দুশ্চিন্তা ও ঋণ মুক্তির আমল

দুশ্চিন্তা ও ঋণ মুক্তির আমল

ধর্ম

জুন ১১, ২০২৩ ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ

মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকেন। এছাড়া যাপিত জীবনে অনেক সময় আয়ের থেকে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। এ কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবেই ঋণ হয়ে যায়। একবার ঋণের জালে জড়ালে তা থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। তবে দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে নিরাপদে ও দূরে থাকার জন্য কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত কিছু দোয়ার আমল রয়েছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানব জীবনে এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে এবং বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদিসে বাতলে দেননি

দুশ্চিন্তা ও ঋণ মুক্তির আমল

হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যিনি ওই দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার সব ঋণ ও দুশ্চিন্তা দূর করবেন- اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি ওয়াল আঝযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল ঝুবনি ওয়া দালায়িদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির-রিঝালি’।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে আশ্রয় চাই, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই, ঋণভার ও মানুষজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে মুক্তি চাই’। (সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ২৮৯৩)

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় ভয়-চিন্তা-পেরেশানির পাশাপাশি ঋণ থেকে মুক্তি চাইতেন। তাই যারা ঋণগ্রস্ত; তাদের জন্য ঋণমুক্তিতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়ার আমল করা জরুরি।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘চুক্তিবদ্ধ এক গোলাম (ক্রীতদাস) তার কাছে এসে বললো, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে পারছি না। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দেবো না; যা আমাকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার ওপর সীর (সাবীর) পাহাড় পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। তিনি বললেন, তুমি পড়- اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক’।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম থেকে দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ছাড়া অন্য কারো মুখাপেক্ষী হওয়া থেকেও আমাকে আত্মনির্ভরশীল (ঋণমুক্ত) করো’। (তিরমিযি ৩৫৬৩)

এ দোয়াটি ঋণ পরিশোধের নিয়ত ও প্রচেষ্টার পাশাপাশি নামাজের দুই সেজদার মাঝে বসে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি কামনা করা। এছাড়া বিশুদ্ধ নিয়তে আল্লাহর কাছে ঋণমুক্তির আশ্রয় চাইলে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের তা থেকে মুক্ত করবেন মহান আল্লাহ, ইনশাআল্লাহ!

পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বেশি বেশি এ দোয়া পড়তে হবে। ফরজ নামাজের পর পড়ব। আজানের পর পড়ব। দুই খুতবার মাঝে পড়ব। জুমার দিন আসরের পর পড়ব। নফল সুন্নতের সিজদা ও শেষ বৈঠকে পড়ব- اللَّهُمَّ فَارِجَ الْهَمِّ، كَاشِفَ الْغَمِّ، مُجِيبَ دَعْوَةِ الْمُضْطَرِّينَ، رَحْمَانَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَرَحِيمَهُمَا، أَنْتَ رَحْمَانِي فَارْحَمْنِي رَحْمَةً تُغْنِينِي بِهَا عَنْ رَحْمَةِ مَنْ سِوَاكَ

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ফা-রিজাল হাম্মি। কা-শিফাল গম্মি। মুজীবা দা’ওয়াতিল মুদতাররীন। রাহমা-নাদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি ওয়া রহীমাহুমা। আনতা রহমানী, ফারহামনী রহমাতান্‌ তুগনীনী বিহা আন রহমাতি মান সিওয়াক’।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি পেরেশানি দুর করার মালিক, দুশ্চিন্তা লাঘবকারী, দুর্দশাগ্রস্ত, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া সকল নিরুপায় মানুষের দোয়া ও আহ্বান সাড়া দানকারী, দুনিয়া এবং আখিরাতে আপনি রহমান, উভয় জগতে আপনি রাহিম, আপনি আমাকে দয়া করে দিন। আমাকে এমন অনুগ্রহ দ্বারা দয়া করুন যা আপনার রহমত ছাড়া অন্য সবার অনুগ্রহ থেকে আমাকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী করে দিবে। (তাবরানী, কিতাবুদ দোয়া: ১০৪১, মুসতাদরাকে হাকেম: ১৮৯৮)

পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাস আর একিনের সঙ্গে উক্ত দোয়াগুলো পড়ব। ইনশাআল্লাহ! ঋণ যতই হোক, মহান আল্লাহ তাআলা একটা ব্যবস্থা করেই দেবেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঋণ পরিশোধের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *