রাজনীতির মাঠে অনন্য আওয়ামী লীগ

ফিচার

আগস্ট ১, ২০২২ ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির)

উপমহাদেশের রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের যাত্রাপথ একেবারে সহজ ছিল না। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন, সর্ববৃহৎ, ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে আসতে হয়েছে। বলা যায়, দীর্ঘ পথচলার ভেতর দিয়ে উপমহাদেশের রাজনীতির মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

আওয়ামী লীগ একটি গণসংগঠন। অসংখ্য কর্মী সমর্থক দলটির অন্যতম ভিত্তি। এই ভিত্তির উপর নির্ভর করে সংগ্রাম, সাফল্য, ঐতিহ্যের আওয়ামী লীগের সামনে অনেকগুলো অর্জন এক হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠার এ শুভলগ্নে টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতাসীন এ দলটিকে করোনা নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এছাড়াও নানা ধরনের জাতীয় দুর‌্যোগ তো আছেই। বঙ্গবন্ধু ১৯৭০-এর নির্বাচন, ঘূর্ণিঝড় যেভাবে সামাল দিয়েছিলেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও একইভাবে অনেকগুলো ইস্যুকে সামনে নিয়ে একা লড়াই করে যাচ্ছেন। এ যেন পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার লড়াই।

এদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যেটি দেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একক এবং নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা রেখেছে। দেশের বিভিন্ন সংকট ও দুর্যোগে অন্যদলগুলো যখন নানা নাটকীয়তায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় ক্ষেপণ করেছে, আওয়ামী লীগ তখন তার অবস্থানে অটল থেকে জনগণকে সংগঠিত করেছে। অন্যদলগুলো যখন কখনো ধর্মের দোহাই দিয়ে, কখনো সমাজতন্ত্রের দোহাই দিয়ে শুধু বড় বড় বিবৃতি দিয়েছে, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের রক্ত-ঘাম-শ্রমে আন্দোলনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে লক্ষস্থলে। অন্যদলগুলো যখন ইতিহাসের সাক্ষী হওয়া নিয়ে অহংকারে ব্যস্ত, আওয়ামী লীগ তখন নির্মাণ করছে নতুন ইতিহাস।

আওয়ামী লীগের পথচলায় সবচেয়ে বড় অহংকারটির নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি গণমানুষের মন বুঝতে পারতেন। এই বুঝতে পারাটাই আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম করিয়েছে। তবে অনেক সময় বুঝলেও কিছু করার থাকে না। তেমনি একটি প্রেক্ষাপট উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। আওয়ামী লীগের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর জীবন অনেকটা একসূত্রে গাঁথা। পৃথিবীর বুকে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগকে একসুতায় গেঁথেছে।

আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্তের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা কর্মীরা সবসময় রক্ত দিতে অভ্যস্ত। দলের প্রয়োজনে দেশের প্রয়োজনে এরা অতীতে কখনো রক্ত দিতে কুণ্ঠা বোধ করেনি। ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১ যেমন আওয়ামী লীগের কর্মীদের শ্রম ও রক্তের ফসল তেমনি ৭৫- পরবর্তী নানা আন্দোলন সংগ্রামে যখন আওয়ামী লীগকে মুছে দেওয়ার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়েছে তখনো আওয়ামী লীগ কর্মীদের রক্তের স্রোতেই সেই অপচেষ্টাকে প্রতিহত করা হয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই, আজকের আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য নেতা কর্মীর লাশের উপর। আওয়ামী লীগের চলার পথ মসৃণ হয়েছে অসংখ্য কর্মীর শরীর থেকে ঝরা রক্তের দ্বারা। আমি জানি, এ লেখাটি এতোটুকু যিনি পড়েছেন তিনি নিশ্চয় সুবিধাবাদী বা টাউট বাটপারদের উদাহরণ টানবেন। আপনাকে বলি, এতবড় একটি দলে তেমন কিছু লোক থাকবেই। তা বলে ত্যাগীদের অবদানকে অস্বীকার করবেন কীভাবে?

এই যে আওয়ামী লীগ মাঠ থেকে হারিয়ে যায়নি, আবার ঘুরে পথচলা শুরু করেছে এই কৃতিত্ব দলটির কর্মীবাহিনীর। তারা কখনো রাজপথ ছাড়েনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধা শুধুমাত্র দেশকে ভালোবেসে, কোন পার্থিব পাওয়ার আশা মাথায় না রেখে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও পুরো আশির দশক, নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে ও ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অকাতরে প্রাণ দিয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। পৃথিবীতে অন্যকোন দেশে অন্যকোন দলের রাজনৈতিক কর্মীরা শুধুমাত্র দলকে ভালোবেসে কখনো এভাবে প্রাণ দিয়েছে কিনা তা গবেষণার বিষয়।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উপর বিভিন্ন সময়ে প্রায় উনিশ বার হামলা করা হয়। ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায় এসব হামলার উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর জীবননাশ করা। প্রায় প্রতিটা বারই তাকে তার দলের নেতাকর্মীরা আগলে রেখেছিল। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারী চট্টগ্রাম লালদিঘী মাঠে যে হামলা হয়েছিল সে হামলায় সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২৪ জন (মতান্তরে অনেক লাশ তৎকালীন এরশাদ সরকারের পুলিশ গুম করে ফেলেছিল) নিহত হয়েছিল। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নেতাকর্মীরা নিজের প্রাণের বিনিময়ে দলীয় নেত্রীর প্রাণ রক্ষা করেছে। যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের মধ্যে এ বিশ্বাসটুকু ছিল শেখ হাসিনা বেঁচে গেলে আওয়ামী লীগ বাঁচবে আর আওয়ামী লীগ বাঁচলে বেঁচে যাবে বাংলাদেশ! আওয়ামী লীগ গর্ব করতে পারে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শেখ হাসিনার আড়ালে বাংলাদেশকেই দেখে।

এদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থাকলেও আদর্শগত দিক থেকে এদেশে দুটো রাজনৈতিক ধারা আছে। একটি আওয়ামী লীগ অন্যটি এন্টি আওয়ামী লীগ। বিএনপি, জামাত, বাম, ডান, চীনপন্থী, আফগান বা পাকিস্তানপন্থী, অমুক ধারা, তমুক ধারা- দিনশেষে এরা সবাই কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী। সকল এন্টি আওয়ামী লীগারদের সাথে লড়াই করেই আওয়ামী লীগকে মাঠে টিকে থাকতে হয়। নানারকম বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করেও আওয়ামী লীগ এখনো লাখ লাখ কর্মী ও কোটি কোটি সমর্থকের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে তারা ইতিহাসের অংশ শুধু নয়, নতুন ইতিহাসের নির্মাতাও। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। আওয়ামী লীগের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *