পরিত্যক্ত ১২ উড়োজাহাজ নিলামের জন্য টাস্কফোর্স

পরিত্যক্ত ১২ উড়োজাহাজ নিলামের জন্য টাস্কফোর্স

জাতীয় স্লাইড

মার্চ ৩, ২০২৩ ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ নিলামের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ ব্যাপারে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

এই টাস্কফোর্স দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গোর সামনে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর ইঞ্জিনসহ সব ধরনের মালামালের তালিকা তৈরি করে সেগুলোকে জব্দ করবে। বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নিরপেক্ষ ও বিভিন্ন সংস্থার শীর্র্ষ কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করে এই তালিকা প্রস্তুত করা হবে।

এরপর দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামতও নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো উড্ডয়নের উপযোগী আছে কিনা-তা যাচাই-বাছাই করতে একটি টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা গেছে, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের ১২টি উড়োজাহাজ পরিত্যক্ত অবস্থায় বিমানবন্দরে পড়ে আছে। এর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের আটটি, রিজেন্ট এয়াওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি ও এভিয়ানা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ রয়েছে। এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোর কাছে এসব উড়োজাহাজের পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বেবিচক পাবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

বেবিচকের কর্মকর্তারা জানান, আগামী অক্টোবরে বিমানবন্দরে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের একটি অংশ উদ্বোধন করা হবে। এজন্য নির্মাণকাজ দ্রুত চালানোর চেষ্টা করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব পরিত্যক্ত উড়োজাহাজ। এগুলো বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোনে থাকার কারণে রপ্তানি কার্গো এলাকায় নিয়মিত ও নন-শিডিউল ফ্লাইটের পার্কিং ও উড়োজাহাজে মালামাল লোড-আনলোডে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি বিমানবন্দরে যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।

বেবিচক সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলোর সার্টিফিকেট অব এয়ারওয়ার্দিনেস’র মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে এগুলোকে ডি-রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এরপর ডি-রেজিস্ট্রিকৃত উড়োজাহাজগুলোকে অপসারণের জন্য কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন সময়ে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। সর্বশেষ ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশে বলা হয়, এই সময় অতিক্রম করলে এয়ারক্রাফটগুলো অপসারণ ও বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবে না।

জানা গেছে, ১২টি এয়ারক্রাফটের মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ১টি উড়োজাহাজ (নিবন্ধন নং-এস২এইইউ) ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ১টি (এস২এএইচএ) ব্যাংকে বন্ধক রেখে মোট অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে লোন নেয় ইউনাইটেড আর আস্টার্ন ব্যাংক থেকে লোন নেয় রিজেন্টএয়ারওয়েজ। এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ তাদের ৮টি উড়োজাহাজ দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে বড় অঙ্কের টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ কামরুল ইসলাম জানান, বেবিচকের আইনের ধারা অনুযায়ী অক্টোবর মাসের আগেই আদালতের মাধ্যমে এসব উড়োজাহাজ নিলামে বিক্রি করার প্রক্রিয়া চলছে। জানা গেছে, নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য এরই মধ্যে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি উড়োজাহাজকে (নিবন্ধন নং-এস২এএইচএ) ডি-রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। উড়োজাহাজটির সার্টিফিকেট অব এয়ারওয়ার্দিনেসের মেয়াদ ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর শেষ হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য টাস্কফোর্স দু-একদিনের মধ্যে কোম্পানিগুলোকে সর্বশেষ তাগাদা দিয়ে চূড়ান্ত নোটিশ দেবে। প্রথম দফায় চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়ার পরও কর্ণপাত না করায় সর্বশেষ নোটিশ দেওয়া হবে। এছাড়া যে টেকনিক্যাল কমিটিও গঠন করা হবে, সেই কমিটি প্রতিটি উড়োজাহাজের বাহ্যিক আবরণ থেকে শুরু করে ইঞ্জিন, ফুয়েল, হুইলসহ সব ধরনের ইঞ্জিন সরেজমিন দেখে একটি রিপোর্ট দেবে।

টেকনিক্যাল কমিটির রিপোর্টের পর একটি সার্ভে কমিটি গঠন করা হবে। ওই সার্ভে কমিটি টেকনিক্যাল কমিটির বর্ণনার আলোকে প্রয়োজনে দ্বিতীয় দফায় সরেজমিন সার্ভে করে এয়ারক্রাফটগুলোর মূল্য নির্ধারণ করবে। অর্থ ও ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগ থেকে দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সার্ভে কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

টেকনিক্যাল কমিটির বর্ণনা অনুযায়ী উড়োজাহাজ সংক্রান্ত যাবতীয় মালামাল বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিধি অনুযায়ী তালিকা প্রস্তুত করে সেগুলো জব্দ করা হবে। জব্দকৃত মালামালের তালিকা করার নিরপেক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার প্রতিনিধিকে সাক্ষী রাখা হবে। এরপর ওই মালামাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জিম্মায় রাখা হবে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, জিএমজিসহ তিনটি এয়ারলাইন্সের কাছে মোট অঙ্কের টাকা পাবে বেবিচক। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজির। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৬০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের। ২০১২ সালে জিএমজি এয়ারলাইন্স তাদের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে। এরপর আর কখনো ওড়েনি এ সংস্থার বিমান।

রিজেন্ট এয়ারলাইন্সের কাছে বকেয়া ২০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যায় রিজেন্ট। কিন্তু তার আগেই বেশ কয়েকটি রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল সংস্থাটি। এ ছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে ১৯০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র বিমান কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়েছে ২০১৬ সালে।

বেবিচকের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা জানান, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরানো হলে যে জায়গা ফাঁকা হবে, সেখানে অন্তত সাতটি বিমান পার্ক করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *