জাহিদের দূর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির শাস্তির দাবি

দেশজুড়ে

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩ ৮:৫৩ অপরাহ্ণ

জাবি প্রতিনিধি,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসানের দূর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তির শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আজ রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এই মানববন্ধন করেন তারা। এতে বিভাগটির প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এসময়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৫১ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাওয়াদ বিন মিজান।

তিনি বলেন, ‘আহত জাহিদ আমার বন্ধু, আমার রুমমেট। সে আজ আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে। আমরা নতুন ক্যাম্পাসে এসেছি, এর মধ্যে বেপরোয়া দূর্ঘটনায় আমাদের বন্ধু আহত হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। আর কেউ যাতে আহত না হয়, আর কোনো দূর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার নিশ্চয়তা চাই।’

বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও দৈনিক সমকাল পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু নঈম তরুণ বলেন, ‘এর আগেও আমাদের বিভাগের ৪৭ ব্যাচের ছাত্রী পুজা মজুমদার রিক্সা দূর্ঘটনায় আহত হয়। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এক বছর এক মাসের মাথায় আবারও আমাদেরকে নামতে হয়েছে রাস্তায়। নবীন শিক্ষার্থী মাত্র দুই দিন হলো ক্যাম্পাসে আসলো। আমরা এর তিব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অনতিবিলম্বে ঘাতকের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

এসময়, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা সংহতি জানিয়ে বলেন, ‘আমরা শুধু একজন শিক্ষার্থীর জন্য আজ এখানে দাঁড়িয়েছি এমনটা নয়। ধারাবাহিক ভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। আমরা সকল ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আর এর কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম উদাসীনতা। তাদেরকে দায় নিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা চাই ক্যাম্পাস নিরাপদ হোক। আমরা সুষ্ঠু ভাবে আমাদের ক্যাম্পাসে হাঁটতে চাই।’

মানববন্ধনে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অটো রিক্সা এবং মোটর সাইকেলের বেপরোয়া চলার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত সমস্যার মধ্যে পড়ছি। দাবি জানাই আমাদের বর্তমান রাস্তা প্রশস্ত করার এবং ফুটপাথ নির্মাণ করার।’

সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক রাকিব আহমেদ বলেন, ‘বেপরোয়া মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় আমাদের শিক্ষার্থী গুরুতর আহত। হাসপাতাল জানিয়েছে পাঁচ থেকে সাত দিন না গেলে তার আসল অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না। কয়দিন পর পরই এরকম দূর্ঘটনা ঘটছে। জাহিদের দূর্ঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার, অধ্যাপক মনিরুল হাসান খান, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আওলাদ হোসেন, সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সুমাইয়া শিফাত, সালমা আহমেদ ও প্রভাষক সালমা সাবিহা প্রমুখ।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শরিফুল ইসলাম সীমান্ত, মাইদুল ইসলাম, আবু নঈম তরুণ, নুর হাসান নাঈম, মাহবুবা আকবর, হাসিব জামান, ছাত্র ফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায়, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ প্রমুখ।

পরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দায়ী শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরল আলমের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো-

লাইসেন্স বিহীন মোটর সাইকেল নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধনকৃত রিকশার বাইরে ক্যাম্পাসে কোন ধরণের ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না দেওয়া, মোটর সাইকেলসহ যে কোন মোটর গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় গতিরোধক স্থাপন করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের সরু রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা, পার্শ্ব রাস্তা নির্মাণ, পুরো ক্যাম্পাসে সড়কবাতি নিশ্চিত করা।

এসময় দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হল সংলগ্ন সড়কে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের (৫১ ব্যাচ) জাহিদ হাসান নামে এক শিক্ষার্থী মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। বাইকের চালক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ফেরদৌস মাহমুদ নিওন (৪৫ ব্যাচ)। তিনি আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র।

আহত জাহিদ হাসানকে বর্তমানে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *