নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ: ‘যে ইসরাইলকে আমি চিনতাম, তা ধ্বংস হয়ে গেছে’

নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ: ‘যে ইসরাইলকে আমি চিনতাম, তা ধ্বংস হয়ে গেছে’

আন্তর্জাতিক

জুন ২২, ২০২৪ ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মার্কিন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক টমাস ফ্রেডম্যান একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ইসরাইলের নীতিমালাগুলো ধ্বংসাত্মক। তার ওই নিবন্ধের নাম- ‘যে ইসরাইলকে আমি চিনতাম, তা ধ্বংস হয়ে গেছে’।

সম্প্রতি মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসও এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একই সুরে। ওই প্রতিবেদনে দৈনিকটি লিখেছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ধ্বংসাত্মক নীতিগুলোর মাধ্যমে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীকে দিনকে দিন একঘরে করে ফেলছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শান্তির সময়ই ইসরাইলের নীতিমালাগুলো বেশ উন্মাদনাময়। তবে যুদ্ধের সময় সেসব পরিপূর্ণ উন্মাদনায় ভরপুর হয়ে ওঠে। যে কারণে ইসরাইল প্রতিদিনই বন্ধু হারাচ্ছে। কেননা কোনো দেশই এইসব নীতির সহযোগী বা সহযোগিতাকারী হতে চায় না।

এর আগে, ইসরাইলে নেতানিয়াহুর দল ও চরম উগ্র ডানপন্থীদের দলের যে জোট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল, সে বিষয়ে ফ্রেডম্যান তার ওই প্রবদ্ধে লিখেছেন, এই জোটের চরমপন্থী হওয়ার বিষয়ে আমি যখন কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলাম, তখন অনেকেই আমার বিরোধিতা করেছিলেন। এখন ঘটনা-প্রবাহ দেখিয়ে দিয়েছে যে, তারা ভুল ছিলেন এবং বর্তমান পরিস্থিতি এমনকি অতীতের চেয়েও বেশি শোচনীয় হয়েছে… ইসরাইল এখন বিপদের মধ্যে রয়েছে।

এই মার্কিন বিশ্লেষক স্বীকার করেছেন যে, ইসরাইল এখন ইরানের মুখোমুখি হয়েছে যে ইরান একটি আঞ্চলিক শক্তি। ইরানের মোকাবিলায় ইসরাইলের না আছে কোনো কূটনৈতিক জবাবের বিকল্প, না আছে সামরিক বিকল্প।

ইসরাইল গাজা, লেবানন ও পশ্চিম তীরেও সম্ভাব্য যুদ্ধের মুখোমুখি উল্লেখ করে ফ্রেডম্যান লিখেছেন, হিজবুল্লাহর এমন সব নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যে, সেগুলো ইসরাইলের বিশাল অঞ্চলের অবকাঠামোগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে। ইসরাইলের বিমানবন্দরগুলো ও নৌ-বন্দরগুলো থেকে শুরু করে সামরিক ঘাঁটিগুলো ও বিদ্যুৎ-কেন্দ্রগুলোও ধ্বংস হবে।

ফ্রেডম্যানের মতে, ইসরাইলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমনসব ব্যক্তি, যারা কেবল নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট এবং তারা চায় যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে। যাতে বিচার ও কারাবাসের শিকার না হতে হয়। ফ্রেডম্যানের বিশ্বাস, নেতানিয়াহু নিজের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছেন, যাতে চরম ডানপন্থী ইহুদিবাদীদের নিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা যায়।

এদিকে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক সম্প্রতি বলেছেন, নেতানিয়াহু যদি ক্ষমতা না ছাড়ে তাহলে তেল আবিব শিগগিরই নিজেকে এমন অবস্থায় দেখতে পাবে যে, একদিকে গাজা যুদ্ধ চলছে, আর উত্তরে হিজবুল্লাহ সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে এবং পশ্চিম তীরেও সে তৃতীয় ইন্তিফাদার মুখোমুখি।

এহুদ বারাক আরও বলেছেন, ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ আন্দোলন ও ইরাকের প্রতিরোধ ফ্রন্ট ইসরাইলে আঘাত হানছে এবং ইরানও ইসরাইলের মোকাবিলায় অত্যন্ত কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছে।

এ বিষয়ে টমাস ফ্রেডম্যান তার ওই প্রবন্ধে লিখেছেন, এইসব সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রকে পশ্চিম এশিয়ায় এক ব্যাপক যুদ্ধের দিকে টেনে নিচ্ছে।

পাশ্চাত্যের আরও অনেক বিশ্লেষকের মতো এই বিশ্লেষকও মার্কিন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ দিতে। যাতে ইহুদি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরাইল যুদ্ধ-বিরতি মেনে নেয় এবং গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যান্য সমালোচকের মতো তিনিও নেতানিয়াহুর পদত্যাগ ও অধিকৃত ফিলিস্তিনে তথা ইসরাইলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।

সম্প্রতি ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গান্তজ নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং প্রকাশ্যে মেয়াদপূর্ব নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন। অন্যদিকে ইসরাইলি মন্ত্রীসভার চরমপন্থী সদস্যরা আরও বেশি ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *