মজার ইশকুল: পথ শিশুদের স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার

দেশজুড়ে ফিচার স্লাইড

মার্চ ২৮, ২০২৩ ৫:৪৩ অপরাহ্ণ

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম:

বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তথা পথ শিশুদেরকে সামনে এগিয়ে নিতে কাজ করছে মজার ইশকুল। তারই ধারাবাহিকতায় প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মজার ইশকুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে পথ শিশুরা। ১১ বছর যাবৎ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে মজার ইশকুল।

ঢাকা শহরের মধ্যে ছয়টি জায়গায় মজার ইশকুলের শাখা রয়েছে। শাখাগুলো হলো: সদরঘাট, এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন, শাহবাগ, ধানমন্ডী, তেঁজগাও ও কমলাপুর।

মজার ইশকুলের সদরঘাট শাখার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, সদরঘাট শাখায় মোট ১৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। (১০-১৫) জন শিক্ষক তাদের শিক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। বিভিন্ন কলেজ, ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্ররা শিশুদেরকে বিনামূল্যে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এখানকার প্রতিটি শিশু পথশিশু। বিভিন্ন কারণে তারা ঘর ছাড়া হয়েছে। সদরঘাটের টার্মিনাল তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল। প্রতি শনিবার বিকাল (৩-৫) পর্যন্ত শিশুদেরকে পড়ানো হয়। যারা শিক্ষা দিচ্ছেন তারা সবাই স্বেচ্ছাসেবী। এখানে তাদেরকে কোন অর্থ দেওয়া হয় না।

মজার ইশকুলের ক্লাশের শুরুতে শিশুদেরকে শরীরচর্চা, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং সবাই মিলে শপথ পাঠ করানো হয়। বিভিন্ন দিবসে শিশুদের মাঝে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। একটি শিশুও যেন তার অধিকার বঞ্চিত না হয় এবং একটি শিশুও যেন তার মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য ২০১৩ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে মজার ইশকুল।

মজার ইশকুল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে মজার ইশকুলের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আরিয়ান আরিফ বলেন, আমার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই ইশকুলের যাত্রা শুরু। এখনো মনে পড়ে ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারী ফেসবুকে পথশিশুদের জন্য একটি ইশকুলের কথা বলেছিলাম। স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম শাহবাগে শিক্ষাবঞ্চিত অনেক পথশিশু ভিক্ষা কিংবা ফুল বিক্রি করে। আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ বিকেলে অবসর থাকি। তাই বিকেলে আমরা পথ শিশুদের পড়াতে পাড়ি। তখন থেকেই মজার ইশকুলের পথযাত্রা শুরু। তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে আমরা ১৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মজার ইশকুল শুরু করেছিলাম। এখন মজার ইশকুলে ২১০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। একটা প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। যা শুরুতে আমাদের ছিলো না। এখন অবশ্য বিভিন্ন সংস্থা আমাদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছে। যা শিশুদের খাবারের জন্য ব্যবহার করা হয়।

সরেজমিনে সদরঘাট শাখার কয়েকজন শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কেউ বোতল কুড়ায়, কেউ চায়ের দোকানে কাজ করে আবার কেউ রাস্তা ঝাড় দেয়। তারা বলে আমাদের আগে পেটে খাবার জুটতো না। এখন ভালো খাবার ফ্রিতে পাচ্ছি আবার আমাদের বিনামূল্যে পড়ানো হচ্ছে। তাদের সবার সুন্দর স্বপ্ন আছে, তারা ভালো কিছু করতে চায়। তারা বলে আমরা যদি এমন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকি তাহলে আমরাও ডাক্তার, উকিল হতে পারবো। স্বপ্ন নিয়েই আমরা বেঁচে আছি। মজার ইশকুল আমাদের স্বপ্নের ইশকুল।

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষার্থী গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *