এ আর রাজ
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম এর গৌরবের ৩০ বছর উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৩। শনিবার, ২৭ মে রাজধানীর আইডিবি ভবন, কাকরাইলে ‘ফোরামের ত্রিশ বছর পূর্তি’ উপলক্ষ্যে ২৭ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী এই সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়।
সাংস্কৃতিক উৎসবের ১ম দিন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. মো: জাফর উদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
আরও উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী মো. মোজাফ্ফর হোসেন এমপি, হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি মো: জাহাঙ্গীর হোসেন, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, সাবেক সচিব ও বিশিষ্ট লেখক কারার মাহমুদুল হাসান, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জিল্লুর রহমান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. মো: জাফর উদ্দীন, ময়মনসিংহ বিভাগ সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, মোল্লা জালাল উদ্দীন, মোস্তাফিজুর রহমান সহ আরও অনেকে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের জীবনের প্রতিফলন। সংস্কৃতির মাধ্যমেই দেশ ও জাতির নিজস্ব পরিচয় ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বিশ্বের দরবারে উঠে আসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওর-বাওর, নদ-নদী, বনাঞ্চল ও গারো পাহাড় সমৃদ্ধ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল বাংলার লোক সংস্কৃতির অফুরন্ত ভান্ডার।
তিনি এই লোক সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বাংলার লোক সাহিত্য বিকাশে অবদান রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার প্রধান বক্তা হিসেবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে বক্তৃতা করেন।
মোস্তাফা জব্বার ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অঞ্চল-ভিত্তিক লোক সংস্কৃতি আমাদের অতি মূল্যবান সম্পদ’— একথা উল্লেখ করে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের উদ্দেশ্য হচ্ছে বৃহত্তর এই অঞ্চলের লোক সংস্কৃতি, লোক গাঁথা কিংবা লোক সাহিত্য বিকশিত করার পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতি, লোক গাঁথা কিংবা লোক সাহিত্যকে বিশ্বে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
মন্ত্রী ২০১৫ সাল হতে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মৈমনসিংহ গীতিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ প্রকাশ, পূর্ব বাংলা গীতিকার পুনর্মুদ্রণ উদ্যোগসহ বাংলার লোক সংস্কৃতি বিশ্ব লোক সাহিত্যের সম্পদ হিসেবে তুলে ধরতে ফোরামের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন।
তিনি লোক সংস্কৃতির বিকাশে দেশের সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
বিচারপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগকে এগিয়ে নিতে আমাদের নানা সংগঠন আছে। আমি মনে করি এর মধ্য আমাদের এই বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম এর গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের সকলের দায়িত্ব এই ফোরামকে আরও সমৃদ্ধশালী করে তোলা। তবেই আমরা ময়মনসিংহবাসী সমৃদ্ধশালী হব।
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যে জাতির সংস্কৃতি যত উন্নত সে জাতি তত বেশি উন্নত। আমাদের লোক সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। তাহলে আমরা আরও বেশি এগিয়ে যাব।
কারার মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা এক এবং অভিন্ন যার ফলে আমাদের এই অগ্রগতি। আমরা নিজেদের মধ্য বিভেদ করি না। আমরা ছোট বড় সবাই সমান।
মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা কিশোরগঞ্জের মানুষ বলতে আমাদের গর্বের পরিচয় আমরা ময়মনসিংহবাসী। আমরা এখানে ভেদাভেদ করি না। আমরা ময়মনসিংহ বিভাগ মানে সবাই একই পরিবার।
ম. হামিদ বলেন, আমরা অবহেলিত জাতি হিসাবে ছিলাম। সেখান থেকে আমরা নিজেদের একতা দিয়ে আজ এগিয়ে চলেছি। আর এই একতা দিয়েই আমরা আমাদের সফলতা দেখবো বলে বিশ্বাস করি।
ড. মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের এই ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম এর আয়োজনে একত্রিত হতে পেরে গর্বিত। একটি জাতিকে গোটা বিশ্বে ফুঁটিয়ে তুলতে তার সব থেকে সহজ মাধ্যম হল সে জাতির সংস্কৃতি। তাই আমাদের সংস্কৃতিকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।
রাশেদুল হাসান শেলী বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ফোরামের অগ্রগতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা জানি কোন গোষ্ঠী বা জাতির বা এলাকার উন্নয়নে সেখানকার সাংস্কৃতিক উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে আমাদের ময়মনসিংহে একটি ফোক ইনস্টিটিউট স্থাপন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
এদিন জামালপুর জেলা সাংস্কৃতিক দল ও কিশোরগঞ্জ জেলার ‘চন্দ্রাবতী’ গীতিনাট্য পরিবেশন করা হয়।
সাংস্কৃতিক উৎসবের ২য় দিন প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি ডিজিটাল প্লাটফর্মে বক্তৃতা করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নেত্রকোণা-৩ এর সাংসদ অসীম কুমার উকিল, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও উৎসব কমিটির আহ্বায়ক ম. হামিদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সাবেক সচিব ও বিশিষ্ট লেখক হুমায়ুন খালিদ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন।
এদিন টাঙ্গাইল জেলা সাংস্কৃতিক দল ও নেত্রকোণা জেলার সাংস্কৃতিক দল নৃত্য ও গান পরিবেশন করে।
সাংস্কৃতিক উৎসবের ৩য় দিন প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। ভাচুর্য়ালি সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদুল হক খান এমপি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। মুখ্য আলোচক ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের নির্বাহী সভাপতি মোঃ আব্দুস সামাদ ফারুক। এছাড়াও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর মহাপরিচালক আনজীর লিটন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাশেদুল হাসান শেলী।
এদিন শেরপুর জেলা সাংস্কৃতিক দল নৃত্য ও গান পরিবেশন করে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে ‘সোনাই মাধব’ গীতিনাট্য পরিবেশন করা হয়।
উৎসবের ৩য় দিন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আবুবকর সিদ্দিকের পরিচালনায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের তৃণমূল পর্যায়ের বিশিষ্ট সংস্কৃতিজনদের মাঝে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
উৎসবে আরও উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট মো: মারেজ উদ্দিন খান, জিএমসিসি’র পরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন, জিএমসিসি’র নির্বাহী পরিচালক রেখা রানী গুণ, জিএমসিএফ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মহিউদ্দিন আহমদ রতন, জিএমসিসি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন করিম আহমেদ মুন্না, জিএমসিএফ শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কমল কান্তি পাল, রওশন আরা রুবি প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।