মারকাযুস সুন্নাহ মাদরাসায় নতুন শিক্ষাবর্ষ উদ্বোধন ও দোয়া মাহফিল

দেশজুড়ে

মে ২১, ২০২২ ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ

নুরউদ্দিন নূরী

খিলগাঁও থানাধীন দক্ষিণ বনশ্রী কাজিবাড়ি সংলগ্ন উত্তর নন্দীপাড়া রসূলবাগে অবস্থিত মারকাযুস সুন্নাহ মাদরাসার ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক ২০২২-২০২৩ইং শিক্ষাবর্ষ উদ্বোধন এবং বোর্ড পরীক্ষায় গড়ে ৯০+ নম্বরপ্রাপ্ত ছাত্রদের পুরষ্কার প্রদান উপলক্ষে গত ২০ মে, শুক্রবার মাগরিবের পর মাদরাসা মিলনায়তনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

উক্ত মাহফিলে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সাইয়েদ আসআদ মাদানী রহ. এর শীর্ষস্থানীয় খলীফা, বেফাকুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া (বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা) শিক্ষাবোর্ডের সম্মানিত মহাসচিব, শায়খুল হাদীস হযরতুল আল্লাম, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার মুফতী মুহাম্মাদ আলী দা.বা.। বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক, কলামিস্ট, লেখক ও গবেষক, দানবীর, সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির)।

প্রধান মেহমান তার বক্তব্যে আত্মসংযম ও আত্মসংশোধনের গুরুত্ব প্রদান করে বলেন, আত্মসংশোধন ব্যতিরেকে বান্দা তার কাক্সিক্ষত মাকামে পৌঁছতে পারে না। আত্মসংশোধিত হৃদয়ে ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ আহরিত হয়। মারেফাতে রব্বানী ও ইশকে ইলাহীর নূর দিয়ে আলোকিত কলব মানুষকে সীরতে মোস্তাকীমে চলতে উদ্বুদ্ধ করে। কলব যদি নফস ও শয়তানের ধোঁকায় কলুষিত হয়, তখন গুনাহ করতে ভালো লাগে। শয়তানী ওসওয়াসা মানুষকে প্রতিনিয়ত গুনাহের মাধ্যমে জাহান্নামের পথে ধাবিত করে।

শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেকে বাঁচাতে একজন প্রকৃত কামেল শায়খের সাথে ইসলাহী ও বায়আতের সম্পর্ক থাকা একান্ত জরুরি।

শায়খে কামেল তার সাথে সম্পর্কিত আল্লাহর বান্দাদেরকে আমল বাতলানোর মাধ্যমে কলব পরিশুদ্ধ করতে সচেষ্ট থাকেন। ফলে রিয়াযত মোজাহাদা ও সাধনালব্ধ পরিচর্যায় পরিশোধিত কলবে ইশকে ইলাহী ও ইশকে রাসূলের একটি মজবুত স্তম্ভ তৈরি হয়। তাতে নফস শুদ্ধতায় একধাপ এগিয়ে বান্দা সরল পথে চলতে সক্ষম হয়।

তিনি মাদরাসার সাথে সম্পৃক্ত থাকার গুরুত্ব দিয়ে বলেন, এখানে যারা উপস্থিত আছি, সবাই তিন প্রকারের যেকোনো এক প্রকার। এক. ছাত্র, দুই. শিক্ষক ও তিন. ছাত্র-শিক্ষক নন, এমন। সুতরাং যারা ছাত্র, তারা তো পড়বে, যারা শিক্ষক, তারা তো পড়াবেন। আর যারা ছাত্রও নন, শিক্ষকও নন, তারা অবশ্যই মাদরাসার খেদমতে নিজেদের সংযুক্ত রাখার একান্ত চেষ্টা করবেন।
বিশেষ মেহমান অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষ উদ্বোধন এবং বোর্ড পরীক্ষায় গড়ে ৯০+ নম্বরপ্রাপ্ত ছাত্রদের পুরষ্কার প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

তিনি বলেন, অত্র মাদরাসাটি একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমি এখানের বিভিন্ন প্রোগ্রামে আসার চেষ্টা করি। মাদরাসার যাবতীয় আর্থিক সহযোগিতা করতে সচেষ্ট থাকি। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতী নুরউদ্দিন নূরী আমার খুব পছন্দের মানুষ। মাদরাসার কোনো কিছু লাগলে আমার কাছ থেকে নিতে বলি। কিন্তু উনি চান না। আমি আগ বাড়িয়ে সবসময় ওনাকে সহযোগিতা করে থাকি। উনি মাদরাসার জন্য খুবই কষ্ট করেন। আমি ওনাকে সর্বদা উৎসাহ দিয়ে থাকি। আপনারাও ওনার পাশে থেকে ওনাকে সহযোগিতা করবেন এবং উৎসাহিত করবেন।

তিনি আরও বলেন, মাদরাসার আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল। আমি এখানে এসে শুনেছি, আর্থিক সংকটের কারণে ওনারা বাবুর্চি রাখতে পারেননি। শিক্ষক ও ছাত্ররা নিজেরা রান্না করেন। এটা শুনে আমার খুব কষ্ট লেগেছে। একজন বাবুর্চির বেতন আর কত? সামান্য কয়টা টাকা মাত্র। অথচ আমাদের সমাজে বিত্তবান লোকের অভাব নেই। অভাব শুধু মানসিকতার। আমরা কত জায়গায় অনর্থক টাকা পয়সা খরচ করে থাকি। আপনারা অবশ্যই এমন একটি সুন্দর দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে সর্বদা সহযোগিতা করবেন। সামর্থ্যবানরা আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসলে দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো সাবলীল ভাবে চলতে পারে। মাদরাসার আরো নানাবিধ প্রয়োজন আছে। প্রতি মাসে চালের প্রয়োজন হয়। আমি পরিচালক সাহেবকে বলেছি, চাল লাগলে আমাকে জানাবেন। আর প্রতি মাসে একজন বাবুর্চির বেতন আমি দিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ এবং এটা এই মাস থেকে কার্যকর।

মনিরুজ্জামান বলেন, আপনারা নিজেরা আমল করবেন। লেখাপড়া করবেন। দ্বীনি প্রতিষ্ঠানগুলো সার্বিক সহযোগিতা করবেন। আপনার আমার সামান্য সহযোগিতায় অনেক অসহায় গরীব ছাত্ররা লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। ইমাম খতীব হয়ে সমাজে দ্বীনের খেদমত করবে। মাদরাসার শিক্ষক হয়ে ছাত্রদেরকে পড়াবে। ওয়ায়েজ হয়ে দেশ বিদেশে ওয়াজ মাহফিল করবে। এগুলোর সওয়াব তারা যেভাবে পাবে, আমরা সহযোগিতা করার কারণে আমরাও পাবো।

মাদরাসাটি ভাড়া বাসাতে চলছে। পুষ্পধারা প্রোপার্টিজ লিমিটেডে মাদরাসার জন্য পাঁচ কাঠা জমির বায়না করা হয়েছে।
প্রধান মেহমানের বরকতময় হাতে পুষ্পধারা প্রোপার্টিজ লিমিটেড এর এমডি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামানের কাছে জমির বুকিং মানি হস্তান্তর করা হয়েছে।

পরিশেষে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতী নুরউদ্দিন নূরী সকলের কাছে মাদরাসার উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য দুআ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

মাহফিলে শাফায়াত কবীর, মোহাম্মদ মনজুরুল আহসান, রাসেল মিয়া, স্বপন, মুশফিক, শফিকুল আলম বাবু, মুরাদ হাসান, রাহাত বিন মাহবুব, মোস্তফা, শফিকুল ইসলাম বাবু, সপ্তর্ষি ৯৩ এর এনায়েত করীম সজল, নয়ন সহ স্থানীয় মুরব্বি ও অনেক গুণীজন উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *