শোকজ শুরু বিএনপির পদধারী প্রার্থীদের

শোকজ শুরু বিএনপির পদধারী প্রার্থীদের

রাজনীতি স্লাইড

এপ্রিল ২৪, ২০২৪ ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নেওয়া পদধারী নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ৩৮ নেতার একটি তালিকা করেছে দলটি। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। এজন্য ভোটে যাওয়া নেতাদের প্রথমে শোকজ করা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ মে। দায়িত্বশীল নেতারা জানান, এ ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির অন্তত ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। ১১ জন প্রত্যাহার করেছেন। ভোটে আছেন অন্তত ৩৮ জন। এর মধ্যে ১৮ জন পদধারী নেতা। বাকিরা দলের সাবেক ও বহিষ্কৃত নেতা। তারা আরও জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হলেও মঙ্গলবারও কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলন করে ভোট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটে যাওয়া বিএনপি নেতাদের শোকজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শোকজের চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর (শোকজ) জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। সেজন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাজেই দলের দায়িত্বশীল যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা ভোটে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, ইতঃপূর্বে তাদের দলের শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলতে এবং প্রার্থী না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অনেকে ভোটে যাবেন না বলে আশ্বস্তও করেছেন। তারপরও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৫ এপ্রিল স্থায়ী কমিটির সভার আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির কী করা উচিত-এ নিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সম্ভাব্য প্রার্থী ও স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা-এমন ২৬৮ জনের সঙ্গে কথা বলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই স্থায়ী কমিটির সভায় তাদের মতামত তুলে ধরেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। সেখানে দেখা যায়, ২৫৮ জন নেতা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের পক্ষে মত দেন। বাকি দশজনের মতামতও ছিল মিশ্র। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় স্থায়ী কমিটি।

জানা যায়, নীতিগত কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ইস্যুতে হার্ডলাইনে বিএনপি। এজন্য উপজেলা পরিষদের প্রথম দফার নির্বাচনে যারা দলীয় পদে থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন, তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা কয়েক দফা প্রার্থীদের সঙ্গে কথাও বলেন। জেলার নেতারা দলের নির্দেশনার কথা জানান। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ভোটে অংশ নিলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও প্রার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু সোমবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। সেখানে দেখা যায়, ৪৯ জনের মধ্যে ১১ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।

বিএনপির একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রথম ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সব নেতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা একাধিকবার কথা বলেছেন। যেসব নেতা ভোটে আছেন, তারা নানা অজুহাত দেখান। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাপে তারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু পরে দায়িত্বশীল নেতারা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলার অন্যসব নেতা ওই নেতার ভোটে যাওয়ার পক্ষে নন, এমনকি তার পক্ষে কর্মীরাও নেই। কয়েকজনের বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে, ক্ষমতাসীন দল আর্থিক সুবিধা দিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করেছেন। ঢাকা বিভাগের দুটি উপজেলার উদাহরণ দিয়ে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী একটি জেলার দুটি উপজেলা নির্বাচনে ভোটে যেতে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন বিএনপির স্থানীয় দুই নেতা। বিষয়টি দায়িত্বশীল একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানার পর ওই দুই নেতার সঙ্গে কথা বলে ভোট থেকে বিরত রাখেন।

সোমবার রাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গ ছাড়াও সভায় পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী নয়াপল্টনে বড় পরিসরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগের দিন ৩০ এপ্রিল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে শ্রমিক দল। এছাড়াও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়েও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলেন নেতারা। সমাধানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদক্ষেপ নেবেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।

মন্দিরে আগুন ও দুই শ্রমিককে হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিটি : স্থায়ী কমিটির সভায় বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং পাশের বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণের কাজ করার সময় সহোদর দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা। এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দলের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। পাঁচদিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে এই তদন্ত কমিটি করেছে বিএনপি। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *