থার কাছ থেকেও নেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে। ব্যক্তির নামে কোনো বৃত্তির প্রস্তাব এলে তা তার বর্তমান দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে এবং সব খরচ আমন্ত্রণকারী সংস্থা বহন করলে ওই বৃত্তি গ্রহণের সুযোগ ওই কর্মকর্তাকে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করার বিদ্যমান নিয়ম তুলে দেওয়া হচ্ছে।

নীতিমালার খসড়া অনুযায়ী, ওরিয়েনটেশন কোর্স, স্টাডি ট্যুর এবং আট সপ্তাহের কম মেয়াদি বৃত্তির ক্ষেত্রে অবসরের কাছাকাছি কর্মকর্তাদের পাঠাতে হবে। এ ধরনের বৃত্তির ক্ষেত্রে আগে ৫৬ বছর বয়সিদের প্রাধান্য দেওয়া হতো। এখন থেকে ৫৮ বছর বয়সিরা প্রাধান্য পাবেন। ছয় মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের ক্ষেত্রে আগে বিদেশ যেতে বয়সসীমা ছিল ৫২ বছর। নতুন নীতিমালায় তা হবে ৫৪ বছর। ছয় মাসের বেশি সময় চলা প্রশিক্ষণ কোর্স মধ্যমেয়াদি এবং আগে এ ধরনের কোর্সে ৪৫ বছর বয়সি কর্মকর্তারা যেতেন। এখন থেকে ৪৮ বছরের নিচে কেউ যেতে পারবেন না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে চলা কোনো কোর্সে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে। আগে দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে যাওয়ার বসয় ছিল সর্বনিম্ন চল্লিশ বছর। এখন থেকে তা হবে ৪৫ বছর। এর আওতায় তারা এমএস, পিএইচডি, পোস্ট ডক্টোরাল রিসার্স কোর্সে অংশ নিতে পারবেন। তবে বৃত্তি প্রদানকারী দেশ কিংবা সংস্থা যদি প্রার্থীর বয়সসীমা শিথিল করে তা হলে উল্লিখিত শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, বৃত্তি প্রদানকারী সংস্থার সুপারিশের ভিত্তিতে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কোর্সের মেয়াদ বাড়াতে পারবে। তবে কোর্সের বিষয় পরিবর্তনের জন্য দাতা সংস্থার সুপারিশ বৃত্তি বরাদ্দ কমিটির বিবেচনার জন্য পেশ করা হবে। সেক্ষেত্রে কমিটি যৌক্তিক মনে না করলে বিষয় পরিবর্তন করা যাবে না।

খসড়ায় বলা হয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিবর্তে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করা কর্মকর্তা ও শিক্ষার অগ্রগতি তদারকি করবে। বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যাওয়া কর্মকর্তার মুচলেকায় জামিনদারের বিদ্যমান শর্ত তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। বিদ্যমান বিধিমালা থেকে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে বেসামরিক কর্মকর্তাদের জন্য ভ্রমণ ও আরোহিত ফি ছাড়া অন্যান্য ফি আদায় করার যে শর্ত রয়েছে তা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *