দৈয়ারা মধ্যপাড়ায় পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা

ধর্ম

অক্টোবর ৪, ২০২২ ১২:৫১ অপরাহ্ণ

মতিউর রহমান সরকার দুখু

দৈয়ারা মধ্যপাড়ায় পূজা মন্ডপে নানা রকম আড়ম্বরতার মধ্য দিয়ে ০৩ অক্টোবর পালিত হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার অষ্টমী। সারাদিন উপোস করে দেবীর প্রতি পূজা অর্চনা করে দিনটি পালন করে দৈয়ারা মধ্যপাড়ার সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়। বছরে একবার দেবী দুর্গার আগমনী গানে প্রতিটি পরিবারে বয়ে যায় অনাবিল আনন্দ। সকলে মিলে দেবীকে বরণ করতে মাসব্যাপী প্রস্তুতি নেয়। মন্ডপে শুরু হয় আনাগোনা। অনেকেই দেবীর দর্শন নিতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে।

মুরাদনগর উপজেলার বাবুটিপাড়া ইউনিয়নের গ্ৰাম দৈয়ারা। এ গ্ৰামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ ও দোলনা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও অনেকে প্রবাসে বসবাস করে। গ্ৰামটিতে দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু-মুসলিমরা একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে । সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসবে দেবীর আশীর্বাদ ও সন্তুষ্টি লাভের আশায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নানা ধরনের আয়োজন করে থাকে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দুর্গাপূজা যেন সুষ্ঠুভাবে পালন করা হয় সেজন্য দৈয়ারায় গঠিত হয়েছে দৈয়ারা মধ্যপাড়া সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ। এ পরিষদ পূজা আয়োজনে সবধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য :মন্ডপ প্রাঙ্গনের ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা, দেবীর সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি।

মন্ডপটিতে দেবী দুর্গাসহ আরো কিছু মূর্তি নান্দনিকভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মন্ডপের সামনে পূজার জন্য একটি জায়গা রাখা হয়েছে যেখানে পূজা অর্চনা করা হয়। এছাড়া কতগুলো প্রদীপ জ্বালিয়ে সমস্ত আঁধার দূর করে আলো ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এ মন্ডপে পূজা করতে আসেন। এমনি একজন পূজা-অর্চনাকারী শ্রীমনা চন্দ্র শীল জানান, “আমরা শান্তি শৃঙ্খলার সাথে পূজা করতে পারতেছি, এ পর্যন্ত কোনো অসুবিধা হয় নাই। পূজা সুন্দরভাবে যাচ্ছে।”
দৈয়ারা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিমাই দাস বলেন, “এ বছর সহকারে সাত বছর ধরে আমরা পূজা করতেছি, এখানে কোনো রকম কোনো গ্যান্জাম এ পর্যন্ত হয় নাই। এখানে হিন্দু-মুসলিম যারাই আছে সবাই আমাদেরকে খুব সাপোর্ট করে, এখানে মোটামুটি পূজা ভালোই হইতেছে।”

অষ্টমীর দিন সন্ধ্যায় প্রসাদ হিসেবে বিভিন্ন ফল ও মিষ্টান্ন পূজায় আগতদের ও দর্শনার্থীদের দেওয়া হয়। পূজা দেখতে আশেপাশের গ্ৰাম থেকে অনেক মানুষ প্রতিদিন এ মন্ডপে ভিড় জমায়। পূজাকে কেন্দ্র করে মন্ডপের আশেপাশে কিছু অস্থায়ী দোকান বসে। এসব দোকানে তেলে ভাজা ডালের বরা,আলুর চপ,পেয়াজুসহ হরেক রকম খাবার পাওয়া যায়। এতে করে একদিকে পূজাতে আসা দর্শনার্থীরা ক্ষুধা নিবারণ করতে পারছে, অন্যদিকে দৈয়ারার বিক্রেতারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

পূজায় সার্বিকভাবে নিরাপত্তার দায়িত্বে ০৬ জন আনসার রয়েছে যাদের মধ্যে ০৪ জন পুরুষ ও ০২ জন্য নারী সদস্য। আনসার সদস্য জাকির জানান, এখানে মুরাদনগর থানা থেকে দায়িত্বরত পুলিশ ভিজিট করতে আসেন এবং কোনো ধরনের সমস্যা নাই। আরেক আনসার সদস্য নাসিমা বেগম বলেন, “আমরা সঠিকভাবে নিরাপত্তা দিতেছি, কোনো ধরনের সমস্যা হয়নাই এখনো।”
মুরাদনগর থানা দৈয়ারা মধ্যপাড়া পূজা উদযাপনের নিরাপত্তা তদারকি করছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে মুরাদনগর থানা থেকে একটি ব্যানার মন্ডপের সামনে ঝুলানো হয়েছে যে ব্যানারটিতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার, মুরাদনগর সার্কেল এএসপি, মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *