কেন বরিস জনসনকে পদত্যাগের চাপ?

আন্তর্জাতিক স্লাইড

জুলাই ৭, ২০২২ ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরিস জনসনের ভবিষ্যৎ এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েক মাস ধরে চলা নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতা মঙ্গলবার (৫ জুলাই) চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। এদিন বরিস জনসনের ওপর অনাস্থা জানিয়ে দেশটির অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ পদত্যাগ করেছেন।

এরপর কয়েক ডজন মন্ত্রী ও পার্লামেন্টারি সহযোগীর সরে দাঁড়ানোর খবর এসেছে। ক্ষমতার শুরু থেকেই বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে বরিস জনসন সরকার। এছাড়া পার্লামেন্টের রক্ষণশীল দলের এক সদস্যের যৌন অপরাধের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নেয়া পদক্ষেপ নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। যে কারণে বরিস জনসনের ওপর পদত্যাগের চাপ জোরালো হয়েছে।-খবর বিবিসির

বুধবার (৬ জুলাই) জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের একটি দল ডাউনিং স্ট্রিট অফিসে গিয়ে বরিস জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সবকিছু অগ্রাহ্য করে স্বপদে বহাল রয়েছেন তিনি। গত নির্বাচনে ভোটাররা যে তাকে বিপুল ম্যান্ডেট দিয়েছেন, তা মাথায় রেখে পদত্যাগের কোনো ইচ্ছা তার নেই বলে জানিয়েছেন বরিস জনসন।

তাকে সরিয়ে দেয়ার যে জোর দাবি উঠেছে, তা শোরগোল হিসেবে আখ্যায়িত করে উড়িয়ে দিয়েছেন মন্ত্রিসভায় তার মিত্র জ্যাকোভ রিস-মগ। টরি এমপি অ্যান্ড্রু মিচেল বলেন, এ যেন রাসপুতিনের মৃত্যুর মতো ঘটনা। তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে, ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে এবং তার মরদেহ শীতল নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো জীবিত।

গেল বৃহস্পতিবারের ঘটনা। দ্য সান পত্রিকার রাজনৈতিক প্রতিবেদকের চাকরি পাওয়ার চারদিনের মাথায় নোয়া হফম্যান নামের ২৪ বছর বয়সী এক সাংবাদিক রিপোর্ট করেন, কার্লটন প্রাইভেট মেম্বর ক্লাবে এক মাতাল সন্ধ্যা কাটানোর ঘটনায় দলীয় হুইপ থেকে পদত্যাগ করেছেন ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের এক এমপি।

পদত্যাগপত্রে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ক্রিস পিনসার নামের ওই এমপি লিখেছেন, সেদিন তিনি অতিরিক্ত মাত্রায় মদ পান করেন। যা তার নিজের ও অন্যদের বিব্রতের কারণে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। পরে তা আরও গুরুতরও রূপ নিয়েছে। ক্রিস পিনসারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রাইভেট মেম্বর ক্লাবে দুজন ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরেছিলেন তিনি। তাদের অন্তত একজনের কুঁচকিতেও হাত দিয়ে স্পর্শ করেন এই রাজনীতিবিদ।

সংবাদমাধ্যমে দেয়া সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, নিজের বাজে আচরণ শনাক্ত করতে পেরেছেন ক্রিস পিনসার। তবে এমপি হিসেবে তিনি স্বপদে থাকবেন। তার বিরুদ্ধে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না।

এ ঘটনায় কনজারভেটিভ এমপিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অতীতেও পিনসারের বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। কিন্তু দলীয় ডেপুটি চিফ হুইপ পদে তাকে বহাল রাখেন বরিস জনসন।

এরপর প্রধানমন্ত্রী ঘটনা জানতেন কি না কিংবা তিনি কখন জানতে পারেন; তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে বরিস জনসনের মুখপাত্র বলে আসছেন, ডেপুটি চিফ হুইপ নিয়োগ দেয়ার সময় পিনসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী।

কিন্তু সোমবার রাতে সাংবাদিক লোন ওয়েলস এক প্রতিবেদনে বলেন, পিনসারের যৌন অসদাচরণ নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ নিয়ে বরিস জনসন অবগত ছিলেন। ২০১৯-২০২০ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালেই তিনি এ বিষয়ে জানতেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে তাকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

সাংবাদিকদের ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, পিনসার সম্পর্কে বরিস জনসন জানতেন, তবে তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।

এরপর মঙ্গলবার পিনসারকে ডেপুটি চিফ হুইপ পদে নিয়োগ দেয়া ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ইতিমধ্যে যে ক্ষতি তার হয়েছে, তা আর পুষিয়ে নেয়ার মতো অবস্থায় নেই।

বুধবার হাউস অব কমনসে এমপিদের মুখোমুখি হয়ে বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করে টিকে থাকার আভাস দিয়েছেন বরিস জনসন। যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না; রক্ষণশীল এক এমপির প্রশ্নের জবাবে বরিস জনসন বলেন, তিনি সেখানেই ঝুলে থাকবেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রীর চাকরি কঠিন অবস্থার মধ্যে আছে। যখন জনগণের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের অঙ্গীকার আমার আছে, তখন আমি তা করে যাব।

এদিকে পরবর্তী সপ্তাহে দ্বিতীয় বারের মতো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে পারেন বরিস জনসন। আবার আগাম নির্বাচন দেয়ার মাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পারেন বলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার ইউগভ জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ ব্রিটিশ জনগণ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরিস জনসনের সরে দাঁড়ানো উচিত। আর কনজারভেটিভ পার্টির অর্ধেকের বেশি ভোটার মনে করেন, তার আর ক্ষমতায় থাকা উচিত না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *