ফিতনা থেকে বাঁচবেন যেভাবে

ফিতনা থেকে বাঁচবেন যেভাবে

ধর্ম

জুলাই ২৫, ২০২৩ ৯:১১ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবী যতই এগিয়ে যাচ্ছে নানারকম ফিতনা ততই দৃশ্যমান হচ্ছে। পরিস্থিতি এতই বিপদসংকুল যে, ঈমানের উপর অবিচল থাকা জলন্ত অঙ্গার হাতের রাখার চেয়েও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

সামাজিক অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে। অনিয়মই হয়ে যাচ্ছে নিয়ম। ধর্মভীরুতা হয়ে যাচ্ছে আনস্মার্টনেস। কঠিন কবিরা গুনাহের কাজগুলো হয়ে যাচ্ছে প্রগতিশীলতা। আর সর্বত্রই চলছে সুদ, ঘুষ, চুরি, ডাকাতি, আর গিবতের এক ভয়াবহ মহড়া।

ফিতনায় পড়ার কারণ:-

দ্বীন সম্পর্কে সঠিক বুঝ না থাকায় অনেকই এসব ফিতনায় জড়িয়ে যাচ্ছে। প্রবৃত্তির অনুসরণ করে নিজেদের দুনিয়া আখেরাত উভয়টাকেই বরবাদ করে দিচ্ছে। আবার অনেকে যাচাই-বাছাই ছাড়া সবধরনের মানুষের কথা আমলে নিয়ে, সবধরনের সংবাদে কান দিয়ে ফিতনার সহজ শিকারে পরিণত হচ্ছে।

সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যেই ভালো-মন্দ উভয় শ্রেণির লোক থাকলেও সেখানে কিন্তু আমরা ভালো ও যোগ্য লোকটিকে ঠিকই খুঁজে নিই। অন্তত খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি; বরং খোঁজাখুঁজিটাকে জীবনযাত্রার সাধারণ নিয়মই মনে করি।

কিন্তু ধর্মীয় ক্ষেত্রে এসে আমাদের মধ্যে রাজ্যের অবসাদ ভর করে। অথচ ধর্মীয় ক্ষেত্রেও যোগ্য ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের সন্ধান অপরিহার্য। অনুসন্ধানের এ পথ ও পন্থা অবলম্বন না করায় খুব সহজেই মানুষ ফিতনায় পড়ে যায়।

ফিতনা মানুষের পরীক্ষার জন্য:

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ফিতনা দেওয়ার হিকমত হচ্ছে, বান্দাকে পরীক্ষা করা, বান্দার সততা, ঈমান, আর ধৈর্য যাচাই করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে আমরা ঈমান এনেছি, এ কথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের আগে যারা গত হয়েছে তাদেরও আমি পরীক্ষা করেছি। সুতরাং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যনিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে এবং তিনি অবশ্যই জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২-৩

ফিতনা থেকে মুক্তি পেতে করণীয়:

ফিতনা থেকে মুক্তি পেতে জনসাধারণের যেমন কিছু করণীয় আছে, তেমনি আছে আলেমসমাজেরও কিছু করণীয়। জনসাধারণের কর্তব্য হচ্ছে, অহং ও শৈথিল্য বর্জন করে সঠিক দ্বীনী ইলমের অন্বেষণ ও অনুসরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া এবং দ্বীনী ইলমে পারদর্শী মুত্তাকী ব্যক্তিত্বের সন্ধানে প্রবৃত্ত হওয়া।

উলামায়ে কেরামের সাহচর্যের মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহর সঠিক ইলম অর্জন করে সে অনুযায়ী জীবন ও কর্মকে সজ্জিত করার চেষ্টা করা।

আর উলামায়ে কেরামের করণীয় হচ্ছে, এসব মানুষদের দ্বীনের পথে উঠিয়ে আনার জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা, যেকোনো দ্বীনি মজলিসে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে মানুষের মধ্যে দ্বীনি চেতনা আর ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি করার পাশাপাশি ফিতনার ব্যাপারে অবহিত করা।

ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যম:

১- কুরআন সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা। কুরআন এবং সুন্নাহর বিধানকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। কারণ যে ব্যাক্তি কুরআন-সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরবে সে কখনো গোমরাহ হবে না।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে দুই বস্তু রেখে যাচ্ছি। তোমরা যতক্ষণ তা ধরে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তার নবীর সুন্নত।’ ( মুসতাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৩১৯)

২- বিচ্ছিন্নতাবাদ পরিহার করা, কারণ বিচ্ছিন্নতাবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে সমাজবদ্ধ থাকা এবং মুসলিমদের জামাত আঁকড়ে ধরা। যারাই সঠিক দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে তারাই খুব সহজে ফিতনায় পড়ে যাবে।

হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা মুসলিমদের জামাত ও ইমামের সঙ্গে আকঁড়ে থাকবে। আমি বললাম, যদি তাদের কোনো জামাত বা ইমাম না থাকে? তিনি বলেন, ‘তাহলে সে সব বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে তুমি আলাদা থাকবে, যদিও তুমি একটি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে আঁকড়ে থাকো এবং এ অবস্থায়ই মৃত্যু তোমার নাগাল পায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৬৭৮)

৩- ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার আরেকটা মাধ্যম হচ্ছে, দ্বীনের উপর অবিচল থাকা, যত ঝড়ঝাপটাই আসুক না কেন আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরা।

দ্বীনের উপর স্থিরতা আর অবিচলতা আসে (ক) নবি রাসুলদের জীবনি পাঠের দ্বারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ আর রাসুলদের এসব সংবাদ আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি যার দ্বারা আমি তোমার মনকে স্থির করি আর এতে তোমার কাছে এসেছে সত্য এবং মুমিনদের জন্য উপদেশ ও স্মরণ।’ (সুরা হুদ : আয়াত ১২০)

(খ) ইলম অনুযায়ী আমল করার দ্বারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদেরকে যা করতে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা তা করলে তাদের জন্য নিশ্চয়ই কল্যাণকর হতো এবং চিত্তস্থিরতায় দৃঢ়তর হতো।’ (সুরা আন-নিসা : আয়াত ৬৬)

(গ) বেশি বেশি কুরআন অধ্যয়ন এবং কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা এজন্য যে, আমি এর (কুরআনের) মাধ্যমে তোমার হৃদয়কে সুদৃঢ় করব। আর আমি তা আবৃত্তি করেছি ধীরে ধীরে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৩২)

(ঘ) সব সময় দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যমে। কারণ আল্লাহ তাআলার সাহায্য আর তাওফিক ছাড়া কারো পক্ষেই দ্বীনের উপর অবিচল থাকা সম্ভব না।

তাই সব সময় এই দোয়া করা, ‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি ছাব্বিত কালবি আলা দ্বীনিকা। অর্থ: ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।’ (তিরমিজি ৩৫৮৭)

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর গবেষণা বিভাগ, শায়েখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *