পুতিনের নিয়োগকৃত কে এই নতুন জেনারেল?

পুতিনের নিয়োগকৃত কে এই নতুন জেনারেল?

আন্তর্জাতিক

অক্টোবর ১০, ২০২২ ৯:০৪ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনে ধারাবাহিকভাবে রুশ সেনাদের হারের পর রাশিয়ার উদ্বেগ বেড়েছে। তাই যুদ্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই জেষ্ঠ্য সামরিক কমান্ডারকে বরখাস্ত করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে অভিযান ত্বরান্বিত করতে শনিবার কমান্ডার হিসেবে জেনারেল সার্গেই সুরোভিকিনকে নিয়োগ দিয়েছেন পুতিন।

কে এই সার্গেই সুরোভিকিন?

জেমসটন ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৬৬ সালে রাশিয়ার নভোসিবিরস্কের সার্বিয়ান শহরে জন্মগ্রহণ করেন সার্গেই সুরোভিকিন। তিনি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মধ্যে নির্মমতার জন্য বেশ বিখ্যাত।

১৯৮০ সালে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ অংশ নেন সুরোভিকিন। এছাড়া চেচেনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে কয়েকবার আহত হন তিনি।

ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০০৮ সালের পর রুশ সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষে একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন সুরোভিকিন। তার হাত ধরেই সেনাবাহিনীকে নির্মম করে গড়ে তুলতে বৃদ্ধদের ছাঁটাই করা হয় এবং যুদ্ধের জন্য চর্বিবিহীন সেনা নিয়োগ দিয়ে সামরিক বাহিনীর বিশাল পরিবর্তন আনা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তার জীবনে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই কঠোরভাবে যেকোনো নির্দেশ পালত করতে প্রস্তুত থাকেন সুরোভিকিন।

জেনারেল সুরোভিকিন দুইবার কারাবরণ করেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সময় রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে চলা বিক্ষোভে তিন বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে সুরোভিকিনের নেতৃত্বধানী সেনারা। এজন্য প্রথমবার তিনি ছয় মাস কারাবরণ করেন।  পরে কোনো বিচার ছাড়াই তাকে মুক্ত করা হয়। মুক্তির চার বছর পর অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে আবার দণ্ডিত হন এ জেনারেল। তবে তাও বাতিল হয়।

বোমা ও কামান প্রিয় সুরোভিকিন

২০০৫ সালে চেচেনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তার একজন সেনা নিহত হওয়ার বিপরীতে চেচেনদের তিনজন সেনাকে হত্যা কথা বলেন সুরোভিকিন।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কিরিলো বুদানভ রাশিয়ার ব্যবসা বিষয়ক সংবাদমাধ্যম আরবিসির প্রতিবেদক বলেন, বোমারু বিমান ও কামান দিয়ে কীভাবে যুদ্ধ করতে হয় সেটা সুরোভিকিন ভালো করেই জানেন। তিনি তাই করে দেখাচ্ছেন। তার পরামর্শে জুলাই থেকে রাশিয়া আকাশপথে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে।

সুরোভিকিনি রাশিয়ার পক্ষ থেকে সাহসী নায়ক উপাধি পেয়েছেন। তিনি রাশিয়ার বিমানবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ২০১৭ সালে সিরিয়া কাজের জন্য পুরস্কার পান।

২০১৫ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের পক্ষে দেশটিতে হস্তক্ষেপ করেছিল মস্কো। তখন সুরোভিকিনের তত্ত্বাবধানে বর্বর বোমা হামলা চালিয়ে সিরিয়ার আলেপ্পো শহর ধ্বংস করার অভিযোগ উঠে।

২০২০ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ থেকে ২০১০ সালে সিরিয়ার ইদলিবে চলা বর্বর সহিংসতার দায় বহনকারী কমান্ডারদের মধ্যে সুরোভিকিনের নাম তালিকাভুক্ত করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সিরিয়ায় মোতায়েন করা দ্যা ওয়াঙ্গার মারসেনারি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন সুরোভিকিন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, সে একজন লিজেন্ডারি ব্যক্তি। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সবচেয়ে দক্ষ কমান্ডার হচ্ছে সুরোভিকিন।

২০২২ সালে সুরোভিকিনকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সেখানে তার আগে কে কর্মরত ছিল তা কখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে কিছু রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, জেনারেল আলেক্সজান্ডার ডভোর্নিকভ সুরোভিকিনের উত্তরসূরি ছিলেন। আলেক্সজান্ডার চেচেন যুদ্ধে একজন জেনারেল এবং সিরিয়ায় রাশিয়ার কমান্ডার ছিলেন।

শুক্রবার রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের সামরিক জেলার কমান্ডার কর্নেল জেনারেল আলেকজান্ডার চেইকোতেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপরই ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে পেছানোর পর রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বড় পদে পরিবর্তন এলো।

সূত্র- আলজাজিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *