রুটির ঝুড়ি ইউক্রেন এখন ‘মাইনের’ বাগান

রুটির ঝুড়ি ইউক্রেন এখন ‘মাইনের’ বাগান

আন্তর্জাতিক স্লাইড

জুলাই ২৯, ২০২৩ ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ইউরোপের ‘রুটির ঝুড়ি’ ইউক্রেন এখন ‘মাইনের বাগান’। সোনালি গমের হাসিতে ভরে থাকা সূর্যমুখীর দেশ ইউক্রেনের ফসলের মাঠে এখন পদে পদে মৃত্যুফাঁদ। ওয়াশিংটন পোস্ট।

পরাশক্তিধর রাশিয়ার সঙ্গে টানা দেড় বছর টেক্কা দিয়ে চলছে ইউক্রেন। শত্রুর লাগাম টানতে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছে স্থলমাইন। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মাঠের পর মাঠজুড়ে যেন ‘মাইনের বাগান’। অবস্থা এমন যে, সমরবিশেষজ্ঞরা দেশটিকে এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ ‘মাইনের কারখানা’ তকমা দিয়েছেন। ফ্লোরিডা এবং উরুগুয়ের সমান ইউক্রেনের বিশাল আয়তনের ভূখণ্ড এখন মাইনের দখলে।

বিশেষজ্ঞরা বর্তমান এ পরিস্থিতিকে ‘দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করছেন। তাদের মতে, ইউক্রেনের জমিগুলোকে তার পূর্বাবস্থায় (আবাদি যোগ্য) ফিরিয়ে আনতে শত শত বছর সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৬৭ হাজার ০০০ বেশি বর্গমাইলের এলাকা ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসব এলাকা থেকে বিপজ্জনক অস্ত্র সরাতে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের’ প্রয়োজন। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিশ্বব্যাংক অনুমান করছে ইউক্রেনের এই মাইনগুলো সরাতে আগামী ১০ বছরে ৩৭.৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। হ্যালো ট্রাস্ট নামক ল্যান্ড মাইন পরিষ্কারকারী একটি সংস্থা বলছে, ওপেন সোর্স ব্যবহার করে তারা ইউক্রেনে ২৩০০ টিরও বেশি মাইনের সন্ধান পেয়েছে যেখানে ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের প্রয়োজন। এ বিষয়ে মাইনস অ্যাডভাইজরি গ্রুপের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর গ্রেগ ক্রোথার বলেন, ‘গত ৩০ বছরে এ ধরনের মাটিতে পুঁতে রাখা কামান ইউক্রেনে নজিরবিহীন। এমন কখনোই ছিল না।’

মাটির নিচে পুঁতে রাখা এসব মাইনে তটস্থ ইউক্রেনের সাধারণ জনগণ। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়াও মাইনের ব্যবহার বাড়িয়েছে। রাশিয়ার মাইনগুলো এক ধরনের ছোট ‘অ্যান্টিপার্সনেল মাইন’। এ ধরনের মাইনের উপস্থিতি যোদ্ধা বা সাধারণ জনগণ কেউই আন্দাজ করতে পারে না। ভয়াবহ এ বিস্ফোরকগুলো ইতোমধ্যেই ব্যাপক ক্ষতি করেছে। যুদ্ধের পর থেকে মাইন বিস্ফোরিত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৯৮ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে ২২ জন শিশু রয়েছে। এছাড়াও  আহত হয়েছে ৬৩২ জন। বিস্ফোরক অপসারণ করার সময় ভ্লাদিস্লাভ সোবোলভ নামে একজন কর্মী মাইনফিল্ডে কাজ করার সময় তার পা হারিয়েছে। দিমিত্রি মিয়ালকভস্কি নামক একজন চিকিৎসক যুদ্ধ শুরুর থেকেই মাইনে আহত ব্যক্তিদের সেবা দিচ্ছেন।

জাপোরিজঝিয়া অঞ্চলের মাইন বিস্ফোরক রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম মাইনে বিধ্বস্ত পা তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। তাই আমাকে দ্রুত অপারেশনের মাধ্যমে তার পা কেটে ফেলতে হয়েছিল।’ মাইনের আখড়া, খেরসনে, কৃষকরা এ বছরের ফসল রোপণে ভালোভাবে জমিগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে  সাঁজোয়া প্লেট ও ট্র্যাক্টরের আশ্রয় নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *