পুরনো প্রযুক্তির ইকুইপমেন্ট দিয়ে ফাইভ-জি বাস্তবায়ন প্রকল্পের বাতিলের দাবি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ডিসেম্বর ২, ২০২৩ ২:১৩ অপরাহ্ণ

নিউজ ডেস্ক, 

আজ ২ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১১ ঘটিকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন এর উদ্যোগে বিটিসিএলে ৫ম প্রকল্পে অনিয়ম ও প্রকল্প এ বাতিল এর দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বাজার বিশ্লেষক ও ভোক্তা প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়, জাতীয় তরুণ সংঘের সভাপতি ফজলুল হক, গ্রীণ পার্টির সভাপতি রাজু আহমেদ খান, সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য এড. শাহেদা বেগম, ডা. আমিনুল ইসলাম সহ আরও অনেকে।

বাজার বিশ্লেষক ও ভোক্তা প্রতিনিধি কাজী আব্দুল হান্নান, যে সি ব্যান্ড ইকুইপমেন্ট দিয়ে ডিডাব্লিউডিএম কিনতে যাচ্ছে বিটিসিএল তা বিটিসিএল ক্রয় করেছে ২০১৬ সালে। আর তখন বিবেচনায় ছিল থ্রী জি। বর্তমানে ৫জি বিবেচনায় নিয়ে কোনভাবেই সি ব্যান্ড কিনতে পারে না। সি ব্যান্ড এর ডিডাব্লিউডিএম নেটওয়ার্ক বর্তমানে বিটিসিএলে থাকতে আরেকটা সেইম টেরনোলজির ডিডাব্লিউডিএম কেনা শুধুই সরকারের আর্থিক অপচয়।

সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলার জন্য চাই দ্রুতগতির ৫জি। যেই প্রকল্প জনগণের অর্থে করা হচ্ছে সেই প্রকল্প দিয়ে যদি ৫জি না চলে তাহলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। ২০১৬ সালে জনগণের পকেট থেকে যে ইকুইপমেন্ট কেনা হয়েছে সেই ইকুইপমেন্ট ব্যবহারের জন্য আবার জনগণের পকেট থেকে অর্থ নিয়ে কেউ লুটপাট করবে তা আমরা কোনভাবেই হতে দিতে পারি না। প্রকল্পের সার্বিক ত্রুটির দিক তুলে তিনি আরো বলেন, বিটিসিএল জানুয়ারি ২০২২ হতে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে সমগ্র দেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এখনও ভেন্ডর নিয়োগ দিতে পারেনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। অথচ প্রকল্পের হয় শুরুতেই ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যা দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিজেরা লাভবানের উদ্দেশ্যে কমদামী ইকুইপমেন্ট ক্রয় সহ কারিগরী বিনির্দেশ সঠিকভাবে প্রস্তুত না করায় এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে যাচ্ছে এবং বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশব্যপী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে তাই কাজের ব্যাপকতা বিবেচনায় কাজের মান রক্ষার্থে সার্ভে, ডিজাইন, সুপারভিশন ও মনিটরিং কাজের জন্য ডিপিপিতে পরামর্শকের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং ৫ জন অভিজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমেই প্রকল্পের নেটওয়ার্ক এর জন্য সার্ভে, নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার, কারগরি বিনির্দেশ প্রস্তুত সহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে কাজ করানোর কথা। (সংযুক্তি-০১ ডিপিপি’র ৪২পাতায় আছে)। পরামর্শক নিয়োগ না করে তাড়াহুড়া করে একটি বিশেষ কোম্পানীর প্রস্তুত করা নিম্নমানের ও পুরানো প্রযুক্তি দিয়ে কারিগরী বিনির্দেশ দিয়ে দরপত্র আহবান করেছেন।

এখানে নিয়ম হলোঃ দরপত্র আহ্বান করার আগে প্রকল্প পরিচালক ৫জন পরামর্শক নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমেই প্রকল্পের নেটওয়ার্ক এর জন্য সার্ভে, নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার, কারগরি বিনির্দেশ প্রস্তুত করে তা উপস্থাপন করলে বিটিসিএল এর সংস্থা প্রদান একটি কমিটি করে কমিটির প্রতিবেদন এর প্রেক্ষিতে বিটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা অনুমোদন করেন। তবে এই কমিটি কোন সার্ভে বা নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার ডিজাইন করেননি। এই কমিটিও যদি সার্ভে করতেন তাহলেও সমস্যা হতো না। আবার প্রকল্প পরিচালক বুয়েট এর সমীক্ষা রিপোর্টকে এখানে রক্ষা কবচ বানানোর চেষ্টা করতে চাচ্ছেন। তিনি বলার চেষ্টা করছেন যে, বুয়েট এর সমীক্ষা রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে তিনি কারিগরী বিনির্দেশ প্রস্তুত করেছেন। বুয়েট তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে প্রদান করেছেন ০৩ এপ্রিল ২০২১ সালে। পরবর্তী সময়ে যখন পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভায় কয়েকটা বিষয়ের ব্যাখ্যা বুয়েট এর কাছে চাওয়া হলে বুয়েট ০৯.১০.২০২১ সালে বিটিসিএল বরাবর একটি লিখিত ব্যাখ্যা পাঠায়;
যাহা ডিপিপি’র ৪৩ পাতায় আছে।

