পাকিস্তানে যেসব প্রধানমন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন

পাকিস্তানে যেসব প্রধানমন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন

আন্তর্জাতিক স্লাইড

মে ১০, ২০২৩ ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্টে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক মামলায় জামিন চাইতে যাওয়ার সময় সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পাকিস্তানের শীর্ষ নির্বাহীর পদে দায়িত্ব পালনকারী এমন ব্যক্তিদের কারাগারে রাখার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

মঙ্গলবার ডন ডটকম পাকিস্তানে কোনো না কোনো সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন-এমন সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের একটি টাইমলাইন তুলে ধরেছে।

জানুয়ারি ১৯৬২ : পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী (সেপ্টেম্বর ১৯৫৬-অক্টোবর ১৯৫৭) ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলকে সমর্থন জানাতে অস্বীকার করেন। পরে ইলেকটিভ বডিজ ডিসকোয়ালিফিকেশন অর্ডারের (ইবিডিও) মাধ্যমে তাকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। পরে ১৯৬০ সালের জুলাইয়ে ইবিডিও লঙ্ঘনের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ১৯৬২ সালের জানুয়ারিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তানের ১৯৫২ সালের নিরাপত্তা আইনের আওতায় ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ জড়িত থাকার বানোয়াট অভিযোগে তাকে করাচির কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।

সেপ্টেম্বর ১৯৭৭ : জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালের আগস্ট থেকে ১৯৭৭ সালের জুলাই পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার দায়ে ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। লাহোরের হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি খাজা মোহাম্মদ আহমদ সামদানি তাকে মুক্তির আদেশ দিয়েছিলেন। ওই সময় বিচারপতি বলেছিলেন, ভুট্টোকে গ্রেফতারের আইনি কোনো ভিত্তি নেই। তার এমন মন্তব্যের তিন দিন পর মার্শাল ল রেগুলেশন-১২-এর আওতায় আবারও তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পরে ভুট্টোকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল পাকিস্তানে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আগস্ট ১৯৮৫ : পাকিস্তানের দুবারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন বেনজির ভুট্টো। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর, ১৯৯০ সালের আগস্ট এবং ১৯৯৩ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৯৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জেনারেল জিয়াউল হকের একনায়কতন্ত্রের (১৯৭৭-১৯৮৮) সময় বেনজির ভুট্টো দেশের বিরোধীদলীয় নেতা হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৫ সালের আগস্টে বেনজির ভুট্টোর ভাই মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যুর পর পাকিস্তানে আসেন বেনজির ভুট্টো। পরে তাকে ৯০ দিনের জন্য গৃহবন্দি করা হয়।

আগস্ট ১৯৮৬ : করাচিতে স্বাধীনতা দিবসের এক সমাবেশে সরকারের নিন্দা করায় বেনজির ভুট্টোকে গ্রেফতার করা হয়।

মে ১৯৯৮ : লাহোর হাইকোর্টের এহতেসাব বেঞ্চ বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

জুন ১৯৯৮ : পাকিস্তানের তৎকালীন ‘দ্য পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি’ বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

জুলাই ১৯৯৮ : লাহোর হাইকোর্টের এহতেসাব বেঞ্চ বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে আবারও জামিন অযোগ্য গ্রেফতাারি পরোয়ানা জারি করেন।

এপ্রিল ১৯৯৯ : বেনজির ভুট্টোকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং অবৈধ অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে একটি সুইস কোম্পানিকে শুল্ক জালিয়াতির সুযোগ করে দেওয়ার দায়ে এহতেসাব বেঞ্চ তাকে সরকারি পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেন। তবে আদালতের রায় ঘোষণার সময় তিনি দেশে ছিলেন না এবং পরে উচ্চ আদালত ওই রায় বাতিল করেন।

অক্টোবর ১৯৯৯ : এহতেসাব বেঞ্চ সম্পত্তিসংক্রান্ত মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে ফের জামিন অযোগ্য গ্রেফতাারি পরোয়ানা জারি করেন।

সেপ্টেম্বর ২০০৭ : ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের সরকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে নির্বাসনে পাঠায়। নির্বাসিত হওয়ার পর ২০০৭ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন তিনি। নওয়াজ শরিফ ইসলামাবাদে ফেরার পর বিমানবন্দরে তাকে অবরুদ্ধ করা হয়। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১০ বছরের নির্বাসনের বাকি ৩ বছর কাটানোর জন্য পরে তাকে সৌদি আরবের জেদ্দায় পাঠানো হয়।

নভেম্বর ২০০৭ : জেনারেল মোশাররফের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লংমার্চে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পাঞ্জাবে পিপিপি সিনেটর লতিফ খোসার বাড়িতে বেনজিরকে এক সপ্তাহের জন্য গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

জুলাই ২০১৮ : নওয়াজ শরিফকে গ্রেফতার করা হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ ও তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে ১০ বছরের সাজা দেয় দেশের জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো (ন্যাব)। হাইকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে এ সাজা স্থগিত হয়ে যাওয়ায় দুই মাস পর কারামুক্ত হন নওয়াজ শরিফ।

ডিসেম্বর ২০১৮ : সৌদি আরবে ইস্পাতের কারখানায় পরিবারের মালিকানার বিষয়ে দায়ের হওয়া এক মামলায় শরিফকে সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়। পরে আবারও তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরের বছরের নভেম্বরে তাকে চিকিৎসার জন্য দেশছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর তিনি আর পাকিস্তানে ফেরেননি।

জুলাই ২০১৯ : পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন শহীদ খাকান আব্বাসি। কয়েক বিলিয়ন রুপির এলএনজি আমদানির একটি চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে ন্যাবের ১২ সদস্যের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। ২০১৩ সালে তিনি পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী থাকাকালীন এই চুক্তি হয়েছিল। পরে তিনি জামিন পান এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদিয়ালা কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

সেপ্টেম্বর ২০২০ : পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ন্যাবের অর্থ পাচারের এক মামলায় লাহোরের হাইকোর্ট তার জামিন প্রত্যাখ্যান করায় তিনি গ্রেফতার হন। প্রায় সাত মাস পর লাহোরের কোট লাখপাত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

মার্চ ২০২৩ : পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ইসলামাবাদের এক বিচারককে হুমকি এবং তোশাখানা উপহারসংক্রান্ত মামলার শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ওই পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে গ্রেফতার ঠেকাতে জামান পার্কে ইমরান খানের বাসভবনের বাইরে হাজার হাজার পিটিআই সমর্থক-কর্মী জড়ো হন। নিরাপত্তাকর্মীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করায় পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে।

মে ২০২৩ : আল কাদির ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে ৯ মে ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *