বাউফলে চন্দ্রদ্বীপবাসীর চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা

স্বাস্থ্য

অক্টোবর ৭, ২০২২ ৭:২৪ অপরাহ্ণ

মো. দুলাল হোসেন(বাউফল) :

দুঃখ-দুর্দশা যাদের নিত‍্য সংঙ্গী সুখ যেন তাদের কাছে অমাবস‍্যার চাঁদ বলছি চারদিক নদীবেষ্টিত পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন বাসীর ভোগান্তির কথা । ওইইউনিয়নে রয়েছে ১১টি চর। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ ইউনয়নে প্রায় ২২ হাজার লোকের বসবাস। ওই চর অঞ্চলের অধিকাংশ লোক পেশায় জেলে কিংবা শ্রমিক। এই হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আজ অবদি নির্মিত হয়নি কোন হাসপাতাল বা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
অবহেলিত এ জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা একটি জরাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের একজন হেলথ কমিউনিটি কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই ইউনিয়নের প্রায় ২২ হাজার মানুষ। স্থানীয়রা জানান, একটি ইউনিয়নে তিনটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকার কথা থাকলে এ ইউনিয়নে রয়েছে মাত্র একটি ক্লিনিক।
১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ক্লিনিকটি এখন জরাজীর্ণ। জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা। এ ইউনিয়নের ২২হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় সপ্তাহে ৬দিন নিয়োজিত থাকেন একজন প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এবং তিন দিন একজন স্বাস্থ্য সহকারী।
কনিয়ম অনুযায়ী ওই ক্লিনিকে সপ্তাহে দুইদিন একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ও তিনদিন একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফ ডব্লিউ এ) থাকার কথা থাকলেও তাদের দেখা মেলেনি কোনদিন। একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৬ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রতি দুই মাসে দেওয়া হয় ১কিট ঔষধ সামগ্রী।
যা দিয়ে ২২ হাজার মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব না। সরেজমিনে গিয়ে, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চর ওয়াডেল কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা গেছে, জ্বর,সর্দি-কাশি ও এলার্জিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসেছেন প্রায় ৪৫/৫০ জন রোগী। যাদের অধিকাংশ বৃদ্ধ, গর্ভবতী মা ও শিশু।
ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. সিদ্দিকুর রহমান তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা পরামর্শ ও বিনামূল্য ওষুধ দিচ্ছেন। বিপুল সংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এছাড়া রয়েছে ঔষধ সংকটও।
এ সময়ে কথা হয় স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা কচুয়া গ্রামের কুদ্দুস (৩৯) এর সঙ্গে। তিনি বলেন, উপজেলায় গোনে আমরা বিচ্ছিন্ন ইউনিয়নে বসবাস করি। উপজেলা হাসপাতালে যাইতে আমাগো একমাত্র বাহন ট্রলার। উত্তাল তেতুঁলিয়া পাড়ি দিয়ে আমাদের পক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহন করা সম্ভব না। তাই আমাদের চিকিৎসা সেবার জন্য এক মাত্র ভরসা এই ক্লিনিকের সিদ্দিুকর রহমান। কথা হয় মাতৃত্বকালীন সেবা নিতে আসা দিয়ারা কচুয়া গ্রামের আসমা বেগম (৩৯), রায়সাহেবের রাবেয়া বেগম (২৯) ও চর ওয়াডেলের ঝুমুর বেগম (২৫)সহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা সবাই অভিন্ন সুরে বলেন, প্রায় ৫-৬
কি.মিটার পথ পায়ে হেটে চিকিৎসা নিতে এই ক্লিিেনকে আসতে হয়। এইউনিয়নে আরো কয়েকটি ক্লিনিক খাকলে আমাদের সিমাহীন এই দুর্ভোগ পোহাতে হত না। এ বিষয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরওয়াডেল কমউনিটি ক্লিনিকের কমউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, একটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও তিনটি কমউনিটি ক্লিনিকের বিপরীতে মাত্র একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। যার কারনে চিকিৎসা সেবা সাধারন মানুষের দোড়গোরায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, জনবল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংকট দূর করার জন্য এ ইউনিয়নে দুইটি কমউনিটি ক্লানিক ও একটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। অতিদ্রুত তা বাস্তবায়ন করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *