মোবাইল হ্যাকিং বুঝবেন কীভাবে, প্রতিরোধে যা করবেন

মোবাইল হ্যাকিং বুঝবেন কীভাবে, প্রতিরোধে যা করবেন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্পেশাল

ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩ ১১:০৮ পূর্বাহ্ণ

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোবাইল ফোন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ দৈনন্দিন কার্যাবলিতে প্রতিটি ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। তবে একদিকে এ প্রযুক্তি মানুষের জীবন-যাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সহজ করেছে, অন্যদিকে ফোন হ্যাকিংয়ের কবলে পড়ে অনেকেই সর্বস্ব হারিয়েছেন।

কারণ হচ্ছে— ফোন হ্যাকড হলে, ফোনে থাকা সব তথ্য হ্যাকারের কাছে চলে যায়। ফোনের মালিক কোথায় যাচ্ছে, কী বলছে, কার সঙ্গে কথা বলছে। এমনকি কল না করেও ফোন পাশে রেখে কারও সঙ্গে কথা বললেও তারা ভয়েস ট্র্যাক করতে পারবে, ফোনের ফ্রন্ট ও ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে সব কিছু দেখতে পারবে। তাই স্মার্টফোন ব্যবহারের পাশাপাশি ফোন হ্যাকিং সমন্ধে সচেতন হওয়া জরুরি।

ফোনটি হ্যাকড হলে যেভাবে বুঝবেন— 

১. হঠাৎ ফোনের চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া: গত কয়েক দিনে আপনি কি লক্ষ্য করছেন আপনার ফোন অস্বাভাবিকভাবে ব্যাটারি চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে? এ অবস্থায় আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, আপনার ফোন ব্যাটারি হয়তো দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু এমনটা নাও হতে পারে।  তাই প্রথমে আপনাকে যেটা করতে হবে, ফোনের সেটিংসে গিয়ে ব্যাটারি ইউজ অপশন থেকে কোন কোন অ্যাপস বেশি ব্যাটারির চার্জ খরচ করছে তা শনাক্ত  করা  এবং অটো অপটিমাইজ অপশনগুলো চালু করা।  এগুলো সেটিং সঠিক থাকার পরও যদি একই অবস্থা বিরাজমান থাকে, তথা ব্যাটারির চার্জ অস্বাভাবিকভাবে খরচ হয়, তা হলে ফোন হ্যাকিংয়ের প্রাথমিক লক্ষণ বলে ধরে নিতে হবে।

২. ফোনের অস্বাভাবিক কার্যক্রম: ফোন হঠাৎ স্লো হয়ে যাওয়া, অটোমেটিক পপ আপ হয়, কোনো কোনো অ্যাপ্লিকেশন হঠাৎ ওপেন হয়ে যাওয়া বা ইন্টারনেট ডাটা অত্যধিক খরচ হওয়া ইত্যাদি লক্ষ্য করলে বুঝতে হবে আপনার ফোনটি হ্যাকড হয়েছে।

৩. ফোন মাত্রারিক্ত গরম হওয়া: আপনার ফোনটি যদি হ্যাকাররা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে তা হলে ফোনের RAM ও রোমের ওপর মাত্রারিক্ত চাপ পড়ে। ফলে ফোন অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে যায়। তাই এমন পরিলক্ষিত হলে টেকনিশিয়ান দিয়ে আপনার ফোন ব্যাটারির কার্যকারিতা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।

৪. ফোনের ভয়েস কোয়ালিটি: হঠাৎ যদি দেখেন ফোনের ভয়েস কোয়ালিটি খারাপ পাচ্ছেন বা ভয়েস ইকো হচ্ছে, তখন প্রথমে নেটওয়ার্ক চেক করে নিতে হবে। নেটওয়ার্ক ঠিক থাকা সত্ত্বেও বা শুধু আপনার ফোন এমনটি হলে ফোন হ্যাকডের লক্ষণ বলে ধরে নিতে হবে।

৫. বেশি বেশি অপরিচিত নম্বর থেকে কল বা টেক্সট আসা: ইদানীং আপনার ফোন কি বেশি বেশি অপরিচিত ও বিদেশি নম্বর থেকে কল বা টেক্সট আসে? এবং ফোন রিসিভ করলে কথা বলে না বা টেক্সটগুলো খুব তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ না? তা হলে আপনার ফোন হ্যাকড হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করতে পারেন।

৬.  গ্যালারিতে অজানা ফটো সেভড হওয়া: আপনি এমন ফটো আগে দেখেননি বা কোনো ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডাউনলোড করেননি এমন ফটো আপনার গ্যালারি থেকে দেখলে আপনাকে ফোন হ্যাকিংয়ের বিষয়ে সাবধান হতে হবে।

ফোন হ্যাকিং থেকে বাঁচতে যা করবেন

১. মালিসিয়াস অ্যাপ্লিকেশন এড়িয়ে চলা: ফোন হ্যাকিং থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে আমি প্রথমেই যেটি বলব— অবশ্যই মালিসিয়াস অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার এড়িয়ে চলতে হবে।  অনলাইন প্লাটফরম থেকে আমরা যখন গেম ডাউনলোড করি বা যারা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত, তারা পর্নোগ্রাফি ভিডিও ডাউনলোড করার সময় কখনো কখনো দেখায় যে এই ভিডিও ডাউনলোড করার জন্য এই অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার ডিভাইসে ইনস্টল করুন।  এবং এটাতে ক্লিক করা হলে ডিভাইসে একটি অটোমেটেড ফাইল জমা হয়।  এসব ফাইল থেকে এবং অ্যাপ্লিকেশন থেকে সদা সতর্ক থাকতে হবে।  এসব ফাইলের মাধ্যমে হ্যাকাররা স্পাইওয়ার, ট্রোজান হর্স বা রাট প্রবেশ করিয়ে আপনার ডিভাইস তথা ফোনের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে।

২. ফিশিং সাইট এড়িয়ে চলা: আপনার ফোনে যে কোনো ধরনের টেক্সট এলে তাতে যদি কোনো লিংক সংযুক্ত থাকে এবং তা বিশ্বস্ত সাইট থেকে না আসে, তা হলে এ ধরনের লিংক অবশ্যই ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমনকি হ্যাকাররা মাঝে মাঝে এ ধরনের এসএমএস ও এমএমএস ব্যবহার করে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে ফোনে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে থাকে।  তাই ফিশিং সাইট থেকে সাবধান থাকতে হবে।

৩. পাবলিক ওয়াইফাই এড়িয়ে চলা: পাবলিক ওয়াইফাই বব্যহার করার অর্থ হলো— বিড়ালকে মাছের পাহারার দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর মতো। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করলে আপনার ফোনের সব তথ্য হ্যাকড হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।  নিরুপায় হয়ে ব্যবহার করলে খুব সীমিত সময়ের জন্য করতে হবে।

৪.  মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন: বিশস্ত তথা প্লে-স্টোর ছাড়া বিশস্ত নয় এমন সাইট থেকে এপপ্স ডাউনলোড করা বা ইনস্টল করা যাবে না।   প্লে-স্টোরের অ্যাপসের ক্ষেত্রে পারমিশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে “ডোন্ট আলাও ” বা “আস্ক এভরি টাইম” অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন।

৫. বিশস্ত ব্রাউজার ব্যবহার করা: একটি ফোনে একাধিক ব্রাউজার ব্যবহার না করাই ভালো। এবং বিশ্বস্ত না হলে সেই ব্রাউজার ব্যবহার না করা। কারণ কিছু কিছু ব্রাউসার আপনার তথ্য চুরি করে যেমন ইউ সি ব্রাউজার। অ্যান্ড্রোয়েড ফোনের জন্য গুগল ক্রোম হতে পারে নিরাপদ ব্রাউজার। কারণ গুগল ক্রোম অ্যান্ড্রোয়েডের সঙ্গে সম্পর্কিত।

৫. অটো লগইন মোড অন না করা: ব্রাউজারে অটো লগইন মোড অন না করাই উত্তম কারণ, এটি তথ্য চুরির ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া আপনার ডিভাইসটি কোনোভাবে হ্যাকড হয়ে গেলে হ্যাকারদের কাছে সব লগইন ডিটেলস চলে যাবে এবং মুহূর্তেই আপনার সব তথ্য তারা হাতিয়ে নেবে। সঙ্গে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়ে যেতে পারে। তাই অটো লগইন মোড থেকে সাবধান থাকা ভালো।

লেখক: নাসিম রানা মাসুদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, টেকফ্লিক্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *