তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিজয়ের ভাবনা

জাতীয়

ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ ১১:৫৪ অপরাহ্ণ

মাহবুব ইসলাম

আগামী পরশু মহান বিজয় দিবস। যে বিজয়ের জন্য সাত কোটি বাঙালিকে বেছে নিতে হয়েছিল সংগ্রামের পথ, যে লাল সবুজ পতাকা অর্জিত হয়েছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, যে মানচিত্রের জন্য সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে দুই লাখ মা-বোনকে, সেই বিজয়ের মর্যাদা রক্ষা করার দায়িত্ব তরুণদের। একটি স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে হবে তরুণদেরই। বিজয়ের এত বছর পর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে কী ভাবছে তারা। কত টুকু স্বাধীন ভাবে আছে তারা । দেশকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন কী? তরুণদের বিজয় ভাবনার অনুভূতির  তুলে ধরেছেন তিতুমীর কলেজের কয়েক জন শিক্ষার্থী ।

বাংলা বিভাগ এর শিক্ষার্থী রায়হান বলেন :
বিজয় দিবস আমাদের বাঙালি জাতীর কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যান্য জাতীয় দিবস সমূহের মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ন  কারন এ দিনটিতে পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। এ দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে তবে এ দিনটি এমনি এমনি আসেনি এর সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালির রক্তজরা অনেক কালো অধ্যায়।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন এবং শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ যা প্রায় দীর্ঘ নয় মাস চলমান থাকে। সর্বশেষে পাকিস্তানী সৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের সকল মুক্তিকামী মানুষ ও ভারতীয় যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে  নিজেদের বাচাঁতে আত্মসমর্পন করে এভাবেই অর্জিত হয় আমাদের গৌরবময় বিজয়। তবে এই নয় মাসের স্মৃতির পাতা খুললে আমরা দেখতে পাই ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্মৃতি, স্বজন হারানোর আর্তনাদ,যুদ্ধাহত ও ঘরহারা মানুষের দীর্ঘশাস,যত প্রকার পাশবিক নির্যাতন সবই এখানে ফুটে ওঠে।প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিনটি পালনের মধ্য দিয়েই আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয় আমাদের সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা,বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কথা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা।আমার বাবা ও  একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছোটবেলা থেকে এতবার শুনছি তার মুখে মহান মুক্তিযুদ্ধের হৃদয় বিদারক সব কাহিনী তা হৃদয়ে গেঁথে গেছে। সকল মুক্তিকামী মানুষের কথা স্মরনে আমারা গর্বিত ও অনুপ্রানিত হই। বিজয় দিবসের এ দিনটি শুধু বিজয়ের দিন নয় এটি সমগ্র বাঙালির চেতনার জাগরনের দিন।তাই ১৬ ডিসেম্বর এ দিনে প্রতিটি বাঙালি নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় দেশকে গড়তে বিশ্বসভায় সামনের সারিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।

ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী অনামিকা আক্তার বলেন:১৬ ডিসেম্বর, বাঙ্গালি জাতির জন্য  একটি বিশেষ দিন । দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়াদী উদ্যান পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায়৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণ করে।  এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সাবভৌম রাষ্টের অভ্যূদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পালিত হয় ।বাঙ্গালী জাতির প্রকৃত নায়কের বদল একজন খলনায়ককে সেখানে স্থাপনের চক্রান্ত করা হয়েছিল।  দীর্ঘ সংগ্রামের পর জাতি তার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু গণতন্ত্র এখনও দেশটিতে প্রতিষ্ঠা পায়নি। দুনীতি ও সন্ত্রাসের অবাধ রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগোতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি দরকার।  এই প্রস্ততি হচ্ছে দেশকে দুনীতি মুক্ত করা, ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের যে প্রবণতা,  তা দূর করা। রাষ্ট্রের আদর্শের ভিত্তিটা যদি ভেঙে যায়, তাহলেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কীভাবে রক্ষা করা যাবে।  রক্তের নদীর উজান বেয়ে আমরা স্বাধীনতার মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা পেয়েছি । আমাদের বিজয় ছিল স্বাধীনতার বিজয়, যা বাঙালির ইতিহাস  সবোপরি বিশ্ব ইতিহাস নজির বিহীন। হাজারও দেশ দ্রোহী জঙ্গালে উওপ্ত ছিল এ মাটি। আমি বিজয়ের পতাকা ধরে, সারাটি পথ পাড়ি দিতে চাই।মন খুলে সবাইকে মহান বিজয় দিবসের অগ্রীম  শুভেচ্ছা জানাই।

মেনেজমেন্ট বিভাগের এর শিক্ষার্থী আসমাউল হুসনা বলেন : বিজয় দিবস মানেই আনন্দ। আমার কাছে এটি বাঙালি জাতির গৌরবময় একটি দিন। ১৯৭১ সালের পাক হানাদার বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন আমাকে অনুপ্রেণিত করে জীবনে প্রতিটি বাঁকে। যে কোনো কঠিন কাজে সাহস যোগায়। এই দিনটি বার বার মনে করিয়ে দেয় আমরা লড়াকু জাতি। হার মানতে রাজি নই। দিনটি যেমন পাওয়া ও আনন্দের সেই সাথে বেদনারও। বিজয় অর্জনের জন্য বাঙালি সৈনিকদের ত্যাগ বারংবার মনে পড়ে।

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম সিকদার বলেন: বিজয় দিসব বাঙালী জাতির জন্য গৌরবময় একটি দিন।৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময় বাঙালীর বহু কাঙ্ক্ষিত বিজয় উদিলিত হয়েছে।২০০ শ বছরের ব্রিটিশ শাসন এবং ২৩ বছরের পাকিস্তানি হানাদার বাহীনির নির্মম নির্যাতনের শাসনের অবসান ঘটে এবং বাঙালী পেয়ছে তাদের স্বাধীনতা।

পক্ষান্তরে একটা কথা বলতেই হয় বাঙালী ৭১ এর ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করলেও প্রকৃতপক্ষে বাঙালী এখন প্রর্যন্ত বিজয় লাব করেনি। ভোট, ভাত সহ বাকস্বাধীনতার বিজয় এখনো বাঙালর পায় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *