শিগগিরই জোটনেতাদের নিয়ে বসবেন প্রধানমন্ত্রী

শিগগিরই জোটনেতাদের নিয়ে বসবেন প্রধানমন্ত্রী

রাজনীতি স্লাইড

মে ১৫, ২০২৪ ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবার ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোটনেত্রী আজ শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা প্রাথমিকভাবে জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে জানিয়েছিলেন। তিনিও জোট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। কিন্তু জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতা দেশের বাইরে যাওয়ায় বৈঠকের তারিখ পিছিয়ে যায়। পরবর্তী তারিখ এখনো চূড়ান্ত না হলেও ওই নেতারা দেশে ফেরার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জোটনেত্রী তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ মে (আজ) ১৪ দলীয় জোটনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জোটের শীর্ষ কয়েকজন নেতা দেশের বাইরে গেছেন। ফলে এই তারিখে আর বৈঠক হচ্ছে না। পরবর্তী তারিখ এখনো চূড়ান্ত না হলেও শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ ছিল, আছে এবং থাকবে।

জানা যায়, সোমবার ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের নয় সদস্যের একটি দল চীনে গেছেন। এতে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ শীর্ষ নেতারা রয়েছেন। ১৮ মে তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তারা ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে জোটের সভা অনুষ্ঠিত হবে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ১৪ দল আদর্শিক জোট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এটি সৃষ্টি হয়েছিল। কেবল সরকারে থাকার জন্যই তো আমরা ১৪ দল গঠন করিনি। কিন্তু হ্যাঁ, দীর্ঘদিন, বিশেষ করে নির্বাচনের পর থেকে ১৪ দলের কোনো সভা-সমাবেশ না হওয়ায় বিভ্রান্তি বেড়েছে। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এ বিভ্রান্তি দূর হবে। ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে আমরা নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনাগুলো আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমি মনে করি, ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা এখনো আছে। কারণ, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চায়।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র পার্টির (একাংশ) সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। তিনি বসতে চেয়েছেন। জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তিনিও বলেছেন আমরা বসব। আশা করি, শিগগিরই জোটের সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন দলগতভাবে সাংগঠনিক কাজগুলো করছি, দল গোছাচ্ছি। জোটনেত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসে জোটগতভাবে কীভাবে কর্মসূচি নেওয়া যায়, সে বিষয়গুলো ঠিক করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে জোটের মধ্যে অন্য যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো দূর হয়ে যাবে বলেও মনে করনে শরিক দলের এই নেতা।

দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ১৪ দলের শরিকদের দূরত্ব বেড়েছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। বিশেষ করে আসন ছাড় নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য দলগুলোর নেতাদের মনোমালিন্য চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। গত নির্বাচনের ১৬টি থেকে এবার মাত্র ছয়টি আসন ছাড়া হয় শরিকদের। এতে ক্ষুব্ধ হন জোটনেতারা। এছাড়া শরিকদের আপত্তি সত্ত্বেও ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ। ফলে ছয়টির মধ্যে মাত্র দুটি আসনে জেতেন শরিক দলের নেতারা। তারা হলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং বগুড়া থেকে জাসদের রেজাউল করিম তানসেন।

বাকি আসনগুলোয় জাসদ সভাপতি হাসনুল হক ইনু, জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মুঞ্জু, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার মতো শীর্ষ নেতারা হেরে যান আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে। এতে জোটের ভেতরে ও বাইরে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। এ নির্বাচনের পরও এককভাবে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ফলে দিনদিন শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। এমতাবস্থায় শরিক দলের নেতারাই কেউ কেউ জোটের অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নে তোলেন এবং শঙ্কার কথা জানান।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, জোটনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের কথা শোনার পাশাপাশি নানা দিকনির্দেশনাও দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামনের দিনে জোটের কর্মসূচি বাড়ানোর তাগাদাও দেবেন তিনি। বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে জোটকে সক্রিয় রাখার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।

এর আগে ২ মে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ১৪ দল অবশ্যই আছে। থাকবে না কেন? তাদের সঙ্গে আমাদের সব সময় যোগাযোগ আছে। দুই-চারজন বিক্ষিপ্তভাবে কী বলেছে, আমি জানি না। আমাদের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সাহেবের ওপর দায়িত্ব দেওয়া আছে। তিনি যোগাযোগটা রাখেন। আমি শিগ্গিরই তাদের সঙ্গে বসব।

এদিকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলীয় জোট আছে। জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, জোট আছে এবং যথাসময়ে আলাপ-আলোচনার জন্য বসবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *