আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ: স্বপ্ন যেন থমকে আছে আলোচনার টেবিলে!

আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ: স্বপ্ন যেন থমকে আছে আলোচনার টেবিলে!

জাতীয় স্লাইড

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩ ২:৪০ অপরাহ্ণ

ঢাকার পাঁচ প্রবেশ মুখে হবে পাঁচটি বাস টার্মিনাল। নগরীতে ঢুকবে না কোনো আন্তঃজেলা বাস; কমবে যানজট। এতে লাঘব হবে নগরবাসীর ভোগান্তি। এমন স্বপ্ন নিয়ে এরই মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করলেও উত্তর সিটি অনেক পিছিয়ে। কারণ হিসেবে টেকসই উন্নয়নের দোহাই তাদের। এ অবস্থায় নতুন করে নেয়া প্রকল্পটি যেন এখনও আটকে আছে আলোচনার টেবিলেই!

এটি ঢাকার প্রবেশমুখে গাবতলী বাস টার্মিনাল। এখান থেকেই ছাড়ে এবং ঢাকায় ঢুকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সব বাস। এতে সবসময় এখানে গাড়ির চাপ থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দূরপাল্লার বাসগুলোর জন্য টার্মিনাল হবে এখন হেমায়েতপুরে। ছবি: সময় সংবাদ (ভিডিও থেকে নেয়া)

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল। এতে ঘিরে প্রতিদিন অসংখ্য বাসের চলাচল। শুধু এখানেই নয়, সকাল কিংবা বিকেল নগরীর বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে মহাখালী ও সায়েদাবাদসহ মহানগরের প্রতিটি বাস টার্মিনালেই থাকে যানবাহনের উপচেপড়া ভিড়।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবেশ করা বাস নগরীতে ঢুকেই সৃষ্টি করে যানজট। থমকে যায় কর্মচাঞ্চল্য।

তাই শহরের ভেতরে আন্তঃজেলা ও শহরতলির বাস চলাচল বন্ধে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় পাঁচটি আন্তঃজেলা টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ পরিকল্পনায় পাঁচটি বাস ডিপোও নির্মাণ করার কথা।

বর্তমানে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী এবং সায়েদাবাদে তিনটি বাস টার্মিনাল আছে। এগুলোকে পুরোপুরি সিটি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়ে দূরপাল্লার বাসের জন্য কেরানীগঞ্জের বাঘাইর, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, তুরাগের ভাটুলিয়া, রূপগঞ্জের ভুলতা ও সাভারের হেমায়েতপুরে নির্মাণ করার কথা পাঁচটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল।

রাজধানীতে যানজট কমাতে এরই মধ্যেই চালু হয়েছে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলসহ নানা সেবা। কিন্তু এগুলোও খুব একটা সুফল বয়ে আনতে পারেনি। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং শহরের ভেতরে চলাচল করা আন্তঃজেলা বাসগুলোকে যানজটের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ট্রাফিক পুলিশ বলছে, নগরীতে ঢোকা আন্তঃজেলা বাসগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবেই দুর্বিষহ যানজট থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করা যাবে বলে করে তারা।

 এদিকে ১১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার পাঁচ প্রবেশ মুখে পাঁচ বাস টার্মিনাল করার সিদ্ধান্ত প্রায় তিনবছর আগের। যদিও আলোর মুখ দেখেনি এখনও। এরই মধ্যে কাঁচপুরে নিজস্ব অর্থায়নে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন একটি বাস টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শুরু করলেও পিছিয়ে আছে উত্তর সিটি। দীর্ঘসূত্রতার প্রশ্নে টেকসই উন্নয়নের দোহাই উত্তরের কর্মকর্তাদের।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, নতুন একটা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার সাথে অনকে বিষয় জড়িত। সব চিন্তা বাদ দিয়ে নামকাওয়াস্তে একটা বাস টার্মিনাল নাম দিয়ে একটা জমি দিয়ে দিলেই তো হলো না! ভালো একটি পরিকল্পনা করেই বড় এ নির্মাণকাজটি করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার অভ্যন্তরে অবস্থিত এসব বাস টার্মিনাল দ্রুত সরিয়ে না নিলে পুরো সুফল মিলবে না কোনো প্রকল্পের। অন্যদিকে নগর পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প আলোর মুখ দেখলেই নগর পরিবহনের সেবাকে ঢালাওভাবে সাজানো হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, এটি একটি সাধুবাদ পাওয়ার মতো প্রকল্প। আরও বহু আগেই এটা হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু আমাদের শহরের মধ্যে যারা বাস চালাচ্ছেন, তারা কতটা উৎসাহ অনুভব করবেন – সেটা একটি বড় বিষয়।

‘কারণ, তারা টার্মিনাল থেকে বাসগুলো বের করবে, আবার দিনশেষে সেখানে রেখে আসবে। এই পথ কিন্তু ভোগান্তিমুক্ত রাখতে হবে। না হলে চালকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। দেখা যাবে, তারা তাদের সুবিধামতো সেই রাস্তার পাশেই আবার বাস রাখা শুরু করবেন। আর তাহলে এ প্রকল্প কোনো কাজে আসবে না,’ যোগ করেন তিনি। 

এ পরিকল্পনার আওতায় আঁটিবাজার, কাঁচপুর উত্তর ও কাঞ্চনসহ মোট পাঁচ জায়গায় পাঁচটি নতুন বাস ডিপো করার কথা। এ ছাড়াও এখনকার গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদের তিনটি বাস টার্মিনালকে বাস ডিপো হিসেবে ব্যবহার করার কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *