ভোটের আগে রাজপথ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ

ভোটের আগে রাজপথ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ

রাজনীতি স্লাইড

নভেম্বর ৩, ২০২৩ ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

ভোটের আগে আর রাজপথ ছাড়বে না আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ বিরোধীদের হরতাল-অবরোধসহ সব কর্মসূচির দিনে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসনীরাও। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের নির্বাচন পর্যন্ত চাঙা রাখবে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে সামনের দিনগুলোয় জোট শরিকদেরও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সক্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সমমনাদেরও পাশে চায় আওয়ামী লীগ। আলাদা কর্মসূচি নিয়ে তারাও সরব হবে। তবে বিদেশি চাপ ও বিতর্ক এড়াতে আগের মতোই বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলতে নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আন্দোলন মোকাবিলার পাশাপাশি নির্বাচনি প্রস্তুতিও এগিয়ে নেবে দলটি। নির্বাচনি জনসংযোগ, প্রার্থী বাছাই, ইশতেহার প্রণয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো চালিয়ে যাবে দলটি। একই সঙ্গে বর্তমান সরকারের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরা এবং বিরোধী পক্ষের গুজব প্রতিরোধের প্রস্তুতি জোরালো করছে ক্ষমতাসীনরা। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এর বিরুদ্ধে ভোটের আগ পর্যন্ত তারা নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন। যত বাধা কিংবা চ্যালেঞ্জ আসুক না কেন, তা প্রতিহত করা হবে এবং নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বিএনপির কর্মসূচি ধীরে ধীরে রঙিন বেলুনের মতো চুপসে যাবে। কারণ, সঙ্গে জনগণ ও জনসমর্থন নেই। তাদের এসব কর্মসূচি জনগণ মানে না। তিনি আরও বলেন, আমরা রাজপথে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমাদের লোকবল, কর্মী, সমর্থক দিনদিন আরও বাড়ছে। রাজপথ আমাদের দখলেই থাকবে। আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি করতে দেব না। কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সব সময় প্রস্তুত আছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করাই তাদের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য সামনে রেখে তারা আবারও তাদের পুরোনো রূপে ফিরে গেছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। কিন্তু তারা ২০১৩, ’১৪ বা ’১৫ সালের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারবে না। জনগণই এগুলো প্রতিহত করবে। আওয়ামী লীগ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে।

গত বছরের শেষের দিক থেকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিএনপি। তাদের সব কর্মসূচির দিন নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগও। পাড়া-মহল্লা এবং প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করে বিএনপি। এদিন আওয়ামী লীগও রাজধানীতে পালটা মহাসমাবেশ করে। মহসমাবেশের দিনের ঘটনার পর রোববার সারা দেশে হরতাল ডাকে বিএনপি। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এরপর বিএনপির তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দিনও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথ নিজেদের দখলে রেখেছিল ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে চলে গেছে। রোববার ও সোমবার ফের টানা অবরোধ ডেকেছে দলটি। এ মাসের মাঝামাঝিতে তফশিল ঘোষণা করা হবে। এরপরেই জাতীয় নির্বাচন। ফলে এখন আর কোনোভাবেই রাজপথের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া করতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। ফলে সামনের দিনের প্রতিটি কর্মসূচির দিনেও নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এগুলো তাদের পালটাপালটি কর্মসূচি নয়। আন্দোলন বা কর্মসূচির নামে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক পাহারায় থাকেন তারা।

এদিকে এতদিন রাজপথের কর্মসূচিতে খুব একটা সক্রিয় ছিল না ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। দিবসভিত্তিক নানা কর্মসূচি পালন করলেও বিএনপির আন্দোলন একাই মোকাবিলা করেছে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠন। তবে এবার শরিকদের রাজপথের কর্মসূচিতে আরও সক্রিয় করতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ১৪ দল আদর্শিক জোট। তাদের ঐক্য অটুট আছে। ভবিষ্যতে জোটের শরিকদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে।

এছাড়া ভোটের আগে আওয়ামী লীগকে বেগ পোহাতে হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউটিউব মোকাবিলায়ও। প্রতিনিয়ত ‘গুজব ও প্রোপাগান্ডা’ মোকাবিলায় দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক কমিটি এবং দলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইকে দিনরাত সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এ বিষয়ে দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর বলেন, গুজব প্রতিরোধে তাদের কাজ অবিরাম চলছে।

রাজধানীতে আ.লীগের দিনভর শোডাউন : বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও মাঠে সরব ছিলেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ‘বিশৃঙ্খলা রোধে’ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর প্রবেশপথসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড়, অলিগলিতে সকাল থেকে অবস্থান ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। পাশাপাশি মিছিল-সমাবেশও করেন তারা। প্রথম দুদিনের মতো তৃতীয় দিনও এসব মিছিল-সমাবেশে লাঠিসোঁটা হাতে শোডাউন করতে দেখা গেছে তাদের।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, গোলাম সারোয়ার কবির, দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রমুখ। তৃতীয় দিনেও অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। উত্তরার আজমপুর মোড়ে, গাবতলী, পল্লবী, বাড্ডা, মিরপুর ও খিলক্ষেতে বেশকিছু শান্তি সমাবেশ ও মিছিলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি।

এছাড়া ঢাকা-১৮ আসনের এমপি মোহাম্মদ হাবিব হাসানের নেতৃত্বে বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে নগরের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সকাল থেকে সংগঠনের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আওয়ামী যুবলীগ। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ, তাজউদ্দিন আহমেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল সাইফুল সোহাগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাঈনুদ্দিন রানা, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক লীগও। সংগঠনের সভাপতি গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক একেএম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুলসহ যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা-৫ আসনের সংসদ-সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী মোড়ে অবস্থান নেন নেতাকর্র্মীরা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের নেতৃত্বে রাজধানীর প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী ও কাজলা এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। হারুনর রশীদ মুন্নার নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী শেখ রাসেল পার্কের সামনে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড চৌরাস্তার মোড়ে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদের নেতৃত্বে ঢাকা-৮ নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সমাবেশ হয়। ঢাকা-৪ নির্বাচনি এলাকায় সাবেক সংসদ-সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমের নেতৃত্বে জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজার সামনে অবস্থান নেন কদমতলী ও শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *