ঢাকায় গরম বৃদ্ধির যত কারণ

ঢাকায় গরম বৃদ্ধির যত কারণ

দেশজুড়ে স্লাইড

এপ্রিল ২২, ২০২৪ ৫:৪০ অপরাহ্ণ

রাজধানীসহ দেশজুড়ে কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঘরে-বাইরে হাঁসফাঁস করছে গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। আগে বিভিন্ন পার্ক, ফাঁকা জায়গা ও সড়ক বিভাজকে অসংখ্য গাছপালা দেখা গেলেও এখন আর নেই। গাছের পরিবর্তে সেসব স্থান দখল করেছে কংক্রিটের স্থাপনা। শুধু গাছই নয়, কমেছে ঢাকার জলাশয়ের সংখ্যাও।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, পার্কের অনেক গাছই কেটে ফেলা হয়েছে। সেখানে চলছে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের কাজ। পার্ক ঘেঁষে বসানো একটি চায়ের দোকানে বসে গরমে হাঁসফাঁস করছে কিছু মানুষ। তারা জানান, আগে গরমে পার্কে ঢুকে গাছের ছায়ায় আরাম করা যেত, এখন ঢোকাও যায় না। পান্থকুঞ্জ পার্কের গাছ কাটার পর এই এলাকায় তাপ বেড়ে গেছে।

শাহবাগ শিশুপার্কেও আগে ৪০ শতাংশ জায়গায় গাছ ছিল। এখন অনেক গাছই আর নেই। সেখানে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। মেট্রোরেলের অবকাঠামো নির্মাণের কারণে কেটে ফেলা হয়েছে ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যানের গাছও।

কয়েক বছরের ব্যবধানে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ শিশুপার্ক পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার সবুজ গাছগাছালি প্রায় হারিয়ে গেছে।

শুধু পার্ক বা ফাঁকা জায়গা নয়, রাস্তার পাশে ও সড়ক বিভাজকের গাছপালাও কেটে ফেলা হচ্ছে। গত বছরের মাঝামাঝি রাজধানীর সাতমসজিদ রোডের সড়ক বিভাজকের অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাছ ও জলাশয় ধ্বংস করে ঢাকা শহরে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনা হয়েছে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, তাপমাত্রা ও স্বস্তি ভিন্ন বিষয়। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও হাতিরঝিলের পাশে বকুলগাছের ছায়ায় বসলে সে রকম গরম অনুভূত হবে না। কারণ হলো গাছের ছায়া ও পানি। তাপের কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি থেকে জলীয় বাষ্পের স্তর তৈরি হয়, যা মানুষের শরীরে লাগলে স্বস্তি আসে। ফলে ঐ তাপমাত্রা মানুষ অনুভব করে না।

ঢাকায় সবুজ এলাকা সাড়ে ৮ শতাংশের কম:

বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর ঢাকা। মানুষের বাড়তি চাপ, মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন ও অবকাঠামোর চাপ স্বাভাবিকভাবে গরমের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। এই বাড়তি চাপ সামলাতে পর্যাপ্ত গাছপালা নেই। গত বছরের মার্চে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল-পরিকল্পনা বিভাগের ‘ঢাকা নগরীর সবুজ এলাকা এবং এর রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শিরোনামে এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকা মহানগরে ২০ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন, সেখানে আছে সাড়ে ৮ শতাংশের কম।

এক দশকে সবুজের আচ্ছাদন কমেছে শূন্য দশমিক ১২ বর্গকিলোমিটার:

গত এক দশকে ঢাকা শহরে সবুজের পরিমাণ যে ব্যাপকভাবে কমেছে, তা উঠে এসেছে নগর-পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায়। ‘ঢাকা শহরের বায়ু, পরিবেশ ও বাসযোগ্যতা’ শিরোনামের সেই গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় ২০০৯ সালে সবুজের আচ্ছাদন ছিল ১২ দশমিক ৪৫ বর্গকিলোমিটার। ২০১৯ সালে ঢাকা শহরে সবুজের আচ্ছাদন কমে ১২ দশমিক ৩৩ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়ায়।

১০ বছরে জলাশয় কমেছে ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ:

সবুজের মতো খারাপ অবস্থা জলাশয়েরও। বিআইপির ‘ঢাকা শহরের বায়ু, পরিবেশ ও বাসযোগ্যতা’ গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় ২০০৯ সালে জলাভূমি ছিল ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর ২০১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশে।

২ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ ডিএনসিসির:

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানান, ঢাকা শহরকে তাপ থেকে রক্ষায় কাজ করছেন তারা। ঢাকা উত্তরে খালের পাড়, ফুটপাত ও সড়ক বিভাজকে ২ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৫০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, একটি অঞ্চলের ৪০ ভাগ বনভূমি ও জলাশয় থাকা প্রয়োজন। ঢাকা মহানগরীতে এই পরিমাণ বনভূমির যৎসামান্যই আছে। অন্যদিকে কংক্রিট তাপ ধরে রাখে এবং গরমের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। ঢাকা শহরে একদিকে কংক্রিট বাড়ছে, অন্যদিকে গাছপালা ও জলাভূমি কমছে। এতে মানুষের গরমের কষ্ট বাড়ছে।

ছাদবাগান ও গাছ লাগানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের:

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঢাকাবাসীকে অসহ্য গরম থেকে রক্ষায় ছাদবাগান করতে হবে। এছাড়া জায়গা থাকলেই পর্যাপ্ত গাছ লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে গাছ লাগানো ও জলাশয় উদ্ধারের জন্য সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *