জানুয়ারি ৬, ২০২৩ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ
আগামীকাল ৬ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে নবম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেটের নবম আসর। এবারের আসরে মোট ৭ দল অংশ নিচ্ছে।
উদ্বোধনী দিনে দুপুর ২.১৫ মিনিটে লড়বে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স এবং সিলেট সিক্সারর্স। সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে লড়বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং রংপুর রাইডার্স।
ইতিমধ্যে এবারের আসরকে সামনে রেখে অংশগ্রহণকারী ৭ ফ্র্যাঞ্চাইজি দল নিজেদের দল গঠনের কার্যক্রম সেরে ফেলেছে।
সিলেটে মাশরাফি বিন মুর্তজা, বরিশালে সাকিব আল হাসান এবং খুলনার হয়ে খেলবেন তামিম ইকবাল। এছাড়া লিটন দাস এবং মুস্তাফিজুর রহমান খেলবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে।
আজ বৃহস্পতিবার টুর্নামেন্ট পূর্ব অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিলেট স্ট্রাইকার্সের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আলোচনা করেন বিপিএল ও সাকিবের মন্তব্য নিয়ে।
তারই কিছু অংশ তুলে ধরা হলো ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের সামনে।
কেমন বিপিএলের অপেক্ষায় ম্যাশ
‘শুরু হওয়ার পর বোঝা যাবে। তবে প্রত্যেকবারই খেলা শুরু হওয়ার পর তো খেলাটা ভালোই হয়। প্রতিযোগিতা থাকে। সবাই সবার দল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আশা করি, প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলকই হবে।’
বিপিএলের অসঙ্গতি ও সাকিবের মন্তব্য
‘ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকে। আমরা ক্যারিয়ারের একদম ছোট থেকে দেখে এসেছি, ঢাকা লিগকে খেলোয়াড়েরা অনেক গুরুত্ব দেয়। বিপিএল তো একটা অরগানাইজেশনের তো, অরগনাইজ করার ব্যাপার থেকে। ক্যালেন্ডার ইয়ারটা সেটা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালেন্ডারে কখন শুরু হবে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যতগুলো পয়েন্ট বললেন, এর ভেতরে খেলোয়াড় আসা–যাওয়া (অ্যায়েলবল), ক্যালেন্ডার ইয়ার সেট করলে হয় কি, ভিন্ন দেশের খেলোয়াড়েরা জানে কোথায় পাওনা বেশি থাকলে, তাদের সুইটেবল হবে। এখন পিএএসএল, ইউএই, দক্ষিণ আফ্রিকান লিগের সঙ্গে একসঙ্গে হয়ে যায়, এটা একটা ঝামেলা।
স্পন্সরশিপ, মালিকানা ও সাকিবের মন্তব্য
জার্সি বললেন, জার্সি লোগো যেটা, সেটা— বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা আরেকটা জায়গায় আছে, সেটা হচ্ছে— স্পন্সরশিপ এবং মালিকানা। এই একটা জায়গায় বিশাল শূন্যস্থান থেকে যায়। আরেকটা জিনিস, অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বেনেফিট পায় বোর্ড থেকে। প্রোফিট ভাগাভাগির একটা বেনেফিটিং হয়, সেটা যেহেতু হয় না, তখন আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ থাকে যে, স্পন্সরশিপ থেকে সে অর্থটা বের করে আনা।
এখানে একটা শূন্যস্থান (গেপ) থেকেই যায়। আরেকটু অরগানাইজ করতে পারলে ভালোই হয়। কিন্তু সত্যি বলতে, বাংলাদেশে ওই পরিমাণ মার্কেট ভ্যেলুও নেই। এ ধরেনর টুর্নামেন্টের জন্য যে পরিমাণ মার্কেট ভ্যলু থাকার প্রয়োজন, ওই ভ্যেলুও নেই। আমার কাছে মনে হয় যে, এক পর্যায়ে জোর করে আসা হয় বা আনা হয়। মার্কেট ভ্যেলু থাকলে হয়তো আসার ব্যাপার থাকত।
আইপিএলে গ্যালারির টাকায় হোম ফিফটি-ফিফটি করে। এরকম অনেক কিছু বিষয় আছে। এগুলো করলে হয় তো আরেকটু জমজমাট হতো। কিন্তু এই টুর্নামেন্টটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সাকিব যেটা বলেছে, মার্কেট ভ্যেলু যে নাই, সেটা সে বিশ্বাস করে না। ১৮-২০ কোটি মানুষের দেশে খুবই জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট, সদিচ্ছার প্রয়োজন।
‘আমি তো এটা বললাম, কাজ না করলে তো বোঝা যাবে না। এটা তো দীর্ঘ সময়ের একটা কাজের ব্যাপার। মার্কেট ভ্যেলু কতটুকু, আপনার দলের কাছে স্পন্সরশিপ কতটুকু আসতে চাচ্ছে, এগুলোতো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। একটা দল যখন জানে যে, আমি এই দলটার মালিক, আমি পরবর্তী ১০ বছর–৭ বছর এটার মালিক। তখন সে দুই বছর লস করতে পারে। ঠিক আছে, আমি আমার দলকে নিয়ে কাজ করব, মার্কেটে প্রমোট করব, ডিসিপ্লিন ওয়েতে, তখন কিন্তু তার যে ২ বছরে প্রোফিটে সে চলে যাবে। এটা তো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য ব্যবসা। বিজনেসে যদি আপনি প্রোফিট না করেন ঠিক আছে, লস হয়ে গেলে তো সমস্যা। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এজন্য দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারছে না। তবে যদি এটি প্রোপার অরগনাইজ করে করা হয়, যেটা সাকিব বলেছে, আমার কাছেও মনে হয়, অন্তত ৭, ৫ বা ১০ বছর যেটার যে মালিক, তাদের সঙ্গে টিম করা। নির্দিষ্ট তারিখে করা। তখন কিন্তু অনেক কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব।’
গতবার সাকিব বলেছিলেন বিপিএল ৪–৫ নম্বরেও পড়ে না। এবার বললেন তালিকায়ই পড়ে না। আসলে মানটা কোথায় আছে, আপনার কি মনে হয়?
‘পরিবেশ দেখলে আপনার তা–ই মনে হবে। কারণ, এক মাঠে ৬-৭ দল অনুশীলন করছে। রংপুর যেমন তাদের নিজ দায়িত্বে নিজেদের মাঠে অনুশীলন করছে। এ বিষয়গুলো কিন্তু ম্যাটার করে। আমাদের ওই নির্দিষ্ট দলের সুযোগসুবিধা। ওই যে বললাম না, অরগানাইজ সঠিক পন্থায় করতে হবে। তখন হয় তো–বা এটা হবে। আপনি খালি চোখে যে কেউ এসে দেখে যে, একই মাঠে সবকিছু হচ্ছে, অনুশীলন হচ্ছে। এটা হ–য–ব–র–ল ব্যাপার, এটা বলতে পারে। কিন্তু দিন শেষে খেলার মাঠে খেলা কিন্তু খেলা মতোই হয়। একটা টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য আছে, শুরুর দিকে একটা হাইপ তোলার ব্যাপার আছে, এ জিনিসটা হয় তো আমরা শুরু থেকেই পারিনি, এটা সত্য।’
‘এই ছোট ছোট জিনিসগুলো নিয়ে যখন ক্রিকেট বোর্ড চিন্তা করে। এগুলোয় কিন্তু বড় আকার ধারণ করে। এগুলো যদি পরিবর্তন করে, তাহলে তো পরিবর্তন হবেই। পরিবর্তন না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই। এমনও না যে, আমাদের মাঠ নেই। ফতুল্লা পড়ে আছে, আরও কিছু মাঠ পড়ে আছে। বাইরেও আছে। এগুলো যদি একটু অরগনাইজ করা যায় খারাপ হয় না।’
বিপিএলে বোলার মাশরাফি কতটা প্রস্তুত
‘এটা আসলে কঠির প্রশ্ন। ম্যাচও খেলিনি। ম্যাচ থেকেই প্রন্তুত হতে হবে। মানসিকভাবে ঠিক আছি। এমন তো না যে, শুধু মানসিকভাবে ঠিক থাকলে স্কিল ঠিক থাকবে। লেটস সি (দেখা যাক)। আল্লাহ ভরসা।’
লম্বা সময় ম্যাচও খেলিনি, মানে ম্যাচ থেকে তৈরি হতে হবে। মানসিকভাবে ঠিক আছি। কিন্তু এমন তো না যে মানসিকভাবে ঠিক থাকলে স্কিলও ঠিক থাকবে। দেখা যাক, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
সিলেটকে নিয়ে মাশরাফির প্রত্যাশা
বলা কঠিন। তবে ওয়েল অর্গানাইজড মনে হচ্ছে। যারা কোচিং স্টাফে আছে, ক্রিকেটার সবার ভেতরে…কম্বিনেশনটাও ভালো। মাঠে কেমন করবে সেটা তো বলা কঠিন। ফ্র্যাঞ্চাইজি চায় ভালো কিছু করতে। সব দলই চায় চ্যাম্পিয়ন হতে। আমরাও অবশ্য তার ব্যতিক্রম কিছু না। এটা তো আর বলেকয়ে হবে না। মাঠে ভালো করতে হবে। ওয়ান বাই ওয়ান ম্যাচ…। কাল যদি ভালো করতে পারি, এটা তো মোমেন্টামের খেলা। শেষের দিকে বা তাকিয়ে আমরা শুরু থেকে ভালো করার চেষ্টা করব।
সিলেটে দেশি কোচ ও সম্ভাবনা
আমাদের একটা বিষয় ছিল যে লোকাল কোচদের প্রমোট করা, এজন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বলেছিলাম। এটা তো আসলে দেড় মাসের খেলা, পৃথিবীর সেরা কোচ এনেও আপনি কোনো প্লেয়ারকে অভাবনীয় কিছু করাইতে পারবেন না। আমাদের লোকাল কোচদের জন্য এটা বড় সুযোগ। এখানে ফরেন প্লেয়ার, লোকাল প্লেয়ার থাকে তারা যেন ওই অভিজ্ঞতা নিতে পারে। প্লেয়ার তৈরি হবে তখন, যখন কোচও তৈরি হবে। আপনি একটা জিনিস শেখাবেন সেটা যদি ঠিক না হয়, তাহলে ওই স্টুডেট ভালো হবে। যেমন তুষার, রাজিন ভাই এরা কিন্তু আধুনিক ক্রিকেট খেলেছে এটার ফরম্যাট আর যারা পেছনে তাদের সেন্স কিন্তু এক না। এখানে ব্যাটিংয়ে অনেক ইম্প্রোভাইজের ব্যাপার আছে, বোলিংয়েও একই জিনিস আছে। তো আমাদের যারা লোকাল কোচ আছে, বিশেষ করে আমাদের দলে এটা যেন তারা ইতিবাচকভাবে নেয় এবং তারা নিয়েছে। আমই নিশ্চিত যে এই দেড় মাসে তারা অনেক অভিজ্ঞতা নিতে পারবে।
বিপিএলের বর্তমান অবস্থা ও সমাধান
‘আমার কাছে মনে হয়, শুরু থেকেই আমাদের দুটা জিনিস সমন্বয়টা ভালো হয়নি। মিডিয়ার সঙ্গে ক্রিকেট বোর্ড, বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়— ত্রিমুখী একটা বিষয় ঘটেছে। প্রথমত বিপিএল নিয়ে কেউই ইতিবাচক ছিল না মিডিয়ায়। তারপর যদি দেখেন, খেলার মাঠে যখন এসেছে, টি–টোয়েন্টি ফরম্যট তখন ওই জায়গায় ছিল না। এ নিয় কিন্তু অনেক আলোচনা হয়েছে। এগ্রিসিভ কিন্তু কারো জায়গা থেকে কেউ হতে পারেনি। খুবই দুর্ভাগ্যজনক সারা বিশ্বের সবাই এগিয়ে গেছে। তাদের দেশের মিডিয়াও নিজ দেশের টুর্নামেন্টকে প্রমোট করছে সারা বিশ্বে। আমরা হয়তো তা পারিনি। এখানে একতরফা বললেই হবে না। আমাদের চ্যালেঞ্জও আছে। আমরা হয় তো কখনো ঢুকিনি। ক্রিকেট বোর্ড থেকে হয় তো মার্কেট ভ্যেলু যে উপরে উঠালে আরও উপরে উঠতে পারে, এই যে কাজটা হয় তো আমরা করে দেখিনি। আল্টিমেটলি আমাদের ক্রিকেটের একটাই সমস্যা, জাতীয় দলের বাইরে আর কোনো দল নেই। এটা হচ্ছে আমাদের প্রথম সমস্যা। জাতীয় দলকে যে তৈরি করে বাইরের অন্যান্য সব দল। শুধু বিপিএল না সব জায়গায় আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের হলো এখন সামনে আসছে তা, শেষ হলে পেছনেরটুক ভুলে যাবো।’
‘এত কিছু সাকিব বলেছে, আমিও কিছু না কিছু বললাম । এই যে পরবর্তী বছর যদি ছয় মাস আগে পরিকল্পনা করে, যেহেতু ৩ বছরে জন্য দলগুলো দিয়েছে। এটা ভালো দিক হয়েছে। অন্তত ৩ বছরের জন্য নিয়েছে। দলগুলো এখন ক্লিয়ার, দলগুলোকে সমর্থন করতে হবে। কোন উপায়ে সমর্থন করবে, দলগুলো কী চায়, তারা কী চায় বিপিএল গভর্নিং বডির সঙ্গে কমলে কিন্তু সমাধান হয়। টুর্নামেন্টের ৩ মাসে একটা নিলাম, তারপর টুর্নামেন্টের আগে সাঠে অনুশীলন করে এভাবে পরিবর্তন হবে না।’