ধর্মগুরুর এক হাজার সঙ্গিনী, তার জীবন কাহিনী সিনেমাকে হার মানাবে

ধর্মগুরুর এক হাজার সঙ্গিনী, তার জীবন কাহিনী সিনেমাকে হার মানাবে

ফিচার

নভেম্বর ২৬, ২০২২ ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ

এক হাজার সঙ্গিনী, ঘর থেকে উদ্ধার ৬৯ হাজার গর্ভনিরোধক ওষুধ। না, এটা কোনো আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনের কাহিনী নয়। এই কাহিনী এক স্বঘোষিত এক ধর্মগুরুর। খুন, ধর্ষণ, নারীদের যৌনদাসী বানিয়ে রাখা-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই ধর্মগুরুকেই এ বার আট হাজার ৬৫৮ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল এক আদালত।

ধর্মগুরু রামরহিমের কীর্তির কথা অনেকেই জানেন। সম্প্রতি তাকে প্যারোলে ছাড়া নিয়ে জোর চর্চা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তার মধ্যে প্রকাশ্যে এলো আরো এক ধর্মগুরুর কিস্‌সা। তবে এই ধর্মগুরু ভারতের নন। নাম আদনান ওক্তার। বয়স ৬৬। তিনি হারুণ ইয়াইয়া নামেও পরিচিত। তুরস্কের এক স্বঘোষিত ধর্মগুরু। ইস্তানবুলের ফৌজদারি আদালত ওক্তার এবং তার ১৩ সহযোগীকে সাড়ে আট হাজার বছরেরও বেশি কারাদণ্ড দিয়েছে সম্প্রতি। ফাইন আর্টস নিয়ে পড়াশোনার করার পর ধর্মগুরুর পথ বেছে নেন আদনান। ১৯৮০ সালে একজন ধর্মগুরু হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন তিনি।

ধর্মগুরু হিসেবে কাজ করতে করতেই আদনানসিলর নামে একটি সংগঠন খোলেন এই ধর্মগুরু। পরে ১৯৯০ সালে সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন খুলে নারীদের পোশাক নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করেন। নারীদের জন্য আধুনিক এবং ছোট পোশাক বানিয়ে ব্যবসাতেও নামেন। গোপন সূত্রে পুলিশ খবর পেয়েছিল যে, সংগঠনের আড়ালে আদনান অসামাজিক কাজকর্মের একটা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তারপরই ২০১৬ সালে আদনানের বাংলো এবং সংগঠনের দফতরে তল্লাশি চালায় তুরস্ক পুলিশ। যদিও সেই সময় কিছু পায়নি তারা।

২০১৭ সালেও ফের তল্লাশি চালায় পুলিশ। তখন ওক্তার কোনো রকমে পুলিশের নাগাল থেকে পালিয়ে যান। তার খোঁজে তল্লাশি জারি রাখে পুলিশ। সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাবালিকাদের যৌন শোষণ, ধর্ষণ, প্রতারণা, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিতে উস্কানি এবং চরবৃত্তির অভিযোগে ২০১৮ সালে ওক্তারকে গ্রেফতার করে তুরস্ক পুলিশ। একটি টেলিভিশন চ্যানেল চালাতেন ওক্তার। ধর্ম নিয়ে জনপ্রিয় টক শো-ও করতেন সেখানে। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার পর এ৯ নামে সেই টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম টাউন্সভিলে-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংগঠন চালানোর নামে ওক্তার এক হাজার তরুণীকে জোর করে যৌনদাসী বানিয়ে তাদের উপর অত্যাচার চালাতেন। ঐ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীদের ত্বকের সমস্যা দূর করার বাহানায় তাদের জোর করে গর্ভনিরোধক ওষুধ খাওয়ানোর অভিযোগ ওঠে ওক্তারের বিরুদ্ধে। তার বাংলোতে তল্লাশি চালানোর সময় ৬৯ হাজারের বেশি গর্ভনিরোধক ওষুধ পেয়েছিল পুলিশ। ওক্তারের আশপাশে সব সময় সুন্দরী নারীরা ঘিরে থাকতেন। আদালতে ওক্তার স্বীকার করেছিলেন, তার এক বা দুই নয়, এক হাজার ‘গার্লফ্রেন্ড’ রয়েছে। ঐ নারীদের তিনি পোষা বিড়াল বলে ডাকতেন।

ওক্তারের সংগঠনে এক সদস্য এক সাক্ষাৎকারে বলেন, কেউ যদি ওক্তারের সংগঠন ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করতেন, তার জীবন নরকে পরিণত করতে দ্বিধাবোধ করতেন না এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু। ওক্তারের রাজনৈতিক প্রভাবও ছিল যথেষ্ট মজবুত। ফলে সংগঠন ছেড়ে পালিয়ে কেউ রেহাই পেতেন না। ওক্তারের সংগঠনের আরো এক কর্মী সিলন ওজগুল সিমসেক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার যখন ১৭ বছর বয়স, ওক্তারের সংগঠনে যোগ দিয়েছিলাম। ২০১৩ সালে পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ধরা পড়ে যাই। ওক্তারের সংগঠনে নারীদের উপর আমানুষিক নির্যাতন করা হতো।

অপরাধীদের গ্যাং চালানো, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, ধর্ষণ, ব্ল্যাকমেল এবং শারীরিক অত্যাচার-সহ একাধিক অভিযোগে ২০২১ সালে ১০টি আলাদা মামলায় ওক্তারের ১০৭৫ সালের সাজা ঘোষণা করে আদালত। তুরস্কের নির্বাসিত ধর্মগুরুকে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছিল ওক্তারের বিরুদ্ধে। অবৈধ ভাবে সংগঠন চালানো, শিক্ষা এবং যৌন অধিকার লঙ্ঘন, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, চরবৃত্তি-সহ নানা অভিযোগে এ বছরের ১৭ নভেম্বরে ওক্তারকে আট হাজার ৬৫৮ সালের কারাদণ্ড দিয়েছে তুরস্কের আদালত। ওক্তার হলেন তুরস্কের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে এতো বড় সাজা দিল আদালত। এর আগে তুরস্কেরই এক ব্যক্তিকে নয় হাজার ৮০৩ বছরের জন্য সাজা দিয়েছিল আদালত।

সূত্র: আনন্দবাজার 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *