ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয় স্লাইড

এপ্রিল ১৮, ২০২৩ ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ইরানের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য আরো বেশি উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

সোমবার বিকেলে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি ফোন করলে আলাপের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রকৃত সম্ভাবনার অনেক নিচে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথোপকথনের সময় দুই দেশের চেম্বার সংস্থার মধ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কমিশন (জেবিসি) গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠকের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশ চলতি বছরের কোনো এক সময়ে তেহরানে ষষ্ঠ বৈঠক আহ্বান করার জন্য কাজ করছে জানিয়ে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জেইসি প্ল্যাটফর্ম উভয় পক্ষকে বাণিজ্য বাধা, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যাংক লেনদেনে বিধিনিষেধগুলো কাটিয়ে ওঠার উপায় অন্বেষণ করতে সহায়তা করবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি হচ্ছে উভয় দেশের অভিন্ন ইতিহাস, বিশ্বাস ও সংস্কৃতি।

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উৎপাদন সক্ষমতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার দেশ পরিমাণগত মূল্যে মানসম্মত আমদানির উৎস হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশে বিশেষ করে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের বাজারগুলোতে বিশ্বমানের পোশাক/টেক্সটাইল পণ্য, চীনামাটির বাসন, ওষুধ, হিমায়িত মাছ ও সামুদ্রিক খাবার, চামড়াজাত পণ্য, পাট/কেনাফ সুতা, আইটি, হালকা প্রকৌশল, ছোট ও মাঝারি আকারের জাহাজ, কৃষিপণ্য এবং আরো অনেক কিছু রফতানি করে আসছে।

তিনি ইরানেও সেইসব পণ্য রফতানি করতে বাংলাদেশের আগ্রহ ও সক্ষমতার কথা ব্যক্ত করেন।

টেলিকনফারেন্স চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, বাংলাদেশ ও ইরান ওআইসি এবং ডি-৮ এর সদস্য হওয়ায় অনেক সময় একে অপরকে সমর্থন করেছে।

তিনি বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে, বিশেষ করে জাতিসংঘে ইরানের প্রতি সমর্থন বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মানবাধিকার কাউন্সিলে কানাডার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভোটের কথা উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইসিওএসওসি) প্রস্তাবে বাংলাদেশ নারীর মর্যাদা কমিশন থেকে ইরানকে অপসারণ করার বিষয়ে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। ইসলামে নারী-পুরুষের সমান আচরণের বিষয়ে শেখ হাসিনা ইরানের নারীরা যেন শিক্ষার সমান সুযোগসহ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে এবং তাদের পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ইরানের প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আর্থিক সহায়তা হ্রাস সত্ত্বেও পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি দেওয়া মানবিক আচরণ সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট রাইসিকে অবহিত করেন তিনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন দেওয়ার জন্য ইরানের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইরানকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।

তিনি প্রশংসা ব্যক্ত করেন, এটি সফল কূটনৈতিক কৌশলের একটি ক্লাসিক উদাহরণ, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে এবং তার বাইরেও বৃহত্তর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করবে।

তিনি আরো বলেন, তেহরানে প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন।

১৯৯৭ সালে ৮ম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে এবং ২০১২ সালে আগস্ট তেহরানে ১৬তম ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের জন্য ইরান সফরের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট ও সেদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে একটি রহমতপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ রমজান মাস কামনা করেন এবং নওরোজ উৎসবের শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তিনি তাকে ধন্যবাদও জানান।

দীর্ঘ ২২ মিনিট টেলিফোন কথোপকথন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইরানের প্রেসিডেন্টকে তার সুবিধামত সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি তাকে ও ইরানের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *