একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে শেরপুর জেলা যুবলীগের জাতীয় শোক দিবস পালন

দেশজুড়ে

আগস্ট ২০, ২০২২ ৫:৩৬ অপরাহ্ণ

নাফিউ আশেকিন চৌধুরী (নিপু)

জাতীয় শোক দিবস এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে একাধিক কর্মসূচি পালন করেছে শেরপুর জেলা যুবলীগ। ১৫ আগস্ট সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জেলা প্রশাকের কার্যালয় চত্ত্বরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে শোক দিবসের কার্যক্রম শুরু করে জেলা যুবলীগ। দুপুর সাড়ে ১২টায় শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জেলা যুবলীগের সভাপতি আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে এবং যুবনেতা আব্দুল মতিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা, মিলাদ-দোয়া মাহফিল এবং সাধারণের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরপুরের জেলা পরিষদের প্রশাসক হুমায়ুন কবির রুমান এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছানুয়ার হোসেন ছানু। বিকেল ৪টায় কামারের চর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জেলা যুবলীগের আয়োজনে ভিন্ন একটি আলোচনা সভা, মিলাদ-দোয়া মাহফিল এবং সাধারণের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। কামারের চর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ভুট্টো, জেলা যুবলীগ সদস্য গোলাম মোস্তফা সরকার, জেলা যুবলীগ নেতা মাহবুবুল আলম লিমন, শাহ্ মুহাম্মদ ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবাল প্রমুখ।

এসময় জেলা যুবলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমরা জানি জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেমন সৎ মানুষ ছিলেন। যেই পিতা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য জীবন বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করেন নি। ওরা সেই পিতাকেই স্বপরিবারে হত্যা করেছিলো! যিনি বলতেন ‘আগে আমার দেশ, তারপরে পরিবার’। যিনি দেশের মানুষকে সব সময় পরিবার ভেবেছেন, নিজের পরিবারকে ঠিকমতো সময় দেয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। শিশু রাসেল পিতা মুজিবকে কাছে না পেয়ে মাকেই মাঝে মধ্যে বাবা বলে ডাকতো । ঘাতকরা তাকেও ছাড় দেয় নি। একটুও বিবেকে বাঁধে নি তাদের?সাতচল্লিশ বছর পরে এসেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কেউ কেউ সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছেন? তাঁরা আদৌ কি জানেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কি? সত্যিকারে আদর্শের একটি ঘটনা বলি। মাওলানা ভাসানী তখন দলের সভাপতি। বঙ্গবন্ধু ছিলেন তখনকার সাধারণ সম্পাদক। ভাসানী একটি কাজে শেখ মুজিবকে নারায়ণগঞ্জে পাঠান। সাথে দিয়েছিলেন আট আনা পয়সা। মুজিব কাজ শেষ করে বিকেলে এসে মাওলানা ভাসানীর হাতে আট আনা পয়সাই ফেরত দেন। ভাসানী খুবই অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনা কি মুজিব, তুমি নারায়ণগঞ্জ কিভাবে গেলে? বঙ্গবন্ধু উত্তর দিলেন- ‘সাইকেলে করে গিয়েছি, টাকাটা বেঁচে গেছে।’ মুখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা সারাদিন প্রচার করেন এমন ব্যাক্তিও এদেশে আছেন, যারা সাধারণ জনগনকে কাঁদিয়ে নিজে আখের গোছাতে চান, যারা মিনিটে বিক্রি করেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ! আজ আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষা নিয়ে মাদক, জুয়া এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে জোড়ালো অবস্থান নিতে হবে।

সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি যুবনেতা মাহবুবুল আলম লিমন বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার মাধ্যমে ঘাতকরা এদেশের স্বাধীনতার আলো নিভিয়ে দিতে চেয়েছিলো। আমাদের যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি এবং তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি সেরনিয়াবাত সেই ভয়াল কালো রাতেই নিহত হয়েছিলেন। তাদের সুযোগ্য পুত্র শেখ ফজলে শামস্ পরশ আজ যুবলীগের নেতৃত্বে আর জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সুতরাং ঘাতকদের সেই স্বপ্ন কখনো এই বাংলায় বাস্তবায়িত হবে না। বরং জাতির পিতার আদর্শে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই অর্জিত হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি যুবনেতা শাহ্ মুহাম্মদ ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবাল বলেন, জাতির পিতার স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ড ছিলো মূলত এদেশকে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তির হাতে তুলে দেয়ার পরিকল্পনার বাস্তবে রুপ দেয়ার চূড়ান্ত চেষ্টা। তাই ঘতকরা ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলকেও নির্মম ভাবে হত্যা করেছিলো। যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার মূল কারিগড় তারাই ১৯৮৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুককে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে মনোনয়ন দিয়েছিলো। তারাই ২১ শে আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বোমা এবং গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিলো। সেই অপশক্তি আবারো দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। আমাদের তাদের ব্যাপারে আরো সচেতন থাকতে হবে। এদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা খুব বেশি প্রয়োজন। জাতীয় শোক দিবসে আমরা শোককে শক্তিতে পরিনত করে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন, সার্বভৌমত্ব এবং উন্নতির লক্ষ্যে একসাথে কাজ করে যাবো, এই হোক আমাদের শপথ।

আলোচনা সভা শেষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। হাফেজ সানোয়ার হোসেন মিলাদ ও দোয়া পরিচালনা করেন। পরে উপস্থিত প্রায় ২০০০ হাজার অসহায় মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।

এসময় জেলা যুবলীগ নেতা আলহাজ্ব মেহেদী হাসান, সাইমুম সুচন সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *