শাহিন খন্দকার, মাগুরা
প্রথমে পরিচয় আর নগদ অর্থে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লেনদেন, তারপর নগদ ও বাকি উভয় দেনাপাওনার হিসাব, এরপর কৌশলে নির্ধারিত জায়গায় বাকি টাকা পরিশোধের কথা বলে ডেকে নিয়ে মারধর, ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইলে অশ্লীল ছবি ধারণ, নির্যাতন ও চাঁদাবাজি করে আসছিলো মাগুরার শ্রীপুরের একটি প্রতারণা চক্র। প্রথম পরিচয় ও কেনাকাটার কাজে দুজন মহিলাকে ব্যবহার করলেও নির্যাতনের সময় যোগ হোন আরো তিনজন পুরুষ। কখনো যুবলীগ নেতার বাসায় আবার কখনো প্রতারক মহিলাদের নিজ বাড়িতেই বছরের পর বছর ধরে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছিলো। সম্প্রতি মাগুরা জেলা ডিবি পুলিশের অভিযানে প্রতারণা চক্রের দুই নারী সদস্য গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে এসব চালঞ্চকর তথ্য।
প্রতারক চক্রের দুই মহিলা সদস্যকে আটক করা হলেও মূল হোতা যুবলীগ নেতাসহ আরো দুই আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এতে নানান ভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে বলে জানান অভিযোগকারিরা। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এক এক করে বেরিয়ে আসছে প্রতারনার শিকার হওয়া অভিযোগ। ইতিমধ্যেই ৭-৮ জন অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকাজুড়ে মানববন্ধন করার ডাক দিয়েছেন এলাকাবাসী।
অভিযোগকারী ফার্নিচার ব্যবসায়ী মোঃ উজ্জল মোল্যা বলেন, সাচিলাপুর বাজারে আমার লামিয়া ফার্নিচার নামক একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাচিলাপুর গ্রামের মোঃ লিজা খাতুন, জোসনা খাতুন ও সখিনা খাতুন আমার দোকানে সাংসারিক আসবাবপত্র কিনতে প্রায়ই আসতো। নিয়মিত বেচাকেনা করায় এক পর্যায়ে বাকিতে লেনদেন ও করা হয়। সেই সুবাদে তাদের এক নিকট আত্মীয়ের জন্য বেশ কিছু ফার্ণিচারপত্র লাগবে বলে তার আত্মীয়ের বাড়ীতে যেতে বলে এবং তার দেখানো ডিজাইনের ভিত্তিতে ফার্ণিচার তৈরি করে দিতে হবে জানিয়ে বিভিন্ন কৌশলে আমাকে নিয়ে যায়। মোটরসাইকেল যোগে মাগুরা সদর থানাধীন কামারপাড়া বাজার মোড়ে পৌঁছালে লিজা আমাকে তার আত্মীয়ের বাসার কথা বলে মালন্দ গ্রামে নিয়ে যায়। পরে ঘরে ফার্নিচার দেখতে গেলে আমাকে আটকে রেখে আমাকে হঠাৎ মারধর করতে থাকে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই জোসনা, সখিনা খাতুন, যুবলীগ নেতা আছু বিশ্বাস, ডলার, আইয়ুব হোসেন ঘরের মধ্যে ঢুকে আমাকে বেধড়কভাবে মারপিট শুরু করে, আমার পরিহিত কাপড় চোপড় খুলে নেয়। হত্যার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ছবি বা ভিডিও ধারণ করে। ছবি নেটে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নগদ ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। এত টাকা আমার নেই জানালে পুনরায় আমাকে মারধর করে, আমার পরিহিত প্যান্টের পকেটে থাকা ব্যবসার নগদ ৩১ হাজার টাকা নিয়ে নেয় এবং বাকি টাকা মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে আনার জন্য বলে। নির্যাতনের স্বীকার হয়ে প্রাণের ভয়ে আমি বাধ্য হয়ে আমার পরিচিত একজনের কাছ থেকে আমার বিকাশে নগদ ১০ হাজার টাকা আনলে তারা আমার মোবাইল ফোন ও বিকাশের পিন নম্বর নিয়ে তাদের বিকাশ একাউন্টে ক্যাশ আউট করে নেয়। আসামীরা আরো টাকা দাবী করিলে আমি আর কোন টাকা আনতে পারবো না বলিলে তারা আমার ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি কেড়ে নিয়ে রাত অনুমান ০৯ টায় আমাকে ছেড়ে দেয় এবং এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলিলে মোবাইল ফোনে তোলা ছবি ও ভিডিও লোক সমাজে প্রচার করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আসামীরা নিরীহ মানুষ জনের সাথে কৌশলে সখ্যতা গড়ে তোলে এই অপকর্ম করে আসছে।
কসমেটিক দোকানী ফয়সাল আহম্মেদ অভিযোগ করেন, লিজা প্রথমে বেশ কিছুদিন যাবত দোকান থেকে মালামাল নগদ ও বাকিতে ক্রয় করে বিশ্বাস অর্জন করে নেয়। এক সময় বাকির পরিমাণ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেলে টাকা দেবার জন্য বললে কিছুদিন আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। হঠাৎ একদিন আমাকে ফোন দিয়ে জানায় আপনার টাকা পরিশোধ করার জন্য একটি এনজিও থেকে লোন/কিস্তি তোলার জন্য ৩০ হাজার টাকা নেয়। এরপর একদিন ফোন দিয়ে টাকা দিবে বলে তার সাচিলাপুরের বাড়িতে কৌশলে সন্ধ্যার দিকে ডেকে নিয়ে যায়।
বাড়িতে যাবার পর পরিকল্পিত ভাবে আমাকে আটকে ফেলে একটি বদ্ধ ঘরে। সেখানে আমাকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি ও ভয় ভীতি দেখিয়ে আমার নগ্ন ছবি ধারন করে সেই ছবি ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। দীর্ঘ সময় আটকে রাখার পর আমার বন্ধু ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এসময় আমার গলায় থানা স্বর্ণের চেইন ছিড়ে নিয়ে নেয়।এসবের সাথে আরো যুক্ত ছিলো সাচিলাপুর গ্রামের মৃত নুরল হোসেনের ছেলে আইয়ুব হোসেন ও তার স্ত্রী মোছাঃ সখিনা
খাতুন।
এরকম প্রায় ১০-১৫ জনের কাছ থেকে তারা একই কৌশলে মুক্তিপণ আদায় করেছেন। সকলেই মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে মাগুরা সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাবার পর অভিযুক্ত দুই জন মহিলাকে সদস্যকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।