সেখানে বুয়েট উল্লেখ করে যে, ডিপিপি প্রণয়নের প্রাক্কালে বুয়েট সার্ভে করার সময় বিটিসিএল এরজেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিটিসিএল এর ব্যান্ডউইথ এর বর্তমান চাহিদা এবং গত কয়েক বছর কিভাবে এই চাহিদা বেড়েছে এ সম্পর্কে বিটিসিএল এর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ধরণের কোন তথ্য বিটিসিএল সরবরাহ করতে পারেনি। তখন পিইসি সভায়ও ঘঞঞঘ এর আওতায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইঞঈখ এর অংশ এবং অন্যান্য অপারেটর অংশ এর পূর্ণাঙ্গচিত্র নির্ধারণ করতে বললে বুয়েট তাদের সমীক্ষা রিপোর্ট ঘড়াবষ ঋড়ৎসঁষধ ব্যবহার করে উপজেলা ভিত্তিক ইঞঈখ এর ইধহফরিফঃয চাহিদা নিরুপন করা হয়েছে। তখন বুয়েট বিটিআরসি’র কাছে তথ্য চেয়েও পায়নি; তাও তারা লিখিত জানিয়েছে।

তাই এক্ষেত্রে প্রাপ্ত চাহিদা ও ঐ এলাকার প্রকৃত চাহিদার মধ্যে পার্থক্য থাকায় দরপত্র প্রস্তুতের পূর্বে পরামর্শকদের মাধ্যমে সার্ভে করলে সঠিক চাহিদা নিরুপণ করা যেত এবং ২০৩০ সালের জন্য যুগোপযোগী ত্রুটিহীন ইকুইপমেন্ট কেনা সম্ভব হতো।

এখানে উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যেই বিটিসিএল কর্তৃক সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য অপটিক্যাল ফাইবারলাইন বসানো হয়েছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেটের চাহিদাপূরণে আমাদের বর্তমান অবকাঠামো যথেষ্ট নয়। তাই সরকার“৫জি’র উপযোগী করণে অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক” নামক প্রকল্প হাতে নেয়, যার আওতায় ২০৩০ সালনাগাদ দেশের ইন্টারনেট চাহিদা মেটানোর উপযোগী অবকাঠামো তৈরী করা হবে।

বুয়েট কর্তৃক বিটিসিএলে প্রদত্ত ০৯.১০.২০২১ সালের রিপোর্টের ৪র্থ পাতায় ২০২১ সাল পর্যন্ত বিটিসিএলের ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি ৭৭০ জিবিপিএস। তখন বিটিসিএল যে ডিডাব্লিউডিএম ক্রয় করে তা ছিল ঈঊ ব্যান্ডের ও তা কেনা হয় ২০১৫ সালে এবং বিবেচনায় ছিল থ্রী জি। আবার বুয়েট এর একই রিপোর্টে আছে ২০৩০ সালে বিটিসিএলের ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি লাগবে ৫৩৭০ জিবিপিএস এর। যদিও বিটিআরসির গত ১ আগস্ট ২০২২ তারিখের প্রক্ষেপণ পত্র মোতাবেক বিটিসিএল এর ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটি লাগবে ৯০০০ জিবিপিএস এর। আর বর্তমানে বিবেচনায় নিতে হবে ৫জি। তাহলে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যবহার করে ঈঊ++ বা ঝঁঢ়বৎ ঈঊ এবং আমাদের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির কারণে ও বর্তমান ইকুইপমেন্ট ঈ ব্যান্ড এর সে ক্যাপাসিটি সার্ভিস না দেওয়ার কারণেই নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এখন আমরা যদি পুনরায় আবার একই ব্যান্ডের ইকুইপমেন্ট ক্রয় করলে এখানে রাষ্ট্রের টাকার অপচয় হবে এবং প্রকল্প কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে নিম্নমানের পুরানো প্রযুক্তি দিয়ে ২০৩০ সালে দেশের ৫জি অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আর তখন দেশের সামাজিক অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।সারাদেশ তো দূরের কথা; ঢাকার গুলশানেও তখন ২০৩০ সালে এইসব পুরানো প্রযুক্তি দিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে না।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই প্রকল্প বাতিল করে আগামীতে নতুন সরকার গঠনের পর বিশেষজ্ঞ কমিটি ও স্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ এবং বিধি মোতাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের অনুরোধ থাকবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *