ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩ ২:২১ অপরাহ্ণ
গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা থেকে ট্রেনে করে স্বজনের সঙ্গে ঢাকায় ফিরছিলেন নাদিরা আক্তার পপি (৩৫)। ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু অঙ্গার হয়ে। হরতাল সমর্থকদের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা গেলেন তিন বছরের ছেলে ইয়াসিনকে বুকে জড়িয়ে। অগ্নিসংযোগের এ ঘটনায় পুড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় আরও দুজনের।
নেত্রকোনা থেকে সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ছেড়ে আসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে ট্রেনটি। আতংকিত যাত্রীরা ভেতরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। তবে ট্রেনের চালক বুঝতেই পারেননি আগুন লেগেছে।
চালক বুঝতে বুঝতে ট্রেনটি চলে আসে তেজগাঁও এলাকায়। ট্রেন থামার পর যাত্রীরা হুড়াহুড়ি করে ভেতর থেকে নামতে শুরু করেন। পপি অন্য স্বজনদের সঙ্গে ছিলেন ‘জ’ কোচের যাত্রী। বড় ছেলে মাহিন (৯) ও ভাই হাবিব ট্রেন থেকে নামতে পেরেছেন। পরে তারা লক্ষ্য করেন পপি ও ইয়াসিন নেই। তবে ততক্ষণে ট্রেনের ওই কোচটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। ফলে কিছুই করার ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিস পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় চারজনের মরদেহ। তাদের মধ্যে দুজন পপি ও তার শিশু সন্তান ইয়াসিন।
পপির দেবর প্রকৌশলী মিনহাজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার ভাবির কোলে ছিল ইয়াসিন। ট্রেন থেকে সবাই নামার জন্য হুড়াহুড়ি করেন। কিন্তু বাচ্চা নিয়ে নামতে পারেননি পপি। আগুন নেভানোর পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তখনও তার কোলে ছিল সন্তানের মৃতদেহ। একসঙ্গে পুড়ে দুজনের মৃত্যু হয়। দেখে বোঝা গেছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সন্তানকে বুকে আগলে বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু অনেক লোকের হুড়াহুড়ির মধ্যে পারেননি। সন্তানকে বুকে নিয়েই জীবন্ত পুড়ে মারা গেলেন।
পপির স্বামী মিজানুর রহমান কারওয়ান বাজারে হার্ডওয়্যার সামগ্রীর ব্যবসা করেন। তিনি তেজতুরী বাজার এলাকায় থাকেন। তার সঙ্গেই থাকতেন পপি ও তাদের দুই সন্তান।
এদিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের পুড়ে যাওয়া তিনটি বগি উদ্ধার করে নেয়া হয়েছে কমলাপুরের ওয়াশপিটে। প্রতিটি বগিই পুড়ে ভস্ম। লোহার ফ্রেম ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সপ্তাহ খানেক আগেই এই একই ট্রেন গাজীপুরে নাশকতার শিকার হয়।