ডিসেম্বর ১০, ২০২৩ ৯:১২ পূর্বাহ্ণ
ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাক চায় না যুক্তরাষ্ট্র। গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে আবারও এটি প্রমাণ করছে দেশটি। এক ভেটোতেই পঙ্গু হয়ে গেছে জাতিসংঘ। আটকে গেছে গাজার যুদ্ধবিরতি। থমকে গেছে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বিশেষ ক্ষমতা ‘৯৯ ধারা’র সর্বোচ্চ চেষ্টা। এটিই প্রথম নয়। ইসরাইলকে বাঁচাতে বিশ্ব মানবতাকে পায়ে ঠেলে যুগ যুগ ধরে ভেটো দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেছে বারবার।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ফিলিস্তিন বিদ্বেষী কূটনীতিতেই আজ মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে গাজা। গত ৬৪ দিনে লাশ হয়ে গেছে প্রায় ১৮ হাজার তাজা প্রাণ। শুধু ভেটো ‘অস্ত্রেই’ ফিলিস্তিনিদের ‘মারছে’ তা নয়। হামাস ধ্বংস অজুহাতে গাজাবাসীকে হত্যায় শত শত টন গোলাবারুদ, যুদ্ধবিমান, সমরাস্ত্রও পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এত কিছুর পরও বোধহয় শান্তি মিলছে না হোয়াইট হাউজের।
দুদিন আগেই সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় হামলা চালিয়ে যেতে ইসরাইলকে আরও যুদ্ধাস্ত্রের সহায়তা দিতে চায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ইসরাইলি যুদ্ধ ট্যাংকের জন্য এক লাখ গোলাবারুদ বিক্রি করতে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। এর মধ্যে ইসরাইলের কুখ্যাত মেরকাভা ট্যাংকের জন্য ছিল ৪৫ হাজার শেল। আবার ভেটো দেওয়ার আগের দিন বৃহস্পতিবারও ইসরাইলের বেসামরিক হত্যা নিয়ন্ত্রণের বাণী শুনিয়েছে!
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ১৯৪৫ সাল থেকে চোখ বন্ধ করে ভেটো ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ৭৮ বছরে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সম্পর্কিত মোট ৩৭টি প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হয়। প্রতিবারই কোনো না কোনো স্থায়ী সদস্য ভেটো দিয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৫ বারই ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া ও চীন দিয়েছে একবার করে।
২০১৮ সালে গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনিরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। ইসরাইলের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে হওয়া এ বিক্ষোভকে বলা হয় ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’। এ সময় ইসরাইলের হামলায় শতাধিক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। সংঘর্ষ কমাতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনির দ্বিরাষ্ট্র স্বীকৃতির মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। প্রস্তাবটি একপেশে বলে এতে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাব তোলা হয়। যেখানে বলা হয়, পবিত্র শহর জেরুজালেমের চরিত্র, স্থিতি বা জনসংখ্যার গঠন পরিবর্তন করার জন্য যে কাজগুলো করা হয়েছে সেগুলোর কোনো আইনি বৈধতা নেই। এতে জাতিসংঘের আইন মেনে জেরুজালেমের মর্যাদা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। এখানেও স্থায়ী ১৮ সদস্য দেশ সমর্থনে থাকলেও ভোটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ২০০০ সালেও দ্বিতীয় ইন্তেফাদার (ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন) সময়ও নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র।