‘আলোকের ঝর্ণাধারায় শিক্ষাগুরু নগেন্দ্র চন্দ্র পাল’ স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

‘আলোকের ঝর্ণাধারায় শিক্ষাগুরু নগেন্দ্র চন্দ্র পাল’ স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

শিল্প ও সংস্কৃতি

ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩ ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

এ আর রাজ

খ্যাতিমান নাট্যকার ও অভিনেতা শ্রী নগেন্দ্র চন্দ্র পালকে নিয়ে সাবেক সিনিয়র সচিব আবদুস সামাদ ফারুক সম্পাদিত ‘আলোকের ঝর্ণাধারায় শিক্ষাগুরু নগেন্দ্র চন্দ্র পাল’-শীর্ষক স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি, শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমির ‘আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ’ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বইটি প্রকাশ করা হয় আলোঘর প্রকাশনা থেকে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন গ্রন্থটির সম্পাদক সাবেক সিনিয়র সচিব ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ ফারুক, সাবেক সচিব জি. এম. সালেহ উদ্দিন, অধ্যাপিকা খালেদা রায়হান রুবী, শিক্ষাগুরুর পুত্র ব্যাংকার বিশ্বনাথ পাল ও আলোঘর প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মো. সহিদ উল্লাহ।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জে এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়া নগেন্দ্র চন্দ্র পালের বড় ছেলে বাংলাদেশের লেখক, বুদ্ধিজীবি, অর্থনীতিবিদ এবং আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বীরু পাক্ষ পাল এক অডিও বার্তায় আলোচনায় অংশ নেন। আরও উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক শীর্ষ খবর সম্পাদক ও পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিঃ এর ডিরেক্টর অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান (শাশ্বত মনির)।

‘আলোকের ঝর্ণাধারায় শিক্ষাগুরু শ্রী নগেন্দ্র চন্দ্র পাল’- স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গ্রন্থটির সম্পাদক আবদুস সামাদ ফারুক বলেন, আমি গভীরভাবে আনন্দিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজনে উপস্থিত হতে পেরে এবং সেই সাথে সংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি মহোদয়ের উপস্থিতিতে।

শিক্ষা গুরু নগেন্দ্র চন্দ্র পাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নগেন্দ্র চন্দ্র পাল ১৯৩১ সালে মেট্রিক পাশ করেন। তিনি শিক্ষা অর্জন করে সরকারি চাকরি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে নিয়োজিত ছিলেন। এ সময় তিনি নালিতাবাড়ীর শিক্ষা বিস্তারে নগেন্দ্র চন্দ্র পালের অবদানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

আলোচক হিসেবে শিক্ষাগুরু নগেন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে ব্যাংকার বিশ্বনাথ পাল বলেন, এ অনুষ্ঠান আমার জীবনে অত্যন্ত আনন্দের। এখানে আমি আমার পিতার সান্নিধ্য অনুভব করছি। আমার পিতার মৃত্যুর বিশ বছর পর তার সম্পর্কে একটি স্মারক গ্রন্থ পাবো- এটি আমার পরিবারের জন্য একটি পরম পাওয়া।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগের সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন।

আলোকের ঝর্ণাধারা শিক্ষার আলোকবর্তিকা শ্রী নগেন্দ্র চন্দ্র পাল নালিতাবাড়ী অঞ্চলের দ্বিতীয় গ্র্যাজুয়েট। তার জন্ম ১৯১৩ সালের ৩ মে। পিতা মহিম চন্দ্র পাল ছিলেন একই এলাকার প্রথম এন্ট্রান্স অর্থাৎ শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ পরিবারে নগেন্দ্র চন্দ্র পালের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তিনি ১৯৩১ সালে জিকেপিএম ইনস্টিটিউশন শেরপুর থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন, আনন্দ মোহন কলেজ ময়মনসিংহ থেকে ১৯৩৩ সালে প্রথম বিভাগে এফএ, ১৯৩৫ সালে একই কলেজ থেকে (কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনস্থ) বিএ পাশ এবং ১৯৪৬ সালে বহরমপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মুর্শিদাবাদ পশ্চিমবঙ্গ ভারত থেকে বিএ বিটি সনদ অর্জন করেন। সরকারি বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন ত্যাগ করে পিতার একান্ত ইচ্ছায় শিক্ষাদানকেই জীবনের স্বপ্ন সাধনা হিসেবে বেছে নেন। রাজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকতা শুরু করে তারাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ও রেক্টর হিসেবে তাঁর কর্মকালের ব্যাপ্তি ১৯৪২ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত।

নগেন্দ্র চন্দ্র পাল ছিলেন একজন খ্যাতিমান নাট্যকার ও অভিনেতা। তাঁর রচিত ‘অন্তরের ধ্রুবতারা অনন্তে হোক হারা’ একটি তথ্যবহুল প্রবন্ধ সংকলন। তাঁর রচিত নাটকের মধ্যে হস্তক্ষেপ, কেরানির জীবন, ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ, আগমনী, চা মাহাত্ম্য, কৃষ্ণমায়া, বাঙ্গালী সুলতান, অভিযান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

শ্রী নগেন্দ্র চন্দ্র পাল উদার-চেতনাসমৃদ্ধ একজন মুক্ত মনের অধিকারী মানবতাবাদী আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতা ছিল তাঁর সাধনা, ধ্যান ও জ্ঞান। একটি নিকষ অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদে তিনি শিক্ষার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সূর্যালোক ছড়ান।

‘আলোকের ঝর্ণাধারায় শিক্ষাগুরু নগেন্দ্র চন্দ্র পাল’ স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক আবদুস সামাদ ফারুক একজন বিশিষ্ট কবি ও গদ্যকার। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পদে কর্মরত অবস্থায় নদী রক্ষায় নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে ঢাকার চারপাশের নদীসহ দেশের বিভিন্ন নদীগুলোকে প্রবাহমান রাখার বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে। তার মৌলিক গ্রন্থগুলো হচ্ছে- কাব্যগ্রন্থ: ঘাস ফড়িংয়ের জ্যোৎস্না স্নান, শিশিরে জীবন কল্লোল।

গদ্যগ্রন্থ: জল জোছনায় নাজমুল, আলো হাতে আঁধারের যাত্রী। সম্পাদিত গ্রন্থ: কল্লোলিনীর কলতান: নদী বিষয়ক হাজার বছরের কবিতা সংকলন।

আবদুস সামাদ ফারুক তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন পুরষ্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *