ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর বিক্রি করছে দখলদার ইসরায়েল

ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর বিক্রি করছে দখলদার ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক

মে ১৯, ২০২৩ ১:০৭ অপরাহ্ণ

ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে গঠন করা হয় বিতর্কিত ইসরায়েল রাষ্ট্র। এরপর থেকেই একের পর ফিলিস্তিনের জায়গা দখল করতে থাকে ইহুদিরা। প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্ত্যুচুত ও ৫০০টির বেশি গ্রাম ধ্বংস করে তারা।

ফিলিস্তিনের ভূমধ্যসাগরীয় পাড়ের শহর হাইফাতে বহু পুরনো ঘরবাড়ি ছিল। গত ৭৫ বছর ধরে সেগুলো ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দখলে। এর মধ্যে বেশিরভাগই বিক্রি করে দিয়েছে তারা। তবে শহরটিতে এখনো কিছু ঘরবাড়ি অবশিষ্ট রয়েছে, সেগুলোও বিক্রির পথে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল ও সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে ভিটেমাটি ছাড়া করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে গোড়াপত্তন হয় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের। দিবসটিকে নিজেদের বিপর্যয়ের দিন হিসেবে দেখেন ফিলিস্তিনিরা। আরবি শব্দ নকবা অর্থ বিপর্যয়। প্রতি বছর দিনটি স্মরণ করে থাকে ফিলিস্তিনিরা।

একই বছরের এপ্রিল মাসে হাইফা শহরটিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেই ইহুদিবাদী মিলিশিয়ারা। ইহুদিবাদী বাহিনী হাইফার ৯৫ শতাংশেরও বেশি বাসিন্দাকে বের করে দেয়। শহরে ৭৫ হাজারের ফিলিস্তিনির বসবাস ছিল।

নকবা এবং পরবর্তী দশকগুলিতে, ইহুদিবাদী এবং ইসরায়েলি বাহিনী হাইফাতে ফিলিস্তিনি পাড়া এবং আশপাশের ভবনগুলো ধ্বংস করে দেয়। শহরের প্রায় সমস্ত ফিলিস্তিনি ঐতিহাসিক কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেসব জায়গায় দখলদার সরকার নিজেরা ব্যবহার করছে। আর কিছু বাণিজ্যিক ভবন ও পার্কিং লট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

হাইফার সেরায়া সিটি হলে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। যেটি ১৯৪৯ সালে ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে ১৯৯৯ সালে ইসরায়েল ১৯তলা ভবন নির্মাণ করে।

হাইফা-ভিত্তিক একজন নগর পরিকল্পনাবিদ এবং আন্দোলনকর্মী অরওয়া সুইতাত। যিনি আরও ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধ করেছেন। সুইতাত আল জাজিরাকে বলেন, ১৯৪৮ সালের নকবার সময় যে ফিলিস্তিনি ভবনগুলো ধ্বংস করা হয়েছিল, সেই ধ্বংসাবশেষে ইসরায়েলিরা বড় বড় সরকারি ভবন নির্মাণ করেছে।

বর্তমানে হাইফা শহরে ২০ শতাংশের মতো ফিলিস্তিনি ভবন অবশিষ্ট রয়েছে। নকবা থেকে বেঁচে যাওয়া ফিলিস্তিনি ভবনগুলোর মালিকানা ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। যেসব ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়েছিলেন, শরণার্থী হয়ে অন্যান্য দেশে চলে গিয়েছিলেন তাদের সম্পত্তি ইসরায়েল দখল করে নেয়।

সুইতাত বলেন, হাইফা, জাফা এবং আক্কার মতো ঐতিহাসিক শহরগুলোতে ১৯৪৮ সালের পরপরই প্রায় ৭০ হাজারটি ঐতিহাসিক ভবন বাজেয়াপ্ত করা হয়। ওই ভবনগুলোর মধ্যে মাত্র চার হাজার ৮০০টি ভবন বর্তমানে অবশিষ্ট আছে। ভবনগুলো এখন ইসরায়েলের দখলে। এর আগের ভবনগুলোর বেশিরভাগই বেসরকারি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। অবশিষ্ট ভবনগুলোর মধ্যে জাফাতে এক হাজার ২০০টি, হাইফাতে ৬০০টি, আক্কায় ৬০০টি ও নাজারেতে প্রায় ৩৫০টি ভবন রয়েছে।

তিনি বলেন, ইসরায়েলিরা এখন হাইফা শহরের কিছু ফিলিস্তিনি ভবনে বসবাস করে। কিছু ভবন ইসরায়েলি আর্ট গ্যালারি ও কিছু ভবন হিপস্টার বারে পরিণত করা হয়েছে।

২০০০ সাল থেকে ইসরায়েলি সরকার অবশিষ্ট ফিলিস্তিনি ভবনগুলো সরকারি এবং বেসরকারি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করে আসছে। সেগুলো ভেঙে আধুনিক আবাসিক বা বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করে ইসরায়েলিদের কাছে বিক্রি করা হবে।

সুইতাত বলেন, তারা ইসরায়েলি বাজারের সুবিধার জন্য নকবার ধ্বংসাবশেষকে অর্থনৈতিক রত্নতে রূপান্তরিত করছে।

তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ইসরায়েল আইন ও শহর পরিকল্পনা উভয়ই ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের সম্পত্তি এবং জমি দখল করার জন্য। আরব-ফিলিস্তিনদের কোনো চিহ্ন রাখতে চায় না, তারা সব মুছে ফেলতে চায়।

সূত্র: আল-জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *