বিবিসি

ভারত থেকে অনেকে ইসরায়েলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চায়: বিবিসি

আন্তর্জাতিক স্লাইড

অক্টোবর ১৭, ২০২৩ ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ

ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত নওর গিলন বলেছেন, বহু ভারতীয় তাদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন এবং এর জন্য তিনি আপ্লুত।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এও উল্লেখ করেন যে, হামাসের সঙ্গে তার দেশের চলমান যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বহু ভারতীয় ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

তার মতে, এত সংখ্যক ভারতীয় যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়েছেন যা দিয়ে আরও একটা বাহিনীই বানিয়ে ফেলা যায়।

কিন্তু এত সংখ্যক ভারতীয় কেন যুদ্ধে যেতে চাইছেন বা ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন?

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাতকারে নওর গিলন বলেছেন, আমার কাছে এটা খুবই আশাপ্রদ ঘটনা, খুবই আবেগের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর (নরেন্দ্র মোদি) কাছ থেকে আমরা যে মাত্রার সমর্থন পেয়েছি, সেই শনিবার যখন পুরো চিত্রটাই পরিষ্কার হয় নি। তিনি বিশ্বের প্রথম নেতাদের মধ্যে একজন, যারা খুব স্পষ্ট ভাষায় নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছিলেন। এটা আমরা কখনই ভুলব না।

ভারতের মন্ত্রী, বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও তিনি সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত।

এই সাক্ষাতকারেই তিনি বলেছেন, এটা ছবির একটা দিক। দূতাবাসের (ইসরাইলি দূতাবাস) সামাজিক মাধ্যমগুলো দেখুন। খুবই আশ্চর্যজনক। সবাই আমাকে বলছে যে আমি স্বেচ্ছাসেবক হতে চাই এবং আমি ইসরাইলের পক্ষে লড়াই করতে চাই- এই শক্তিশালী সমর্থন নজিরবিহীন।

গিলন বলেন, আমি স্বেচ্ছাসেবকদের (ভারতীয়দের) সঙ্গে আরেকটি আইডিএফ (ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) গঠন করতে পারি।

শেষের বাক্যটি রাষ্ট্রদূত আক্ষরিক অর্থে বলেন নি হয়ত। কিন্তু ইসরাইলের ওপরে হামাসের হামলার পর থেকেই অনেক ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী পোস্ট করছেন যে তারা ইসরাইলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চান।

ভারতে ইসরাইল দূতাবাসের এক্স-হ্যান্ডেলকে ট্যাগ করে যারা ইসরাইলকে সমর্থন করছেন, তার থেকে কিছু আবার রাষ্ট্রদূতে এক্স হ্যান্ডেলে রিপোস্ট করা হচ্ছে, ধন্যবাদও জানানো হচ্ছে।

কিছু সামাজিক মাধ্যমে আবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখতে স্টেডিয়ামে ইসরাইলের পতাকা তুলে ধরে তাদের প্রতি সমর্থনের ডাকও দিচ্ছেন। বিশ্বকাপের মাঠ থেকে এরকম কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও করা হয়েছে।

এসব সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অন্যান্য পোস্ট দেখলে আন্দাজ পাওয়া যায় যে এদের একটা বড় অংশই হিন্দুত্ববাদী এবং মুসলিম-বিরোধী।

সেকারণেই কি হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে চাইছেন তারা?

যেমন হামাসের হামলার পরেই যার পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল, নিজেকে ‘সনাতনী’ বলে দাবি করা সেই চন্দন কুমার শর্মা সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন যে তিনি ‘ইসরাইলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ভারত সরকার আদেশ দিলে ভারতের প্রতিটি জাতীয়তাবাদী হিন্দু ইসরাইলে গিয়ে তাদের সমর্থনে যুদ্ধ করবে।

তারপর থেকে এ ধরনের আরও পোস্ট দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।

বিজেপি নেতা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ বলেন, অনেকে ইসরাইলের হয়ে যুদ্ধে যেতে চাইছে আর তারা হিন্দুত্ববাদের অথবা বিজেপি সমর্থক কী না, তা নিয়ে তার দল এখনই কোনও মতামত দিতে পারবে না। কিন্তু একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে আমি বলতে পারি যে ইসরাইলের পাশে যে বহু ভারতীয় দাঁড়াচ্ছেন, তার দুটো দিক আছে। প্রথমত হামলার ভয়াবহতার যে ছবি দেখা গেছে, সেটা বিশ্বের বহু দেশের সঙ্গে ভারতের নাগরিকদেরও নাড়িয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয়ত ইহুদীদের প্রতি একটা সহানুভূতিও আছে ভারতীয়দের।

তিনি বলেন, ইহুদিরা তো হলোকস্টের মোকাবিলা করেছে। তারা সবথেকে বেশি অত্যাচারিত হয়েছে গত শতাব্দীতে। আবার ভারত এবং ইসরাইল দুটোই সুপ্রাচীন সভ্যতা। সেদিক থেকেও ভারতের মানুষদের একটা বড় অংশ ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ অশ্বিনী কুমার মহাপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, হামাস নিজেদের লড়াইটাকে ইসলামের লড়াই হিসাবে তুলে ধরেছে। আর তাই হিন্দুত্ববাদীরা ইসলাম-বিরোধী জায়গা থেকে ইসরাইলের পাশে দাঁড়াচ্ছে।

হামাস আর ইসরাইলের লড়াইতে ভারতীয়রা দুইভাগ হয়ে গেছেন। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম বিরোধিতার কারণে ইসরাইলের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। আবার মুসলমানরা হামাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

যদিও অনেক দশক ধরে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষেই থেকেছে, আর ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়ের দশকে শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন নভেম্বর মাসে গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোট রয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যে যেখানে বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী। আবার আগামী বছর রয়েছে লোকসভা নির্বাচন।

তার আগে বিজেপি হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক আরও সংগঠিত করতে হিসাব কষেই ইসরাইল-হামাস সংঘাত নিয়ে মন্তব্য করছে বারবার।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও হামাসের প্রথম হামলার দিনেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে ভারত ইসরাইলের পাশে থাকছে। ওই মন্তব্যে কোথাও ফিলিস্তিন বা হামাসের নাম ছিল না।

মোদির ওই মন্তব্যের ছয়দিন পরে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ঐতিহাসিকভাবেই তারা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে এসেছে এবং সেই নীতির কোনও পরিবর্তন হয় নি।

আরব বিশ্বের কাছে ভারতের অবস্থান যাতে স্পষ্ট হয়, তার জন্যই সরকারীভাবে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর পুরনো অবস্থান আবারও জানানো হল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *