নতুন সেতুতে জোড়া লাগবে ভারত ও শ্রীলংকা

নতুন সেতুতে জোড়া লাগবে ভারত ও শ্রীলংকা

আন্তর্জাতিক

জুলাই ২৩, ২০২৩ ১২:০৭ অপরাহ্ণ

অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সম্পর্ক উন্নয়নে সম্মত হয়েছে ভারত ও শ্রীলংকা। শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত একটি নতুন সেতুতেও জোড়া লাগবে এই দুই দেশ। শুক্রবার ভারত সফরের শেষ দিনে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচনায় সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্তে পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ও স্থলসংযোগ সেতু নির্মাণ সম্ভাবনার বিষয় খতিয়ে দেখার কথাও উল্লেখ করা হয়। বিক্রমাসিংহে দুদিনের সফরে দিলি­ আসেন বুধবার। একটি কৌশলগত নীতিতে বলা হয়, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার ‘স্থল সংযোগ’ স্থাপন করবে। পাক প্রণালি দুই দেশকে বিভক্ত করে রেখেছে। এর দৈর্ঘ্য ২৫ কিলোমিটার। এ সংযোগ স্থাপিত হলে ত্রিঙ্কোমালি ও কলম্বোর মতো শ্রীলংকার গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে ভারতের প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যা দুদেশের ‘হাজার বছরের’ সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।

উভয় দেশের কর্মকর্তাদের মতে, সমুদ্রের তলদেশে তারের ও পেট্রোলিয়াম পাইপলাইনের মাধ্যমে পাওয়ার গ্রিডগুলোকে সংযুক্ত করার প্রকল্পে মোট খরচ হবে ৪ বিলিয়ন।

গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদি জানান, ভারতের ‘প্রতিবেশী অগ্রাধিকার নীতি’ ও ‘সাগর’ ভিশন উভয় ক্ষেত্রেই শ্রীলংকার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। আজ আমরা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে আমাদের মতামত নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি ভারত ও শ্রীলংকার নিরাপত্তা, স্বার্থ ও উন্নয়ন একে অপরের সাথে জড়িত।’

মোদি জানান, দুই দেশের মধ্যে বিমান সংযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও কথা হয়েছে। ভারতের তামিলনাড়ুর নাগাপট্টিনাম ও শ্রীলংকার কাঙ্কেসান্তুরাইয়ের মধ্যে যাত্রী ফেরি পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

গত বছর শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করেছিল ভারত। ভারত-শ্রীলংকা সম্পর্কের কথা বলতে মোদি বলেন, ‘গত বছর শ্রীলংকা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো আমরা সঙ্কটের সময় শ্রীলংকার জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছি।’ শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহও দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি সহযোগিতা চুক্তিতে সম্মত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন।

ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর  প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো যায়। বিক্রমাসিংহ বলেন, ‘দুই দেশের এই সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও নতুন অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ দেশের সংকটের সময় শ্রীলংকাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিক্রমাসিংহ আরও বলেন, ‘মোদি ও আমি বিশ্বাস করি ভারতের দক্ষিণ অংশ থেকে শ্রীলংকায় একটি বহু-প্রকল্প পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণ শ্রীলংকায় সাশ্রয়ী মূল্যের ও নির্ভরযোগ্য শক্তির সরবরাহ নিশ্চিত করবে।’

বহু প্রকল্প নিয়ে বিক্রমাসিংহের সঙ্গে গৌতম আদানির বৈঠক
বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে  বৈঠক করেছেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি কলম্বো পোর্ট ওয়েস্ট কন্টেইনার টার্মিনাল (ডব্লিউসিটি)। কলম্বোতে অবস্থিত কন্টেইনার টার্মিনাল ডব্লিউসিটি উন্নয়ন ও তা পরিচালনা সংক্রান্ত একটি লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পায় আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোনস লিমিটেড (এপিএসইজেড)। এপিএসইজেড আদানি গ্রুপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের মার্চে এই চিঠি পাঠিয়েছিল শ্রীলংকা কর্তৃপক্ষ।

শ্রীলংকার সবচেয়ে বিস্তৃত প্রতিষ্ঠান জন কিলস হোল্ডিংস পিএলসি’র সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে এপিএসইজেড। তাদের সঙ্গে থাকবে শ্রীলংকা পোর্টস অথরিটি (এসএলপিএ)। এ বিষয়ে কনসোর্টিয়াম হিসেবে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ৩৫ বছর মেয়াদে নির্মাণ, পরিচালনা ও সঞ্চালন ভিত্তিক কাজ করবে ডব্লিউসিটি। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ডব্লিউসিটির কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে ভারতীয় কন্টেইনার এবং কলম্বোর বহুজাতিক শিপমেন্টের পরিমাণ শতকরা ৪৫ ভাগ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আঞ্চলিক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে কলম্বো বন্দর। এ অবস্থায় এই অংশীদারিত্বের নেটওয়ার্ক যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে এবং আদানি গ্রুপ ভারতীয় উপকূল বরাবর ১২টি বন্দরের মধ্যে ৭টি কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করছে। এতে উভয়েই সুবিধা পাচ্ছে বলে মনে করা হয়। এসব বছরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *